ফেনীতে গায়ে আগুন দেওয়া সেই কলেজছাত্রী মারা গেছেন

প্রেমিক এড়িয়ে চলায় অভিমান করে নিজের শরীরে আগুন দেওয়া কলেজছাত্রী মাশকুরা আক্তার মুমু (১৯) মারা গেছেন। শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) দুপুরের দিকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
মাশকুরা আক্তার মুমুর বাবা আবদুল মালেক ঢাকা পোস্টকে তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুরে ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের লক্ষ্মীয়ারা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে নিজের শরীরে আগুন দেয় কলেজছাত্রী মাশকুরা আক্তার মুমু।
মাশকুরা আক্তার মুমু ফেনী ন্যাশনাল কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। তিনি পরিবারের সঙ্গে শহরের পাঠান বাড়ি সড়কে থাকতেন। তাদের গ্রামের বাড়ি জামালপুর জেলার সদর উপজেলার রামনগর এলাকায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, লক্ষ্মিয়ারা ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার সামনে এক ফল ব্যবসায়ীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল মুমুর। তাদের মধ্যে কিছুদিন ধরে টানাপোড়ন চলছিল। সোমবার সকালে ওই এলাকায় যান মুমু। কিছুক্ষণ পর মাদরাসার পাশে নিজের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেন তিনি। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান।
সেদিন ফেনী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দগ্ধ মাশকুরা আক্তার মুমু সাংবাদিকদের কাছে নিজের শরীরে নিজে আগুন দিয়েছেন বলে জানান।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী লক্ষ্মিয়ারা উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক মহিমা রাণী পাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, সোমবার বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে মিটিং চলাকালে একটি ফোন কল আসায় আমি বাইরে বের হই। ফোনে কথা বলা অবস্থায় স্কুল গেটের ভেতর ওই মেয়েকে (মুমু) ঘোরাঘুরি করতে দেখি। একপর্যায়ে গেটের ভেতরে বসা অবস্থায় তার শরীরের সামনের অংশে হঠাৎ আগুন জ্বলতে দেখি। তখন তিনি চিৎকার করে দৌড়ে ৬০-৭০ গজ সামনে স্কুলের টিউবওয়েলের কাছে এসে বসে পড়ে। পরে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বাজারের লোকজন ছুটে এসে তার গায়ে পানি ঢালে। এ সময় আমার গায়ের চাদর দিয়ে তার দগ্ধ শরীর ঢেকে দেই।
ফেনীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) থোয়াই অংপ্রু মারমা ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ বা মামলা দায়ের করা হয়নি।
এ ব্যাপারে রাজধানীর শাহবাগ থানা পুলিশের উপপরিদর্শক আরিফ নেওয়াজ ঢাকা পোস্টকে বলেন, মাশকুরা আক্তার মুমু নামে অগ্নিদগ্ধ এক শিক্ষার্থী চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে মারা যাওয়ার পর নিহতের পরিবার থানায় এসে ময়নাতদন্ত ছাড়া মরদেহ নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেন। পরে এ বিষয়ে ফেনী মডেল থানা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ময়নাতদন্তের পরামর্শ দেওয়া হয়। এরই প্রেক্ষিতে রোববার ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।
তারেক চৌধুরী/এএএ