শরীয়তপুরে প্রশাসনকে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী

শরীয়তপুর-২ (নড়িয়া-সখিপুর) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী খালেদ শওকত আলী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ প্রশাসনকে তাদের নিরপেক্ষতা প্রমাণের জন্য ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন। হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামিরা নড়িয়া-সখিপুরের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে নৌকা প্রতীকের পক্ষে প্রচারণাসহ ঈগল প্রতীকের সমর্থকদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ও তাদেরকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে এ আল্টিমেটাম দেন তিনি।
সোমবার (১ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নড়িয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য ও শরীয়তপুর-২ আসনের ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী খালেদ শওকত আলী। সংবাদ সম্মেলনে তিনি আওয়ামী লীগ কর্তৃক প্রদত্ত নির্বাচনী ইশতেহারে পূর্ণ সমর্থন জানান।
সংবাদ সম্মেলনে খালেদ শওকত আলী বলেন, নড়িয়া-সখিপুরের বিভিন্ন এলাকায় টার্গেট করে ঈগল প্রতীকের সমর্থকদের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হচ্ছে। থানায় বসা থাকা সত্ত্বেও জেলা পরিষদের সদস্য আলী আজগর চুন্নুকে আসামি করা হয়েছে। আমাদের দুইজন কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অথচ অনেক আগে দায়ের হওয়া হত্যাসহ বর্তমানেও দায়ের হওয়া একাধিক মামলার আসামিরা নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমি বলতে চাই, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে যদি প্রশাসন এই সকল সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি না করে তাহলে আমি আমার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবো। প্রশাসন জানে যে বিভিন্ন ক্যাম্পে গিয়ে এই সকল চাঁদাবাজ, চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় ও নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর (এ কে এম এনামুল হক শামীম) ছত্রছায়ায় এ সকল সন্ত্রাসীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে এ সকল সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করে প্রশাসনকে প্রমাণ করতে হবে যে তারা নিরপেক্ষ।
প্রশাসন ভালো কাজ করছে উল্লেখ করে তাদেরকে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, প্রশাসনের ওপর শতভাগ বিশ্বাস রাখতে চাই। তারপরেও প্রশাসনের কিছু ক্ষেত্রে প্রমাণ করার জায়গা আছে। আমি আশা করব, আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহীনিসহ প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকার প্রমাণসমূহ পাব। অন্যথায় ৪৮ ঘন্টা পর আমার সিদ্ধান্ত আমি জানিয়ে দেব।
প্রয়াত ডেপুটি স্পিকার কর্নেল শওকত আলীর পরিবারের অধপতন হয়েছে বলে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী একেএম এনামুল হক শামীমের করা অভিযোগের জবাব দিয়ে খালেদ শওকত আলী বলেন, পরিবার বলতে উনি (এনামুল হক শামীম) কী বোঝান? ওনার ভাই (ডা. আশরাফুল হক সিয়াম), একজন সরকারি কর্মকর্তা, সরকারের চাকরি করে, সরকারের বেতন গ্রহণ করে। তিনি যে রাস্তায় রাস্তায় ভোট প্রার্থনা করে সরকারি চাকরি বিধি অমান্য করছেন, তাতে পরিবারের কিছু হয় না? বিভিন্ন জায়গায় জায়গায় ফোন করে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন, তাতে পরিবারের কিছু হয় না? তখন পরিবার কোথায় যায়? জাতীয় বীর কর্নেল শওকত আলীর পরিবার নিয়ে মন্তব্য করে যে ধৃষ্টতা উনি দেখিয়েছেন, এর জবাব নড়িয়া-সখিপুরের মানুষ ৭ তারিখে ব্যালটের মাধ্যমে দেবে।
পানিসম্পদ উপমন্ত্রী ও নৌকা প্রতীকের প্রার্থী একেএম এনামুল হক শামীম বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম কথা বলেন দাবি করে খালেদ শওকত আলী বলেন, বিএনপির জেলা সভাপতি শফিকুর রহমান কিরনের কাছ থেকে নাকি টাকা নিয়ে আমি নির্বাচন করছি। আমি বলতে চাই যিনি এই কথা বলছেন তার আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এই কথার প্রমাণ দিতে হবে। অন্যথায় আমি মানহানির মামলাসহ সকল প্রকার আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব। মানুষকে অপমান করে কেউ বড় হতে পারে না। ছোট মনের মানুষরাই এই ধরনের কথা বলে। বড় মনের মানুষ হতে হলে বড় কাজ করতে হয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে কারা কার থেকে টাকা নিয়েছিল, তা আমরা জানি। কারা ধানের শীষের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছিল তাও আমরা জানি। বেসামাল কথাবার্তা বলা বন্ধ করুন, নয়তো আমরা মুখোশ উন্মোচন করে দেব।
আওয়ামী লীগ কর্তৃক ঘোষিত নির্বাচনী ইশতেহার যুবলীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ধারণ করে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নে সর্বশক্তি নিয়োগ করবেন উল্লেখ করেন খালেদ শওকত আলী বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকা নড়িয়া-সখিপুরের জন্য আমার কিছু পরিকল্পনাও রয়েছে। গত ৫ বছরে সারাদেশে উন্নয়নের জোয়ার বইলেও নড়িয়া-সখিপুরে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অবমনন ঘটেছে। আমরা বর্তমানে একটি দমবন্ধ পরিবেশে বসবাস করছি। একই দল করা সত্ত্বেও মত পার্থক্য থাকায় বিনা কারণে অনেককে জেলে বন্দিসহ বাড়ির বাইরে, এলাকার বাইরে এমনকি দেশের বাইরেও থাকতে হয়েছে। আমরা বলি, এই দম বন্ধ পরিবেশ থাকবে না। একই দলের ভেতর ভিন্ন মতকে সম্মান জানানো হবে। এই রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অবমননের অবসান চাই। জনপ্রতিনিধিদের দুয়ার দলমত নির্বিশেষে সকল ধর্মের , সকল বর্ণের মানুষের জন্য খোলা থাকবে। এছাড়াও নড়িয়া-সখিপুরকে পরিকল্পিত উন্নয়নের আওতায় নিয়ে আসা, পদ্মা সেতু থেকে নড়িয়া-সখিপুরের রাস্তা নির্মাণসহ সখিপুরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, সখিপুরকে উপজেলা ও পৌরসভায় উন্নীতকরণের অঙ্গীকার করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে প্রয়াত ডেপুটি স্পিকার কর্নেল শওকত আলীর স্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা মাজেদা শওকত আলী, নড়িয়া উপজেলার সাবেক সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান বিএম মনির হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক কামরুল ইসলাম তোতা রাড়ি ও আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সাইফ রুদাদ/আরএআর