‘৩০ সিট পাওয়ার পর থেকে বিএনপি নির্বাচনে আসতে ভয় পায়’

২০০৮ সালের নির্বাচনে ৩০ সিট পেয়ে হেরে যাওয়ার পর থেকে বিএনপি নির্বাচনে আসতে ভয় পায় বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ শহরের ইসদাইর এলাকায় শামসুজ্জোহা ক্রীড়া কমপ্লেক্স মাঠে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী জনসভায় তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৫ বছর আমরা সরকারে আছি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আমরা জয়লাভ করেছিলাম। সেবার বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় ঐক্যজোট আর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আমাদের মহাজোট ছিল। সেই নির্বাচনে শুধুমাত্র নৌকা মার্কায় আওয়ামী লীগ পেয়েছিল ২৩৩টি সিট। আর বিএনপি পেয়েছিল মাত্র ৩০ সিট। বাকিগুলো আমাদের যারা জোটে ছিল তারা পেয়েছিল। তারপর থেকে বিএনপি আর নির্বাচনে আসতে চায় না, ভয় পায়। যার জন্য তারা সন্ত্রাস করে।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচন বন্ধ করার জন্য ২০১৩ থেকে তারা অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করে। তিন হাজারের ওপর তারা মানুষ পুড়িয়েছে। তার মধ্যে ৫০০ মানুষ মারা গেছে। তিন হাজার আটশ’র বেশি গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। জ্বালাও-পোড়াও, মানুষ খুন এটাই হচ্ছে বিএনপির একমাত্র গুণ। এটাই তারা পারে। আর কিছু পারে না। মানুষকে কিছু দিতে পারে না।
আগামী ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশবাসীকে ভোট দিয়ে দেশে যে গণতান্ত্রিক ধারা বিদ্যমান রয়েছে তা প্রমাণের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভোট আপনার গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার। ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিন এবং প্রমাণ করুন যে দেশে গণতন্ত্র বিদ্যমান রয়েছে।
নির্বাচনকে সামনে রেখে সারা বাংলাদেশের মানুষকে শান্তিপূর্ণ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমি আপনাদের অনুরোধ করব সবাই শান্তিপূর্ণভাবে থাকবেন, শুধু আপনারা নন, সারা বাংলাদেশের সকল জনগণের কাছে আমি অনুরোধ করব সকলেই শান্তিপূর্ণভাবে থাকবেন। প্রত্যেকে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে আপনাদের ভোটের অধিকার যেটা সাংবিধানিক অধিকার, সে অধিকার প্রয়োগ করবেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের ভোটের এই সাংবিধানিক অধিকারকে মিলিটারি ডিক্টেটররা একের পর এক কেড়ে নিয়ে ক্যান্টনমেন্টে বন্দি করেছিল। আওয়ামী লীগ জনগণকে সঙ্গে নিয়ে (আন্দোলন-সংগ্রাম করে) জনগণের সেই অধিকার জনগণের হাতে আবার ফিরিয়ে দিয়েছে। হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের রাজনীতি, প্রতি রাতে কারফিউ অবস্থা, সেগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। আজকে বাংলাদেশের মানুষ তার ভোটের অধিকার সম্পর্কে সচেতন। কাজেই, ভোটের অধিকার আপনার মৌলিক অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার। সেই অধিকার আমরা সংরক্ষিত করেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আজকে ২০০৯ থেকে এই ২০২৩ দেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে এবং আজকে আমরা ২০২৪ এ পা দিয়েছি। গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই বাংলাদেশের এত উন্নতি হয়েছে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, নৌকা মার্কা আমাদের মার্কা, এই এ নৌকা দিয়ে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ইশারায় নূহ নবী একদা মহাপ্লাবন থেকে মানব জাতিকে রক্ষা করেছিলেন। এই নৌকায় ভোট দিয়েই এদেশের মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে। এই নৌকা আজকে উন্নয়ন দিয়েছে। এই নৌকায় আগামীতে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলবে। তাই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাদের প্রার্থীদের আপনারা জয় যুক্ত করবেন। আপনাদের কাছে সেই আহ্বান জানাই।
তিনি এ সময় জনগণের কাছে ওয়াদা চাইলে জনগণ সমস্বরে দুই হাত তুলে তাকে সমর্থন জানান।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এই নির্বাচনকে নিয়ে অনেক চক্রান্ত ষড়যন্ত্র হয়েছিল। নির্বাচন যাতে না হয় সেই চক্রান্ত এখনও চলছে। যেহেতু বিএনপি নিজেরা নির্বাচন করে জিততে পারবে না তাই দেশের মানুষকে বঞ্চিত করা ভোটের অধিকার থেকে। সামরিক শাসকরা যখন একে একে ক্ষমতায় এসেছে তারা কিন্তু জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। এখন বিএনপির সেই একই কাজ করতে চায়।
শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচনে তারা আসেনি সেটা তাদের ইচ্ছা। কিন্তু মানুষের ভোটের অধিকারে বাধা দেওয়া কখনোই এদেশের জনগণ মেনে নেবে না। এ অধিকার মানুষের অধিকার, কাজেই ৭ জানুয়ারি নির্বাচন, ইনশাআল্লাহ সেই নির্বাচন হবে। আজকে এই নারায়ণগঞ্জে এটাই আমাদের নির্বাচনকালীন শেষ সভা। এ সময় জাতীয় সম্পদ যেন কেউ নষ্ট করতে না পারে এজন্য বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
এর আগে বিকেল সোয়া ৩টার দিকে শহরের একেএম শামসুজ্জোহা ক্রীড়া কমপ্লেক্স মাঠে জনসভাস্থলে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নেতাকর্মীরা তাকে স্লোগানে স্লোগানে বরণ করে নেন। প্রধানমন্ত্রীও হাত নেড়ে উপস্থিত জনতাকে শুভেচ্ছা জানান।
বিকেল পৌনে ৪টায় বক্তব্য শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী। বক্তব্য চলাকালে আসরের আজান শুনে বিরতি দেন তিনি। আজান শেষ হলে ফের বক্তব্য শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাইয়ের সভাপতিত্বে জনসভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী একেএম শামীম ওসমান, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী একেএম সেলিম ওসমান, নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবু, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন ।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জ শহরের ওসমানী পৌর স্টেডিয়ামে নির্বাচনী জনসভায় এসেছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
আরএআর