মমতাজ-জাহিদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ
মানিকগঞ্জ-২ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মমতাজ বেগম ও দলের মনোনয়ন বঞ্চিত ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলু সংবাদ সম্মেলন করে একে অপরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করেছেন।
বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) দুপুরে সিংগাইর উপজেলার পূর্ব ভাকুম গ্রামে নিজ বাসভবনে নৌকার প্রার্থী এবং বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে উপজেলার বাইমাইল এলাকায় ব্যক্তিগত কার্যালয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী এই সংবাদ সম্মেলন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে নৌকার প্রার্থী মমতাজ বেগম বলেন, নির্বাচনী এলাকার ভোটারদের কাছে টানতে বা কিনতে ট্রাক প্রতীকের প্রার্থী দেওয়ান জাহিদ আহমেদ ‘কালো টাকা’ ছড়াচ্ছেন। ভোটারদের প্রভাবিত করে এবং দলের শীর্ষ নেতার নাম ভাঙিয়ে দলের কথিত কিছু নেতারা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করছেন। এর যথেষ্ট প্রমাণও আমার কাছে রয়েছে। এ ছাড়া জাহিদ আহেমেদের কর্মীরা সাবান দিয়েও ভোটারদের প্রভাবিত করছেন, যা আচরণবিধি লঙ্ঘনের শামিল। এর আগেও আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় তিনি (জাহিদ আহমেদ) দুইবার নির্বাচনী অনুসন্ধানী কমিটির কাছে মুচলেকা দিয়েছেন। এরপরও আচরণবিধি লঙ্ঘন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও তার কর্মীরা সরে আসেননি।
স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলের দাবি জানিয়ে মমতাজ বলেন, আগে জাহিদ আহমেদ ও তার কর্মী-সমর্থকরা টাকা-পয়সা দিয়ে এবং এখন মালামাল দিয়ে জনগণ ভোট কিনতে চাইছেন। এভাবে ভোটারদের প্রভাবিত করা হচ্ছে। এ বিষয়ে আমি নির্বাচন কমিশনের কাছে লিখিত আবেদন করব।
তিনি আরও বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মহীউদ্দীনসহ জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ের কতিপয় জ্যেষ্ঠ নেতা দলীয় প্রার্থীর নৌকা মার্কার প্রচারণ-প্রচারণায় অংশ না নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন। সিংগাইরের জামিত্তা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাদল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মহীউদ্দিনের বরাত দিয়ে বলেছেন, ‘তিনি (জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি) আমাকে ঢাকার একটি হোটেলে ডেকে বলেছেন, তোমরা নৌকার পক্ষে কাজ না করে স্বতন্ত্র প্রার্থী টুলুর ট্রাক মার্কার পক্ষে কাজ করার জন্য নামবে।’ জেলার জ্যেষ্ঠ পদে থেকে উনার এমন নির্দেশনা দেওয়া মোটেও সমীচীন নয়।
এ সময় সিংগাইর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুর রহমান, হরিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলজার হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক আবিদ হাসান, সিংগাইর পৌরসভার মেয়র আবু নঈম মো. বাশার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পরে বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ান জাহিদ আহমেদও নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ অশান্ত করার চেষ্টা করছেন নৌকার প্রার্থী মমতাজ বেগম ও তার কর্মীরা। সাধারণ ভোটারদের হুমকি-ধমকি দিয়ে ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে। অথচ এই নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন। জনগণ যাকে ভোট দেবে তিনিই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবেন, এখানে হুমকি-ধমকি কোনো কাজে আসবে না। তবে নৌকার প্রার্থী ও তার কর্মীরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন।
তিনি বলেন, আচরণবিধি মেনে চলতে কর্মীদের সব সময় অনুরোধ করে আসছি। নৌকার প্রার্থী ভোটারের কাছে না গিয়ে শুধু অভিযোগ করছেন। এবার নির্বাচনে দলের যে কেউই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই তা বলেছেন। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে তার কর্মীদের ওপর হামলা ও ভোটারদের কেন্দ্রে না যেতে হুমকি দিচ্ছেন নৌকার কর্মীরা।
নৌকার প্রার্থী দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে ত্রুটিপূর্ণ মন্তব্য করায় অধিকাংশ নেতাকর্মীরা তাঁকে (মমতাজ) প্রত্যাখান করে নৌকা সঙ্গে নেই। ভোটারদের কাছ থেকে তিনি (স্বতন্ত্র প্রার্থী) ভালোবাসা পাচ্ছেন। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তিনি জয়ের বিষয়ে শতভাগ আশাবাদী।
ভোটারদের টাকা-পয়সা এবং মালামাল (সাবান) দিয়ে প্রভাবিত করছেন তার (স্বতন্ত্র প্রার্থী) কর্মী-সমর্থকেরা। নৌকার প্রার্থীর এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে দেওয়ান জাহিদ আহমেদ বলেন, তিনি (নৌকার প্রার্থী) সব সময় শুধু আমার টাকা আছে এটাই বলে বেড়াচ্ছেন। একটা সাবান বা একশো টাকা দিয়ে একজন ভোটারের ভোট কি কেনা যায়। আমি বিষয়টি শুনেছি, তবে কোনো কর্মী যদি এটা করে থাকেন তা আমার জানা নেই এবং এগুলো দায় দায়িত্ব আমি নেব না।
সংবাদ সম্মেলনে স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ান জাহিদ আহমেদের সঙ্গে সিংগাইর উপজেলা আওয়ামী লীগৈর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সায়েদুল ইসলাম, স্থানীয় বায়রা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান দেওয়ান মো. জিন্নাহ ও তার (জাহিদ) মেয়ে দেওয়ান ইলমা আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মানিকগঞ্জ-২ আসনে মোট ১০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নৌকার প্রার্থী ছাড়াও এই আসনে দলের চার স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ ছাড়াও বিভিন্ন দলের আরও পাঁচজন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
তারা হলেন- আওয়ামী লীগের (নৌকা) মমতাজ বেগম, স্বতন্ত্র প্রার্থী (মোড়া) দেওয়ান সফিউল আরেফিন টুটুল, স্বতন্ত্র প্রার্থী (কেটলি) মুশফিকুর রহমান হান্নান, স্বতন্ত্র প্রার্থী (ঈগল) শাহাবুদ্দিন আহম্মেদ চঞ্চল, স্বতন্ত্র প্রার্থী (ট্রাক) দেওয়ান জাহিদ আহম্মেদ টুলু, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (নোঙ্গর) একেএম ইকবাল হোসেন, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (একতারা) এমএ নাহিদ, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের (গামছা) তানভীর হাসান, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের (ফুলের মালা) ফেরদৌস আহমেদ আসিফ ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের (ডাব) মো. জাকির হোসেন।
আসনটিতে মোট ভোটার রয়েছে ৪ লাখ ৬৬ হাজার ৯৮৯ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার রয়েছেন ২ লাখ ৩২ হাজার ১১৩ জন এবং পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৩৪ হাজার ৮৭৩ জন। আর তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন ৩ জন।
সোহেল হোসেন/আরএআর