পরিত্যক্ত ইট খোয়া রডে তৈরি হচ্ছে সরকারি বাড়ি

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সরকারের গৃহহীন প্রকল্পে অনিয়ম ও দুনীর্তির অভিযোগ পাওয়া গেছে। গৃহনির্মাণে পরিত্যক্ত ভবনের ইট, খোয়া এবং মরিচা পড়া রড ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
সরেজমিনে উজানচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল হোসেনের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, পরিত্যক্ত ভবনের ইট, খোয়া ও মরিচা পড়া রড স্তূপ করে রাখা হয়েছে। ইউনিয়নের চরাঞ্চল মহিদাপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ঘরগুলোতে পুরাতন ইটের খোয়া, মরিচা পড়া রড, বালিতে সিমেন্টের পরিমাণ কম দেয়া ও নম্বরবিহীন ইটের ব্যবহার হচ্ছে পুরোদমে।
এদিকে রাস্তাঘাট না থাকায় ঘর বরাদ্দ পাওয়া অসহায়দের ঘর তৈরির সরঞ্জাম আনতে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা পরিবহন খরচ দিতে হচ্ছে। যারা দিতে পারছেন না তারা ঘর তৈরি করতে পারছেন না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘর নির্মাণে কোনো ধরনের ব্যক্তিগত খরচ হওয়ার কথা ছিল না গ্রাহকদের। প্রকল্প বাস্তবায়নের যাবতীয় খরচসহ ঘর প্রতি ১ লাখ ৭১ হাজার টাকার পুরো অর্থ বরাদ্দ দিয়েছেন সরকার। গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর, দৌলতদিয়া, দেবগ্রাম ও ছোটভাকলা ইউনিয়নের দরিদ্র ৪৪০ জন মানুষ সরকারি ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন। ১৫ জানুয়ারি ২০২১ সালের মধ্যে এসব ঘর পরিপূর্ণভাবে তৈরি করে দরিদ্র গ্রাহকদের হাতে চাবি তুলে দেয়ার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে দুর্নীতির কারণে সরকারের এই মানবিক প্রকল্প মুখ থুবড়ে পরার আশঙ্কা রয়েছে।
উজানচরে ৬০ জন হতদরিদ্র সরকারি ঘর পেলেও বাড়তি খরচ যোগাতে না পেরে তাদের ঘর তৈরির স্বপ্নই থেকে যাচ্ছে। পুরাতন মালামাল ব্যবহার ও যেনতেনভাবে ঘর তৈরির কারণে নতুন এ ঘরে বসবাস করা ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন দরিদ্র পরিবারগুলো।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকাবাসী অভিযোগ করে জানান, যে ঘরগুলো তারা পেয়েছেন তাতে পুরাতন খোয়া, খারাপ ইট, মরিচা পড়া রড, বালিতে সিমেন্টের পরিমাণ কম দেয়া হয়েছে। নির্মাণের আগেই দেয়ালের অনেক স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। ঘর তৈরির সরঞ্জাম বহন বাবদ ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা নিচ্ছেন। অনেকে পরিবহন খরচ দিতে না পারায় ঘরের মালামালও দেয়া হচ্ছে না।
গোয়ালন্দের উজানচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবুল হোসেনকে পরিত্যক্ত ভবনের ইট, ইটের খোয়া, মরিচা পড়া রড, নিজ বাড়িতে সরকারি ঘর তোলা, সরকারি টাকায় পুকুর পাড় বাধা ইত্যাদি দুর্নীতির অভিযোগের কথা বলা হলে তিনি কোনো সদুত্তর দেননি। এ সময় তিনি গোজামিল দিয়ে পার পাওয়ার চেষ্টা করেছেন। তবে পুরাতন পরিত্যক্ত স্কুলের ভবন কেনার কথা স্বীকার করেছেন।
গোয়ালন্দ প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আবু সাইদ বলেন, সরকারি ঘরে কোনো ধরনের পুরাতন মালামাল ব্যবহার করা যাবে না। এ ধরনের অনিয়ম পাওয়া গেলে জড়িত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রকল্প সভাপতি আমিনুল ইসলাম বলেন, উপকারভোগীদের কাছ থেকে কোনো ধরনের পরিবহন খরচ নেয়া যাবে না। গ্রাহক নিজে মালামাল বুঝে নেবেন। ঘর তৈরিতে পুরাতন কোনো সরঞ্জাম ব্যবহার করা যাবে না। এমনটা হলে ঘর ভেঙে নতুন করে আবার তৈরি করা হবে।
এ ব্যাপারে রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম বলেন, সরকারি ঘর তৈরিতে পুরাতন মালামাল ব্যবহার করা যাবে না। কোনো ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পেলে কঠোর হাতে দমনের নির্দেশ দেয়া আছে। অভিযোগ তদন্ত করে সত্যতা পাওয়া গেলে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এসপি