নাটোরে পরাজিত নৌকার প্রার্থীর সমর্থকদের বাড়িঘরে ভাঙচুর
নির্বাচনোত্তর সহিংসতায় নাটোর-১ আসনের বাগাতিপাড়া উপজেলায় পরাজিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শহিদুল ইসলাম বকুলের সমর্থকদের বাড়িঘর, দোকানপাটে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
সোমবার (৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যা পর্যন্ত অন্তত ৩০টি বাড়িঘর-দোকানপাটে হামলা এবং নেতাকর্মীদের মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য ও নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শহিদুল ইসলাম বকুল।
নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদের নেতাকর্মীরা এসব সহিংসতা করেছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভোটের ফলাফল ঘোষণার পরই বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল কালাম আজাদের সমর্থক হিসেবে পরিচিত দয়ারামপুর ইউনিয়নের চানপুর এলাকায় ইউপি সদস্য আক্কাস আলীর নেতৃত্বে ৮-৯ জন নৌকার প্রার্থী শহিদুল ইসলাম বকুলের সমর্থক উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক উপ-পাঠচক্র সম্পাদক জাকারিয়া হোসেনের বাড়িতে হামলা চালায়।
ভুক্তভোগী জাকারিয়া বলেন, হামলাকারীরা হাসুয়া দিয়ে আমাদের বাড়ির টিনের দেওয়াল কাটেন এবং ঘরের আসবাবপত্র ও টেলিভিশন ভাঙচুর করেন। তিনি বলেন, আমাকে যেখানে পাওয়া যাবে সেখানেই মেরে ফেলা হবে বলে আমার মাকে শাসিয়েছে মেম্বারের লোকজন।
এদিকে ফলাফল ঘোষণার পর দুই দফা হামলা হয়েছে নৌকার প্রার্থীর অনুসারী যুবলীগ কর্মী রুহুল আমিন রুবেলের বাড়িতে। দয়ারামপুর ইউনিয়নের সোনাপুর বাজারের মিস্টারের মুদি ও চায়ের দোকান, বাগাতিপাড়া পৌর ১ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বেলাল হাজি, আওয়ামী লীগ কর্মী কাচু ও তুষারের বাড়িতেও হামলার ঘটনা ঘটেছে।
আরও পড়ুন
সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য ও পরাজিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শহিদুল ইসলাম বকুল ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভোটের ফলাফল ঘোষণার পর থেকে দুই উপজেলায় আমার নেতাকর্মীদের ৩০ থেকে ৪০টি বাড়িতে তাণ্ডব চালিয়েছে তারা (বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকরা)। অনেক নেতাকর্মীকে মারধর ও লাঞ্ছিত করেছে। এসব হামলার বিষয়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে জানিয়েছি এবং ঘটনার প্রতিকার চেয়েছি।
বকুল বলেন, চংধুপইল ও ওয়ালিয়াতে এখনও অনেক নেতাকর্মী ঘর থেকে বের হতে পারছে না।
বেশ কয়েকটি হামলার ঘটনা শিকার করে বাগাতিপাড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নান্নু খান বলেন, নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকরা বিজয় মিছিল থেকে নৌকার প্রার্থীর সমর্থকদের বেশ কয়েকটি বাড়িতে এমন ঘটনা (হামলা) ঘটিয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জাকারিয়ার বাড়ি। আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ভুক্তভোগীদের থানায় লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি।
তিনি বলেন, ওইসব এলাকায় ডিবি পুলিশ, মোবাইল টিম টহল দিচ্ছে। অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে।
প্রসঙ্গত, নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনে ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাড. আবুল কালাম আজাদ ৭৭ হাজার ৯৪৩টি ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকার প্রার্থী প্রার্থী মো. শহিদুল ইসলাম বকুল পেয়েছেন ৭৫ হাজার ৯৪৭টি। আসনটিতে আওয়ামী লীগের বড় এই দুই নেতার দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। এই দুই নেতাই আসনটিতে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। যেখানে শহিদুল ইসলাম বকুলকে দ্বিতীয়বারের মতো মনোনয়ন দেয় দল। আর মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ।
গোলাম রাব্বানী/পিএইচ
