তাদের দায়িত্বের কাছে হার মানছে কনকনে শীত

ঘন কুয়াশা, কনকনে ঠান্ডা সেই সঙ্গে বইছে বাতাস। দিনে দেখা মিলছে না সূর্যের। রাতের শুনসান নিরবতায় তাদের সঙ্গী কুকুর ও শিয়ালের মাঝে মাঝে হাঁক। প্রকৃতির স্তব্ধতায় কুয়াশাচ্ছন্ন হাঁড় কাপানো এই কনকনে শীতে নিজ দায়িত্ব পালন করে চলেছেন তারা। দুর্বৃত্তের হাত থেকে রক্ষা করছেন রেললাইনকে। এতে নির্বিঘ্নে ট্রেনে করে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে যাচ্ছেন যাত্রীরা।
বলছিলাম হাড় কাঁপানো এই শীতে নিজ দায়িত্ব পালনে অটল থাকা আনসার সদস্যদের কথা। শৈত্যপ্রবাহের মাঝেও তারা পাহারা দিয়ে চলেছে রেললাইন। শুধু রেলপথই নয় সড়কপথেও যোগাযোগ নির্বিঘ্ন রাখতে সারাদেশে ১৩ হাজার আনসার ভিডিপি সদস্য কাজ করছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। এর মধ্যে জয়পুরহাটের ৪২ দশমিক ২ কিলোমিটার রেলপথের ১৯টি পয়েন্টে ১৭২ জন আনসার-ভিডিপি সদস্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
রাতে দায়িত্ব পালন করা আনসার সদস্য মিনহাজুল ইসলাম বলেন, আমরা রাতে ডিউটি পালন করছি। কেউ যেন রেললাইনে নাশকতা বা কোন দুর্ঘটনা না ঘটাতে পারে সেজন্য লাইন চেকিং এবং টহল ডিউটি করছি। ট্রেন যাত্রীরা যেন সুন্দরভাবে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে এবং রেলের কোনো ক্ষতি না হয় সেজন্য দেখাশোনা করছি। আমরা তিন শিফটে ২৪ ঘণ্টায় দায়িত্বে আছি।
আরেক আনসার সদস্য আনিছুর হোসেন বলেন, এই শীতে আমাদের কষ্ট হয়। কিন্তু সেই কষ্টকে কিছু মনে হয় না। কারণ এটা আমাদের দায়িত্ব। এটি সরকারের সম্পদ, আর সরকারের সম্পদ মানে আমাদের সম্পদ। এজন্য প্রত্যেক আনসার সদস্য শীতের সময় কষ্ট করে দায়িত্ব পালন করছে।

আনসারের ইউনিয়ন দলনেতা আব্দুল হামিদ বলেন, কেউ রেললাইনের ফিসপ্লেট খোলা, অগ্নিসংযোগ এবং রেললাইনের বিভিন্ন সরঞ্জামাদি তুলে রেলের যেন ক্ষতি করতে না সেজন্য সরকার আমাদের দায়িত্ব দিয়েছে। ঘর কুয়াশার মধ্যে দিনে ও রাতে টর্চ ধরে সেগুলো দেখাশোনা করছি। আমাদের দেখাশোনা করার জন্য দুষ্কৃতিকারীরা রেললাইনের কোনো ক্ষতি করতে পারছে না। এতে যাত্রীরা নিরাপদে এবং নির্বিঘ্নে ট্রেনে চলাচল করছে। শীতে আমাদের কষ্ট হলেও ট্রেনযাত্রীরা যে সুবিধা পাচ্ছে এটা ভেবে আমরা স্বস্তি পাচ্ছি।
আরও পড়ুন
ঢাকাগামী ট্রেনযাত্রী সুমন মিয়া বলেন, আমি ঢাকায় বেসরকারি একটি কোম্পানিতে চাকরি করি। নির্বাচনের আগে ছুটিতে বাড়ি এসেছিলাম। এক সপ্তাহ থাকার পর ঢাকায় যাচ্ছি। ঢাকায় চলাচলের জন্য সবসময় ট্রেনকে নিরাপদ মনে করি। তবে নির্বাচনের আগে যখন রেললাইনে নাশকতা খবর দেখতাম তখন ট্রেনে আসতে ভয় কাজ করছিল। কিন্তু যখন শুনলাম আনসার সদস্যরা রেললাইন পাহারা দিচ্ছেন। তারা লাইনের সব কিছু ঠিক আছে কিনা তা দেখাশোনা করছেন। তখন অনেকটা সাহস পেয়ে বাড়ি এসেছি।
জহুরা নামের আরেক ট্রেন যাত্রী বলেন, আনসার সদস্যরা রেলপথ দেখাশোনা করার কারণে ট্রেনে বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। এর ফলে আমরা যাত্রীরা নিরাপদে নির্বিঘ্নে ট্রেনে চলাচল করছি।

জয়পুরহাটের জেলা কমান্ড্যান্ট, আনসার ও ভিডিপি কার্যালয়ের মির্জা সিফাত-ই-খোদা ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত বছরের ৩১ অক্টোবর থেকে সারাদেশে আনসার সদস্যরা মোতায়েন হয়েছে। সারাদেশে ১৩ হাজার আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। এর মধ্যে জয়পুরহাট জেলার ৪৬ দশমিক ২ কিলোমিটার রেললাইনে ৭টি স্টেশনের ১৯টি পয়েন্টে ১৭২ জন আসনার সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। মূলত বিভিন্ন সময় রেললাইনের ফিসপ্লেট, না-বল্টু খুলে ফেলা, অগ্নিসংযোগ, নাশকতা বা বিভিন্ন ধরনের ঘটনা আনসার সদস্যরা তাৎক্ষণিক আমাদের জানাচ্ছে। আমরা তা রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে জানাচ্ছি। সে অনুযায়ী তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন। এর ফলে ট্রেনের যাত্রীরা নিরাপদে যাতায়াত করতে পারছে এবং বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে অবরোধে ‘অপারেশন সুরক্ষিত যাতায়াত’ রাখতে গত ৩১ অক্টোবর থেকে ১০ হাজার আনসার-ভিডিপি সদস্য মাঠে নামে। এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত গত ১৭ ডিসেম্বর থেকে আরও ৩ হাজার সহ মোট ১৩ হাজার আনসার-ভিডিপি মোতায়েন করা হয়। সাধারণ আনসার ও ভিডিপি সদস্যরা রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড ও লঞ্চঘাট ছাড়া সড়ক ও রেলপথে যেন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেদিকে সতর্কভাবে দৃষ্টি রাখার জন্য কাজ করছে।
চম্পক কুমার/আরকে