‘এই শীতে বাইরেও কষ্ট, ঘরেও কষ্ট’

মধ্য দুপুরেও চারপাশ কুয়াশায় ঢাকা। বইছে হিমেল হাওয়া। বাদাম বিক্রির উদ্দেশ্যে ময়মনসিংহ নগরীর শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পার্কের এক মাথা থেকে আরেক মাথায় ঘুরছেন ষাটোর্ধ্ব আমিরুল ইসলাম। একদিকে তীব্র শীতে জবুথবু অবস্থা আর অন্যদিকে দুই ঘণ্টায়ও ‘বনি’ করতে পারেননি। তাই চোখে মুখে তার হতাশার ছাপ।
এরই মধ্যে আমিরুল ইসলামের সঙ্গে আলাপ হয় ঢাকা পোস্টের। আমিরুল ময়মনসিংহ সদরের বেগুনবাড়ি এলাকার বাসিন্দা। পাঁচ দশক ধরে বাদাম বিক্রি করেই তিনি চালাচ্ছেন সংসার। এবারের শীতের কথা জিজ্ঞেস করতেই তার ভাষ্য, ‘অনেক বছর আগে এইরহম শীত দেখছি কিন্তু তহন বাতাস আছিল না। এহত শীতের লগে লগে ঠান্ডা বাতাসও অনেক। শেষ বয়সে এত শীত আর সহ্য করতে পারতাছি না। এই শীতে দিনের বেলা বাইরেও কষ্ট, রাইতে ঘরে গিয়াও কষ্ট। গরম কাপড় আর লেপ-কম্বলের অভাবে ঠান্ডায় ঘুমাইতে পারি না। খেতা গতর দিয়া ঘুমান যায় না।’
তীব্র শীতে বের হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেঁচে থাকার তাগিদেই বের হতে হয়। আমার সংসারে লোকজন বেশি। অভাবও বেশি। তাই যত শীতই পড়ুক, বাদাম বিক্রি করতে আসতেই হয় আমার। তা না হলে সবাইকেই না খেয়ে থাকতে হবে। তাই এক মুঠো ভাতের যোগান দিতে এই তীব্র শীতেও ঘুরে বেড়াচ্ছি।
হতাশা ব্যক্ত করে আমিরুল বলেন, যে পরিমাণ কামাই করি এতে আমার সংসার চলে না। তবু কোনোভাবে দিন কাটিয়ে যাচ্ছি। পাঁচ কেজি বাদাম নিয়ে আসলে সারাদিনে বিক্রি হয় দেড় কেজি। এতে আমার হাত খরচই চলে না। সংসার চালাব কেমনে? সারাদিনে যে ৪০০-৫০০ টাকা রোজগার হয়। তা নিয়ে বাজারে গেলে দেখা যায় আড়াই কেজি চাল কেনা যায়। কিন্তু এই চাল খাব কী দিয়ে? এক কেজি বেগুনের দাম ৮০ টাকা, আলু ৬০ টাকা। মাছের যে দাম, মাছ কিনব কেমনে?
তিনি বলেন, সারাদিন ঘুরে ঘুরে কষ্ট করি, আবার রাতে ঘুমানোর সময় কষ্ট করি। কাল সারারাত শীতে ঘুমাতে পারিনি। কারণ আমার বাড়িতে শীত নিবারণের কম্বল নেই। আমার মত লোকের কম্বল কেনার সামর্থ্য নেই। তবু বের হয়েছি পেটের দায়ে। কিন্তু মানুষ শীতে পকেট থেকে হাতই সরানো না। মানুষ বাদাম খাবে কেমন করে?
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, বুধবার (২৪ জানুয়ারি) ময়মনসিংহ জেলায় সর্বনিম্ন ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
উবায়দুল হক/এসকেডি