চাকা ঘুরিয়ে ভাগ্য বদলেছেন সুমন

সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল গোলচত্বর এলাকায় আখের রস বিক্রি করেন মো. সুমন আলী (৩৫)। দিনমজুর বাবার ছেলে হওয়ায় পড়াশোনা করতে পারেননি। ছোটবেলা থেকে বাবার কৃষিকাজে সহযোগিতা করেন। একসময় গাজীপুরের একটি টেক্সটাইল মিলে শ্রমিকের কাজ শুরু করেন। কিন্তু সেখানে ভাগ্য খোলেনি।
দুই বছর আগে থেকে আখের রস বিক্রি শুরু করেন সুমন। এখন তিনি স্বাবলম্বী। সলঙ্গা থানার হাটিকুমরুল ইউনিয়নের চড়িয়া মধ্যপাড়া গ্রামের মো. চাঁদ আলীর ছেলে সুমন আলী। মা-বাবা, স্ত্রী ও চার বছরের মেয়ে সুমনাকে নিয়ে পাঁচজনের সংসার তার।
হাত দিয়ে মেশিনের চাকা ঘোরাতে ঘোরাতেই স্বাবলম্বী হওয়ার গল্প শোনান। সুমন ঢাকা পোস্টকে বলেন, দিন এনে দিন খাওয়া পরিবারে জন্ম আমার। ছোটবেলা থেকেই বাবাকে সহযোগিতা করতে গিয়ে পড়াশোনার সুযোগ হয়নি। জীবনের অনেকটা সময় কৃষিকাজে পার করেছি। গাজীপুরের একটি টেক্সটাইল মিলে শ্রমিক হিসেবে চাকরি নিয়েছিলাম। তবু ভাগ্য খোলেনি।
তিনি বলেন, মা-বাবার বয়স বাড়তে থাকায় প্রয়োজন হয় বিয়ে দেওয়ার। অবশেষে পরিবার আমাকে বিয়ে দেয়। কিন্তু টেক্সটাইল মিলে থেকে যা উপার্জন হচ্ছিল তা দিয়ে চলছিল না সংসার। তখন বৃদ্ধ বাবা হাটিকুমরুল এলাকায় শুরু করেন আখের রসের ব্যবসা। পরবর্তীতে বাড়িতে এসে কৃষিকাজের পাশাপাশি আখের রসের ব্যবসায় বাবাকে সহযোগিতা শুরু করি।
কিন্তু বাবার বয়স বাড়ায় বিশ্রামের দরকার। এজন্য দুই বছর আগে আখের রস বিক্রি শুরু করি। শীত বা গরমে প্রতিদিন গড়ে ১৩০০-১৪০০ টাকার রস বিক্রি হয়। খরচ বাদ দিয়ে দিনে ৭০০-৮০০ টাকা আয় হয়। এ দিয়ে ভালোভাবেই চলে আমার সংসার।
সুমন আরও বলেন, আখের রস বিক্রি করে ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকায় দুটি গাভি কিনেছি। পরে একটি গাভি বাচ্চা দেয়। সেটিকে লালনপালন করে বড় করেছি। এখন তিনটি গাভির মূল্য প্রায় আড়াই লাখ টাকা। গাভিগুলোর যত্ন নেয় আমার পরিবারের সদস্যরা। নেই কোনো ঋণের বোঝা। নিজের ভাগ্য নিজেই বদলেছি। আমরা অনেক ভালো আছি।
সুমন বলেন, যতটুকু আয় করি তার মধ্যে আমার কোনো বাজে খরচ নেই। তাই পরিবার নিয়ে একটু কষ্ট করে চলার পাশাপাশি কিছু সঞ্চয় করি। কারও কোনো সহযোগিতা চাই না। আল্লাহ যেন সততার সঙ্গে জীবনযাপন করার সুযোগ দেন- এটাই চাওয়া।
শুভ কুমার ঘোষ/এএম