৬০ বছরেও মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারেনি রাজবাড়ীর বিসিক শিল্পনগরী

প্রতিষ্ঠার ৬০ বছরেও মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারেনি রাজবাড়ী বিসিক শিল্পনগরী। সুষ্ঠু পরিকল্পনা, অব্যবস্থাপনা ও অবকাঠামোগত সুবিধা না পাওয়া এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে লোকসানের মুখে একের পর এক বন্ধ হয়ে গেছে এ শিল্প নগরীর বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান।
কাগজে কলমে ৭৭টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া থাকলেও বর্তমানে অধিকাংশ প্লটই বন্ধ রয়েছে এ নগরীতে। প্রতিষ্ঠার ৬০ বছরেও কোনো উন্নয়ন না হওয়ায় এমন বেহাল অবস্থা তৈরি হয়েছে বলে দাবি এখানকার উদ্যোক্তাদের।
জানা গেছে, রাজবাড়ী শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে রামকান্তপুর এলাকায় প্রায় ১৬ একর জায়গার উপর ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বিসিক শিল্প নগরী। শুরুতে এ শিল্প নগরীর কার্যক্রম শুরু হয় ৭৭টি প্লট দিয়ে। এর মধ্যে এ টাইপ ১৪টি, বি টাইপ ২৩টি, সি টাইপ ২০টি এবং ডি টাইপ রয়েছে ২০টি। মোট শিল্প ইউনিটের সংখ্যা ৫৩টি। উৎপাদিত শিল্প ইউনিট রয়েছে ৩৮টি। বাকি ১৫টির মধ্যে রুগ্ন ১১টি, নির্মাণাধীন দুটি, মামলা চলছে তিনটিতে এবং কিছু আছে সিজনাল। বিসিকে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে বেকারি, সিলভার, রাইস ও স্বয়ংক্রিয় ময়দার মিল, তেলের মিল, ডাল মিল, ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ ইত্যাদি। এরপর এ নগরীতে আর নতুন করে গড়ে ওঠেনি কোনো প্রতিষ্ঠান। বরং বিদ্যুৎ ও সুপেয় পানির সংকট, ড্রেনেজ ও বর্জ্য অব্যবস্থাপনা আর নিরাপত্তাহীনতাসহ নানা কারণে লোকসানের মুখে বন্ধ হতে থাকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিসিক শিল্প নগরীতে গড়ে ওঠা বেশিরভাগ শিল্পপ্রতিষ্ঠানই বন্ধ হয়ে গেছে। বিভিন্ন জায়গা ময়লা আবর্জনা আর আগাছায় ভরে গেছে। সেসব জায়গায় গরু চড়ানো হচ্ছে। ড্রেনগুলোর ভেতর ময়লার স্তুপ জমে গেছে। বর্তমানে এ শিল্প নগরীতে ৯০ ভাগ শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। কোনোরকমে সচল রয়েছে রয়েছে বেকারি, সিলভার পণ্য তৈরির কারখানা, চাল ও স্বয়ংক্রিয় ময়দার মিল, তেলের মিল ও ডালের মিলসহ ১০ থেকে ১২টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান।
সাগর ফুড প্রোডাক্টসের ম্যানেজার ফরিদ হোসেন বলেন, বিসিকে ড্রেনের পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই। বৃষ্টি হলে পানি জমে থাকে। চারপাশে ময়লা আবর্জনায় ভরে গেছে। এছাড়া বিসিক শিল্পনগরী জায়গা খোলামেলা থাকায় এখানে সঠিক নিরাপত্তার ব্যবস্থাটাও নেই। বিসিক কর্তৃপক্ষের এসব বিষয়ে কোনো নজরদারি না থাকায় তাদের অবহেলার কারণে আজ বিসিকের এই বেহাল অবস্থা।
বর্ষণ-বর্ণ ফুড প্রোডক্টসের পরিচালক আসাদুজ্জামান বলেন, শুধুমাত্র সরকারি সুযোগ-সুবিধা না থাকায় রাজবাড়ী বিসিক শিল্প নগরীর আজ এই বেহাল দশা। ছোটবড় সব শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিককে ব্যাংক লোন সুবিধা, নতুন উদ্যোক্তা তৈরি ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা বাড়ালে এ শিল্প নগরী আবারও প্রাণ ফিরে পাবে।
রাজবাড়ী বিসিক ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাজী বেনজীর আহমেদ বলেন, বিসিকের ব্যবসায়ীদের জন্য সরকারি কোন সুযোগ সুবিধা নেই। বিশেষ করে জমি ট্যাক্সের টাকা কয়েক গুণ বেড়েছে। যে কারণে বেশিরভাগ ব্যবসায়ী তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে। এছাড়া এখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। বৃষ্টি হলে পানি পানে জমে থাকে। এসব অসুবিধার কারণে দিন দিন বন্ধ হচ্ছে বিসিক শিল্পনগরীর শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো।
রাজবাড়ী বিসিকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক চয়ন বিশ্বাস বলেন, বিসিক শিল্পনগরীতে সীমানা প্রাচীর, বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে বিসিক হেড অফিসে যোগাযোগ করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, আগামী অর্থ বছরে কিছু বরাদ্দ পাওয়া যেতে পারে। বরাদ্দ পেলে সমস্যাগুলো কিছুটা হলেও সামাধান হবে।
মীর সামসুজ্জামান সৌরভ/আরকে