খাগড়াছড়িতে টমেটো ক্ষেতে ‘আরলি ব্লাইট’ রোগ, বিপর্যস্ত কৃষক
খাগড়াছড়িতে টমেটোতে আরলি ব্লাইট বা আগাম ধ্বসা রোগ দেখা দিয়েছে। এতে জেলার বিভিন্ন স্থানে কয়েক একর জমির চাষ করা টমেটোর গাছ মরে যাচ্ছে। পরিপক্ব হওয়ার আগেই পচন ধরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে টমেটো। এতে ফলন বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা।
খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার গঞ্জপাড়া, দক্ষিণ গঞ্জপাড়াসহ কয়েকটি এলাকায় দেখা গেছে- জমিতে টমেটোসহ গাছ মরে আছে। কৃষকদের বলছেন- রোগের দেখা দেওয়ার সাথে সাথে একাধিক বার বিভিন্ন ধরনের ছত্রাকনাশক ওষুধ ব্যবহার করেও রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে না। হঠাৎ এমন মহামারি রোগের আক্রমণে দিশেহারা কৃষক। রোগ দেখা দেওয়ার দুই তিনদিনের মধ্যেই গাছ মরে টমেটোগুলো কালচে হয়ে পচে যাচ্ছে। এতে করে কাঁচা টমেটো বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না।
গঞ্জপাড়া এলাকার কৃষক মো. রফিকুল ইসলাম বর্গা নিয়ে ৩০ শতক জমিতে টমেটো চাষ করেছেন। টমেটো চাষ করতে এখন পর্যন্ত ৪৫ হাজার টাকা খরচ করেছেন। প্রচুর ফলন এসেছে টমেটোর, কিন্তু গাছ মরে নষ্ট হয়ে গেছে সব টমেটো। জমি থেকে এক কেজি টমেটো বিক্রি করতে পারেননি তিনি। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের পরামর্শ নিয়েও বিফল হয়েছেন দাবি তাঁর।
দক্ষিণ গঞ্জপাড়া এলাকায় আরেক চাষি মো. জাফর আলম। তিনি ৪০ শতক জমিতে টমেটো চাষ করেছেন। মাত্র ফলন আসছে টমেটোর। হঠাৎ রোগে সব গাছ মরে গেছে। ৭০-৮০ হাজার টাকা খরচ করেছিলেন এ জমিতে। তার দাবি কাঁচা টমেটো বিক্রি করবেন সেই সময়টুকু তিনি পাননি। রোগে আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে নষ্ট হয়ে গেছে সব। বিভিন্নজনের পরামর্শে কীটনাশক, ছত্রাক নাশক ব্যবহার করেও রক্ষা করতে পারেননি তিনি।
দীঘিনালা উপজেলার মেরুং ইউনিয়নের ছোট মেরুং এলাকার কৃষক হারুন রশীদ জানান, ৩০ শতক জমির টমেটো গাছ এক সপ্তাহের মধ্যে মরে গেছে। চেষ্টা করেও রোধ করা সম্ভব হয়নি। তিনি ৩০-৩৫ হাজার টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
সদর উপজেলার ঘুগড়াছড়ি ব্লকের কৃষি উপসহকারী কর্মকর্তা নীতি ভুষণ চাকমা জানান, এবার আরলি ব্লাইট এবং নাবি ব্লাইট রোগের পাদুর্ভাব বেশি দেখা গেছে। যে সকল জমিতে প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত করা গেছে তাদের টমেটো ভালো রয়েছে।
সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মুক্তা চাকমা জানান, ঘন কুয়াশার কারণে মূলত টমেটোর নাবি ধ্বসা (আরলি ব্লাইট) রোগ ব্যাপকভাবে দেখা দিয়েছে। এ উপজেলায় ৩২ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ হয়েছে। যার মধ্যে প্রায় ১০ হেক্টরের মতো জমির টমেটো রোগ আক্রান্ত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্য মতে, গত বছর জেলায় ৪৪২ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ হয়েছে। এবার জেলায় ৯ হাজার ৫০৮ মেট্রিক টন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
আরএআর