২০০ রকমের পিঠা নিয়ে গুরুদয়াল কলেজে উৎসব

আধুনিক নগর সংস্কৃতির প্রভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী নানা রকম পিঠা। যান্ত্রিক জীবন আর আধুনিকায়নের যুগে নতুন প্রজন্ম কতটুকুই বা জানে পিঠার কথা। গ্রাম-বাংলার বিলুপ্ত প্রায় লোকজ ঐতিহ্যবাহী খাবার ধরে রাখা ও নতুন প্রজন্মের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে তৃতীয় বারের মতো কিশোরগঞ্জের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ গুরুদয়াল সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে দিনব্যাপী পিঠা উৎসব পালিত হয়েছে।
বুধবার (৩১ জানুয়ারি) কলেজটির শিক্ষক পরিষদের আয়োজনে ক্যাম্পাসের কৃষ্ণচূড়া চত্বরে বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরা হরেক রকমের পিঠা প্রদর্শনী ও বেচাকেনার আয়োজন করে। ২২ স্টলে দুই শতাধিক পিঠার পসরা সাজিয়ে বসেন কলেজের শিক্ষার্থীরা। আর ভিন্নধর্মী এ আয়োজন দেখতে ও পিঠার স্বাদ নিতে কলেজে আসেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

গুরুদয়াল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আ. ন. ম মুস্তাকুর রহমান বেলা ১১টায় এই পিঠা উৎসবের উদ্বোধন করেন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আজহারুল ইসলাম প্রমুখ।
বেগম খালেদা জিয়া ছাত্রী হোস্টেলের বেগম পিঠা ঘরের শিক্ষার্থী তাসনিয়া বলেন, শুধু আমাদের স্টলে ৭৫ রকমের পিঠা রয়েছে। আমরা নিজেদের হাতেই এ পিঠা বানিয়েছি। এ ছাড়া আমাদের স্টলে ব্রেকআপ পিঠা রয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনা করেই আমরা এই ব্রেকআপ পিঠা রেখেছি। এই পিঠা খেলে ব্রেকআপের যে কষ্ট সেটি উধাও হয়ে যাবে!
পিঠা খেতে আসা শিক্ষার্থী শান্তা বলেন, বছরে একবার কলেজে এই প্রোগ্রামটি হয়। এখানে এসে আমরা অনেক নতুন পিঠার সঙ্গে পরিচিত হই, অপরিচিত পিঠা সম্পর্কে জানতে পারি। এখানে অনেক ধরনের পিঠা আছে যা আমরা আগে কখনো খাইনি। এখানে এসে অন্যদেরকে উৎসাহিত করি পিঠা সম্পর্কে জানার জন্য।

গুরুদয়াল সরকারি কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী চয়ন বলেন, কিশোরগঞ্জের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে এই পিঠা উৎসব আয়োজন করার জন্য অধ্যক্ষ মহোদয়কে ধন্যবাদ জানাই। বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা স্টলে হরেক রকমের পিঠা নিয়ে এসেছেন। যা দেখে খুব ভালো লাগছে।
বিভিন্ন নামের পিঠা তৈরি করে নিয়ে উৎসবে অংশ নেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন, পিটা উৎসবকে কেন্দ্র করে অনেক রকমের পিঠার সঙ্গে পরিচিতি বাড়ছে। আশা করি, এ আয়োজনের মাধ্যমে হারানো গ্রামীণ ঐতিহ্য ফিরে আসবে। আমরা চাই প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন আয়োজন অব্যাহত থাকুক।

উৎসবের বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখা যায়, নকশি পিঠা, মাংস পুলি, দুধ পুলি, নারকেল পুলি, দুধ চিতই, দুধ পোয়া, ঝাল পোয়া, মাল পোয়া, লবঙ্গ লতিকা পিঠা, জামাই পিঠা, শল পিঠা, দুধ পলি, সুখ চিতই, মলই পিঠা, বিস্কুট পিঠা, মশলা পিঠা, কুড়িমুড়ি পিঠা, নারিকেলের চিড়া, সুপি পিঠা, মিষ্টি পিঠাসহ ২২ স্টলে দুই শতাধিক পিঠা দেখা গেছে। একেকটি পিঠার স্বাদ একেক রকম।
গুরুদয়াল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আ. ন. ম মুস্তাকুর রহমান বলেন, এবার নিয়ে তৃতীয়বারের মতো আমরা পিঠা উৎসবের আয়োজন করেছি। সবগুলো পিঠা শিক্ষার্থীরাই বানিয়েছে। এবার প্রতিটি স্টলেই নতুন ও বিভিন্ন ধরনের পিঠা তৈরি করে নিয়ে এসেছে শিক্ষার্থীরা। মূলত শিক্ষার্থীদেরকে আমাদের গ্রামীণ ঐতিহ্য বিভিন্ন পিঠার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতেই এ আয়োজন। এ উৎসবটি শিক্ষার্থীরা দারুণভাবে উপভোগ করছে।
মোহাম্মদ এনামুল হক হৃদয়/এএএ