ফেনীতে ৩ দিনব্যাপী পিঠা উৎসব শুরু, স্বাদ নিতে পিঠাপ্রেমীদের ভিড়

বাঙালির অনেক উৎসবের মতোই পিঠা উৎসব সুপ্রাচীন কালের। প্রকৃতি থেকে বিদায় নিচ্ছে শীত। মাঘের মাঝ সময়ে সারা দেশের মতো ফেনীতেও শুরু হয়েছে পিঠা উৎসব। বুধবার (৩১ জানুয়ারি) বিকেলে ফেনী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ৩ দিনব্যাপী আয়োজনের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক বলেন, বাংলাদেশ ছাড়া বিশ্বের অন্য কোনো দেশে এমন পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয় না। ফেনী জেলা এ ধরনের উৎসব আয়োজনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশ সুপার জাকির হাসান এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক গোলাম মোহাম্মদ বাতেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জেলা শহর ও উপজেলা থেকে অংশ নেওয়া স্টলগুলো সেজেছে ঐতিহ্যবাহী নানান রকমের পিঠার পসরায়। এতে বাহারি পিঠার বৈচিত্র্যময় ২৫টি স্টল বসেছে। এর মধ্যে ৮টিতে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন, ১০টিতে উদ্যোক্তা, একটি স্টলে আনসার ভিডিপি এবং অন্য স্টলগুলোতে ছয় উপজেলা থেকে আসা পিঠাশিল্পীরা বসেছেন। এসব স্টলে সারা দেশের ঐতিহ্যবাহী নানা ধরনের পিঠা দেখা যায়। ফেনীর পিঠা-প্রেমীরা পিঠার স্বাদ নিতে ভিড় করছেন এসব পিঠার স্টলে।

পিঠাগুলোর মধ্যে রয়েছে— নারিকেল পুলি পিঠা, গুড়ের ভাপা পিঠা, লাভ পিঠা, চিড়ার মোয়া, দুধ ভাপা পিঠা, নারিকেল সন্দেশ, ক্ষীর পাটিসাপটা, চুটকি পিঠা, ডালিয়া পিঠা, ডিমের পিঠা, জামাই পিঠা, দুধপুলি পিঠা, সুজি পিঠা, মালপোয়া, সুজির সন্দেশ, বিস্কুট পিঠা, গোলাপ পিঠা, ফুলঝুরি পিঠা, ঝিনুক পিঠা, নকশি পিঠা, মেরা পিঠা, জাল ঝিনুক পিঠা, কদমপুল পিঠা, হৃদয়হরণ পিঠা, বিন্নি ভাপা, ড্রাগন পিঠা, মুগ পাকনসহ মজার মজার নামের শতাধিক পিঠা।
সরেজমিনে দেখা যায়, কেউ পিঠা উৎসবে স্টল দিয়েছে, কেউ স্টলগুলো থেকে পিঠা কিনছে আর কেউ উপভোগ করেছে পিঠা উৎসবের পাশাপাশি চলা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
ছায়া মহিলা উন্নয়ন সমিতির স্টলে থাকা বিলকিস আরা বলেন, আমি অনলাইনে পিঠা বিক্রয় করি। এখানে ২৬ রকমের পিঠা এনেছি। বর্তমান প্রজন্ম ফাস্টফুডে আসক্ত হয়ে পড়েছে। তাদেরকে এই আসক্তি থেকে বের করে আনার জন্য এবং পিঠাপুলির দিকে আগ্রহ বাড়ানোর জন্য এমন আয়োজন অনেক ভূমিকা রাখবে।
স্বপ্নীল সাংস্কৃতিক সংগঠনের স্টলের পরিচালক ফাহমিদা বলেন, এখানে আমাদের অঞ্চলের পিঠাগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। পিঠা উৎসবে স্টল দিতে পেরে অনেক ভালো লাগছে।
পিঠা খেতে আসা অন্বয় নামে এক কলেজ শিক্ষার্থী বলেন, এখানের অনেক পিঠা আগে গ্রামে দেখেছি। আজকে শহরে একসাথে এতো ধরনের পিঠা দেখেছি। পাশাপাশি পিঠার সরাসরি স্বাদ নিতে পেরে আমি আনন্দিত।
সবুজ তাপস নামে এক দর্শনার্থী বলেন, পিঠা উৎসবে আসতে পেরে অনেক ভালো লাগছে। এমন উৎসবের জন্য নানা রকম পিঠার সাথে পরিচয় হতে পেরেছি। এমন আয়োজন করার জন্য আয়োজকদের সাধুবাদ জানাই।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জেলা কালচারাল অফিসার এস.এম.টি কামরান হাসানের পরিচালনায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) অভিষেক দাষ, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সফিকুল রিদওয়ান আরমান সাকিল, বীর মুক্তিযোদ্ধা, জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
তারেক চৌধুরী/এমএ