টাকা দিয়েও হয়নি এমপিও, মৃত্যুর পর মরদেহ নিয়ে বিদ্যালয়ে বিক্ষোভ

ঘুষের টাকা ফেরতের দাবিতে সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে রোকেয়া বেগম (৫৫) নামে এক শিক্ষিকার মরদেহ নিয়ে বিদ্যালয়ে বিক্ষোভ করেছে স্বজনরা। পরে কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক ঘুষের টাকা আগামী তিন দিনের মধ্যে ফেরত দেওয়ার অঙ্গীকার করলে মরদেহ দাফনের ব্যবস্থা করা হয়।
মৃত স্কুল শিক্ষিকা রোকেয়া বেগম উপজেলার গাড়াবেড় গ্রামের খয়ের উদ্দিনের মেয়ে। তিনি জিসিজি বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের মাধ্যমিক শাখার ইংরেজি বিষয়ের সহকারী শিক্ষিকা ছিলেন।
সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে কাজিপুর উপজেলার গোদাগাড়ী চকপাড়া গাড়াবের বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
স্বজনদের অভিযোগ, এমপিওভুক্তির কথা বলে ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি কাজিপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান দ্বীন মোহাম্মদ বাবলু ও প্রধান শিক্ষক ফরিদুল ইসলাম দফায় দফায় তার কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তবে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চার লাখ টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।

মৃত শিক্ষিকা রোকেয়া বেগমের ভাই মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ১৯৯৮ সালে গোদাগাড়ী চকপাড়া গাড়াবেড় বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে রোকেয়া বেগম ইংরেজি শিক্ষিকা হিসেবে যোগদান করেন। দীর্ঘদিন ধরে এমপিওভুক্তির কথা বলে প্রধান শিক্ষক ফরিদুল ইসলাম ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি দ্বীন মোহাম্মদ বাবলু তার কাছ থেকে দফায় দফায় প্রায় ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। সম্প্রতি তিনি বোর্ডে গিয়ে খোঁজ নিয়ে দেখেন তার এমপিওভুক্তি হয়নি। ইংরেজি শিক্ষিকা হিসেবে যোগ দিলেও বোর্ডে গিয়ে দেখেন তাকে সমাজবিজ্ঞান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বোর্ড থেকে ফিরে এসে রোকেয়া সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে ঘুষের টাকা ফেরত চান। টাকা ফেরত দিতে অস্বীকার করায় তিনি টেনশনে গত (৩০ জানুয়ারি) আমাদের বাড়িতে স্ট্রোক করে। পরে তাকে ঢাকার নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে তিনি মারা যান। মৃত্যুর পর তার মরদেহ এলাকায় আনা হলে স্বজনরা মরদেহ নিয়ে স্কুল মাঠে বিক্ষোভ করেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
রোকেয়া খাতুনের স্বামী আব্দুল করিম বলেন, বিদ্যালয়ের ঘর করার কথা বলে আমার স্ত্রী ও আমার কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকা নেয় প্রধান শিক্ষক ফরিদুল। এরপর আমি সেখান থেকে সরে আসলেও আমার স্ত্রী ঠিকই থাকে। বেতন চালু করে দেওয়ার কথা বলে পরে দফায় দফায় লাখ লাখ টাকা নিয়েছে তারা। কিন্তু বেতন করে দেয়নি। এই শোকে আমার স্ত্রী স্টোক করে মারা গেলেন।

কাজিপুর থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল মজিদ জানান, মরদেহ নিয়ে বিক্ষোভ হচ্ছে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা যায়, প্রতিষ্ঠান থেকে তার কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে। এদিকে মৃত শিক্ষিকার নিয়োগ বৈধ হয়নি। সেই শিক্ষিকার মরদেহ নিয়ে বিক্ষোভ করছে স্বজনরা। এ নিয়ে স্কুল প্রাঙ্গণে ঝামেলা হচ্ছিল। ঘটনাস্থলে ইউএনও সাহেব উপস্থিত ছিলেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদুল ইসলাম টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, রোকেয়ার টাকা দিয়েই আমরা বিদ্যালয়ের ঘর উঠাই। বেতন করে দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন সময় টাকাও নিয়েছি। আমরা রোকেয়ার ৪ লাখ টাকা ফেরত দেব আগামী ৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে।
এ বিষয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ বাবলু সাংবাদিকদের বলেন, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং মীমাংসা হয়ে গেছে। স্বজনরা মরদেহ নিয়ে গেছেন।
কাজিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহরাব হোসেন বলেন, শিক্ষিকার মরদেহ নিয়ে বিদ্যালয়ে অবস্থানের খবরে ঘটনাস্থলে যাই। গিয়ে প্রধান শিক্ষক ও বিদ্যালয়ের সভাপতির সঙ্গে কথা বলি। তারাও টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তারা বলেছেন আগামী তিন দিনের মধ্যে চার লাখ টাকা ফেরত দেবেন।
তিনি আরও বলেন, মৃত ওই শিক্ষিকার নিয়োগের কোনো কাগজপত্রই দেখাতে পারেননি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। পরবর্তীতে কাগজপত্র দেখে আমরা মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করব। তারাই যাবতীয় ব্যবস্থা নেবেন।
শুভ কুমার ঘোষ/এএএ