উত্তরা গণভবন যেন এক ফুলের রাজ্য, ঘুরতে এসে মুগ্ধ দর্শনার্থীরা

নাটোরের দিঘাপতিয়া রাজবাড়ি বা উত্তরা গণভবন। যা ঢাকার বাইরে প্রধানমন্ত্রীর একমাত্র বাসভবন। অসাধারণ স্থাপত্যশৈলির কারণে দেশ-বিদেশের পর্যটকের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু এটি। গণভবনের প্রতিটি আঙ্গিনায় বর্তমানে দেখা মিলছে বাহারী জাতের নানা রঙের ফুলের। চারদিকে সবুজের সমারোহ ও সেই সঙ্গে পাখিদের কলতানে মুখরিত পরিবেশে এসে মুগ্ধ হচ্ছেন দর্শনার্থীরা। নানা প্রজাতির ফুল জানান দিচ্ছে ঋতুরাজ বসন্ত চলে এসেছে।
সম্প্রতি উত্তরা গণভবনে গিয়ে দেখা যায়, মূল ফটকে ঢুকতেই দর্শনার্থীদের স্বাগত জানাচ্ছে দুইদিকে সারিবদ্ধ গাঁদা ফুলগুলো। ভেতরে ঢুকে ঘুরতে ঘুরতে দেখা গেল ফুলের রানী গোলাপ, বিভিন্ন প্রজাতির গাদা, নয়নতারা, সিলভিয়া, পিটুনিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, জিনিয়াসহ ২২ প্রজাতির ফুল। বিভিন্ন রংয়ের এসব ফুলের সৌন্দর্যে বড়দের পাশাপাশি মুগ্ধ হচ্ছে শিশুরাও। ফুলের পাশাপাশি পাখিদের কলতানে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে চারিদিকে। বিভিন্ন প্রজাতির এসব ফুলের সঙ্গে ছবি তুলছেন আগত দর্শনার্থীরা।

নাটোর শহরের বড়-হড়িশপুর এলাকার বাসিন্দা নাজমুল হাসান বলেন, গেট থেকে শুরু করে ডানে-বায়ে, মূল ভবনের সামনে, ইতালিয়ান গার্ডেনে শুধু ফুল আর ফুল। ফুলের সমারোহ মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা দর্শনার্থীরা মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করছেন ফুল আর নান্দনিক স্থাপনার অপার সৌন্দর্য।
রিফাত মাহমুদ নামে আরেকজন বলেন, হাজার হাজার ফুলে সুসজ্জিত গণভবনের বর্তমান রূপ তার আভিজাত্যকে আরো বেশি বাড়িয়ে দিয়েছে। যা মন ভালো করার জন্য বেশ কার্যকরী।
দিনাজপুরে থেকে সস্ত্রীক ঘুরতে এসেছেন অর্ণব কুমার সাহা। তিনি বলেন, উত্তরা গণভবনের অনেক নাম শুনেছি। অনেক দিনের ইচ্ছেও ছিল এখানে আসব। আজ এসে ঘুরে দেখলাম। এতোদিন যেমন শুনেছি, বাস্তবে তার চেয়েও সুন্দর গণভবন। শীতকাল হওয়ার কারণে গণভবনের স্থাপত্য শৈলীর পাশাপাশি বাহারী ফুলের দেখা পেয়েছি। ফুল যেন পুরো গণভবনের সৌন্দর্যকেই বাড়িয়ে দিয়েছে।

জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভূঁঞা বলেন, এ বছর উত্তরা গণভবনে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ২৫ হাজার ফুল গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সব গাছে ফুল ফোটায় ঐতিহাসিক স্থাপনাটির নান্দনিক সৌন্দর্য বেড়ে গেছে বহুগুণ। উত্তরা গণভবন এখন পর্যটনের অন্যতম কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এখানে এসে দর্শনার্থীরা নির্মল আনন্দ উপভোগ করতে পারছেন।
প্রসঙ্গত, ১৭৩৪ সালে দেওয়ান দয়ারাম রায় গড়ে তোলেন দিঘাপাতিয়া রাজবাড়ি। ১৮৯৭ সালের গ্রেট এশিয়ান ভূমিকম্পে রাজবাড়িটির ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে ১২ বছর ধরে বিদেশি প্রকৌশলী ও চিত্রশিল্পীদের পরামর্শে ৪১ একর জমির ওপর রাজবাড়িটি পুনরায় প্রতিষ্ঠা করা হয়। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দিঘাপতিয়া রাজবাড়িকে উত্তরা গণভবন হিসাবে ঘোষণা করেন। এরপর বেশ কয়েকবার মন্ত্রী পরিষদের বৈঠকও হয় এখানে।
গোলাম রাব্বানী/আরকে