আ.লীগে বিভক্তির সুবিধা নিতে চায় জাপা প্রার্থী

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রতিটি এলাকায় জমে উঠেছে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা। সর্বত্রই এখন ভোট উৎসবের আমেজ। পোস্টারে-ব্যানারে ছেয়ে গেছে রাস্তাঘাট, অলিগলি। সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সরকারি ছুটির দিনেও গণসংযোগে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন মেয়র-কাউন্সিলর প্রার্থীরা।
এবারের সিটি নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলেও মেয়র পদে লড়ছেন পাঁচ প্রার্থী। আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক না থাকায় দলটির চারজন নেতা মেয়র পদে অংশ নিয়েছেন। তাদের তিনজনই জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। এ কারণে ভোটের মাঠে দেখা দিয়েছে ত্রিমুখী শক্ত লড়াইয়ের আভাস। তবে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী সবাই। আওয়ামী লীগের এই বিভক্তির সুযোগ কাজে লাগিয়ে জয় পাওয়ার আশায় গণসংযোগ করে যাচ্ছেন এ নির্বাচনে একমাত্র দলীয় প্রতীক লাঙ্গলের জাতীয় পার্টির প্রার্থী।
তবে ভোটাররা বলছেন, আশ্বাসে বিশ্বাস নয়, যোগ্য প্রার্থী দেখেই দিবেন ভোট। নাগরিক সমস্যা সমাধান ও নগরের উন্নয়নকে যিনি এগিয়ে নিতে পারবেন- এমন প্রার্থীকে বেছে নিতে চান তারা। শম্ভুগঞ্জ এলাকার ভোটার সাইদুল ইসলাম বলেন, শহরের সবচেয়ে বড় ভোগান্তি কারণ যানজট। পেশাগত কাজে বাড়ি থেকে পাটগুদাম এলাকায় হয়ে টাউনহল যেতে হয়। ২০ মিনিটের পথ দেড় ঘণ্টা লেগে যায়। সড়কে কোনো শৃঙ্খলা নেই। যিনি এ ভোগান্তি দূর করতে পারবেন তাকেই ভোট দেব।
সানকিপাড়া এলাকার বাসিন্দা হোসাইন বাবু বলেন, সাবেক মেয়র টিটুর সবচেয়ে বড় গুণ হচ্ছে তিনি যে কাউকেই কাছে টেনে নিতে পারেন এবং যে কোনো লোক তার কাছে সহজেই যেতে পারেন। যোগ্য প্রার্থী হিসেবে তার ধারেকাছেও অন্যরা নেই। তিনি অনেক কাজ করেছেন এবং অনেকগুলো চলমান আছে। সিটি মেয়র হিসেবে তার বিকল্প নেই।
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারণার চতুর্থ দিনে দুপুর থেকে প্রচারণায় নামেন প্রার্থীরা। মেয়রপ্রার্থী ইকরামুল হক টিটু নগরীর কালীবাড়ি এলাকা, সাদেকুল হক খান মিল্কী টজু গাঙ্গিনারপাড় এলাকা এবং এহতেশামুল আলম কলেজ রোড, চায়না মোড়, চর ঈশ্বরদিয়া এলাকায় গণসংযোগ করেছেন। এ সময় নানা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের মন জয় করার চেষ্টা করেন তারা।
ঘড়ি প্রতীকের মেয়র প্রার্থী ইকরামুল হক টিটু বলেন, সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে আমার নিবিড় সম্পর্ক। সেই সম্পর্ক থেকেই তারা আমাকেই বেছে নেবে বলে বিশ্বাস করি।
ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী এহতেশামুল আলম বলেন, বেকার যুবকদের জন্য আমি কাজ করতে চাই। সিটিতে যে সমস্ত খাস জমি রয়েছে ওই সমস্ত স্থানে কুটির শিল্পের ব্যবস্থা করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করব।
হাতি প্রতীকের প্রার্থী সাদিকুল হক খান মিল্পী বলেন, পরিচ্ছন্ন ও যানজটমুক্ত নগরী গড়তে আমি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমি জয়ী হলে সুন্দর একটি নগরী গড়ে তুলব। সেজন্য নগরবাসী আমাকেই বেছে নেবেন বলে আমি আশাবাদী।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দুটি বলয় থাকায় টিটুর বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়ে আলোচনায় রয়েছেন এহতেশামুল ও টজু। টিটুকে ঠেকাতে তারা দুইজনই স্থানীয় সংসদ সদস্য মোহিত উর রহমান শান্তর সমর্থনের আশায় আছেন। তবে এমপি শান্ত এখনো প্রকাশ্যে কাউকে সমর্থন না দিলেও মেয়র প্রার্থী টজু দাবি করেছেন এমপি শান্তর সমর্থন তার প্রতি রয়েছে।
এদিকে আওয়ামী লীগের এই বিভক্তিকে কেন্দ্র করে সুবিধা পাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী শহীদুল ইসলাম স্বপন মন্ডল। গতকাল তিনি বাঘমারা, ভাটিকাশর, চরপাড়া মোড়, বাড়েরা এলাকায় গণসংযোগ করেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মধ্যে ভোট ভাগাভাগি হবে। রওশন এরশাদ এখানে পরপর দুই টার্ম এমপি ছিলেন তাই জাতীয় পার্টির বড় ভোট ব্যাংক রয়েছে। এতে আমিই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। আমি নির্বাচিত হতে পারলে গিঞ্জি শহর থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে উপশহর করব এবং জনগণকে সঙ্গে নিয়ে উন্নয়ন অব্যাহত রাখব।
ময়মনসিংহ সিটি নির্বাচনে আগামী ৯ মার্চ ইভিএমে ১২৮ কেন্দ্রে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৪৯০ জন ভোটার। মেয়র পদে পাঁচ প্রার্থী ছাড়াও নগরের ৩৩টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৪৯ এবং ১১টি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে প্রার্থী আছেন ৬৯ জন। নগরীর ১১ নম্বর ওয়ার্ডে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ায় এই পদে ভোট হবে ৩২টি ওয়ার্ডে।
উবায়দুল হক/এএএ