নাটোরে আবাদি জমিতে পুকুর, জলাবদ্ধতার শঙ্কায় কৃষকদের মানববন্ধন

নাটোরে তিন ও চার ফসলি জমিতে পুকুর খনন নিষিদ্ধ থাকলেও জেলার গুরুদাসপুর উপজেলার মধ্য চড়পাড়া বিলের বর্ষার পানি নামার স্থানে খনন করা হচ্ছে পুকুর। এমনিতেই গত কয়েক বছরে জেলায় পুকুর খননের কারণে হাজার হাজার হেক্টর আবাদি জমির পরিমাণ কমেছে। এ ছাড়া একদিকে স্থানীয় প্রভাবশালীরা বিলের একটি ক্যানাল বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে, পানি নামার স্থানে পুকুর খননের কারণে জলাবদ্ধতা বেড়ে যাবে। এতে বিলের প্রায় ৩০০ একর জমিতে নতুন করে এক ফসলের বেশি আবাদ করা যাবে না।
কৃষকদের অভিযোগ, প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই চলছে অবৈধ পুকুর খননের কাজ। সাময়িক বেশি লাভের আশায় অনেকে পুকুর খননের দিকে ঝুঁকছে। কিন্তু এর ফলে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়ে তিন ফসলি জমি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। তবে উপজেলা প্রশাসনের দাবি, তারা এ বিষয়ে কোনো অনুমতি দেননি।
সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে গুরুদাসপুর উপজেলার মধ্য চড়পাড়া গ্রামের অর্ধশতাধিক কৃষক তিন ফসলি জমি রক্ষার দাবিতে খননের কাজ চলা পুকুরের সামনে মানববন্ধন করেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মধ্য চড়পাড়া বিলে সিমেন্টের খুঁটি পুঁতে বিশাল জায়গা জুড়ে পুকুর খননের জন্য সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেখানে এক অংশে ইতিমধ্যে পুকুর খননের কাজ শুরু হয়েছে। বাকি অংশে খননের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া ওই গ্রামের কৃষক আব্দুল খালেক ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিলের মধ্যখানে এতো বড় বড় পুকুর খনন করলে বর্ষার সময় বিলের পানি বের হতে পারবে না। ফলে আশপাশের সকল জমি তলিয়ে যাবে। ফলে, এসব জমিতে আর এক ফসলের বেশি আবাদ করা যাবে না।
কৃষক আব্দুস সালাম বলেন, এ বিলে বছরে রসুন, পাট ও ধান উৎপাদন করা হয়। এখানে পুকুর খনন করা হলে বর্ষার পানি নামতে দেরি হবে। যার ফলে রসুন ও পাট উৎপাদন আর সম্ভব হবে না। শুধু আমন ধান ছাড়া আর কিছু হবে না এখানে।

কৃষক ফজলুল বারী আনছারী বলেন, উপজেলা ও জেলার বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে এই বিলে পুকুর খনন বন্ধের দাবি জানিয়ে আবেদন করেছি। কিন্তু কোনো প্রতিকার পায়নি। পুকুর খননকারী প্রভাবশালীরা প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই তিন ফসলি জমিতে পুকুর খনন করে। আমাদের সাধারণ মানুষের তো কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।
পুকুর খননকৃত জমির মালিক আফসার আলী বলেন, সকল নিয়মকানুন মেনেই পুকুর খনন করা হচ্ছে। আমরা বেশ কয়েকজন একসঙ্গে জমিতে পুকুর খনন করতে এক ভাটা ব্যবসায়ীর সঙ্গে চুক্তি করেছি।
এ বিষয়ে সোমবার বিকেলে জানতে চাইলে গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সালমা আক্তার বলেন, সেখানে পুকুর খননের অনুমতি দেওয়া হয়নি। নিয়ম ভঙ্গ করে কোথাও পুকুর খননের সুযোগ নেই। প্রশাসনের নাম ব্যবহার করে সরকারি অফিসের কেউ যদি অবৈধ অর্থ নেয় তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
গোলাম রাব্বানী/এএএ