সাত উপজেলার চারটিতেই নেই প্রাণিসম্পদ দপ্তর-ভেটেরিনারি হাসপাতাল

বান্দরবানের সাতটি উপজেলার মধ্যে চারটিতেই নেই উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল। আর বাকি তিন উপজেলায়ও জনবল সংকটে ঝিমিয়ে পড়েছে চিকিৎসাসেবা। ১০ জনের পদ থাকলেও ২-৩ জন দিয়ে ধুঁকে ধুঁকে চলছে কার্যক্রম। গবাদিপশু ও হাসঁ-মুরগির চিকিৎসা দিচ্ছেন অনেকটা অপ্রশিক্ষিত উপজেলা উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা।
জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের দেওয়া তথ্যমতে, জেলা সদরসহ সাতটি উপজেলায় মোট গবাদিপশুর অনিবন্ধিত খামারের সংখ্যা ৪ হাজার ৩৩৩টি এবং নিবন্ধিত খামারের সংখ্যা ১৫টি। আর হাঁস-মুরগির অনিবন্ধিত খামারের সংখ্যা ৪২০টি এবং নিবন্ধিত খামারের সংখ্যা ১৩টি।
এদিকে প্রতি বছর জেলা সদরসহ সাতটি উপজেলায় খামারিদের প্রশিক্ষণের জন্য সরকারিভাবে উপজেলা প্রতি ২০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়, যা খুবই অপ্রতুল। ফলে যেটুকু বরাদ্দ আসে তা দিয়ে স্থানীয় মাংস ব্যবসায়ীদের মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণের প্রশিক্ষণ এবং খামারিদের কাঁচা ঘাস চাষের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।
জেলা ভেটেরিনারি হাসপাতালে গবাদিপশুর চিকিৎসাসেবা নিতে আশা শীলা রানি ঢাকা পোস্টকে বলেন, রোগাক্রান্ত পশু নিয়ে এলে হাসপাতালের লোকজন চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। তবে লোকবল সংকটের কারণে আমরা পর্যাপ্ত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।
এ বিষয়ে বান্দরবান জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. নাছির ঢাকা পোস্টকে বলেন, পশুচিকিৎসক বা সার্জন না থাকায় আমরাই গবাদিপশুর বিভিন্ন রোগবালাইয়ের টিকা এবং ওষুধ দিয়ে থাকি। কোনো বিষয়ে না বুঝলে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আমাদের বুঝিয়ে দেন।
জেলা ভেটেরিনারি কর্মকর্তা এবং জেলা কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্রের উপ-পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ডা. পলাশ কান্তি চাকমা ঢাকা পোস্টকে জানান, বান্দরবানের প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালগুলোতে লোকবলের সংকট রয়েছে। জেলা কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্রে ঊর্ধ্বতন তিনটি পদই খালি। এ ছাড়া নেই অফিস সহায়কও। শুধু মাঠ পর্যায়ে কয়েকজন আছে। শূন্য পদগুলো পূরণ হলে আরও ভালোভাবে সেবা দেওয়া সম্ভব হত।
সার্বিক বিষয়ে বান্দরবান জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জুলহাস আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, জেলায় সাতটি উপজেলার মধ্যে রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় কোনো উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল নেই। উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে সাময়িকভাবে চিকিৎসাসেবা চালিয়ে যাচ্ছি।

জনবল সংকটের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, চারটি উপজেলায় কোনো কর্মকর্তা নেই। শুধু তিনটি উপজেলায় ভেটেরিনারি সার্জন রয়েছে যাদের দিয়ে চিকিৎসাসেবা চলছে। অনেক ক্ষেত্রে সার্জনের কাজ উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা দিয়ে করতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, সমতল জেলায় এলইডিপি প্রকল্পের আওতায় ভ্রাম্যমাণ ভেটেরিনারি ক্লিনিক রয়েছে যার মাধ্যমে সার্বিক সেবা কৃষকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়। কিন্তু পার্বত্য বান্দরবানে এ ধরনের কোনো প্রকল্প না থাকায় প্রত্যন্ত এলাকার কৃষকদের সেবাটা সেভাবে পৌঁছানো সম্ভব হয় না।
তাই এ ধরনের প্রকল্প গ্রহণে সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতা বৃদ্ধির প্রতি জোর দেন এই কর্মকর্তা।
এমজেইউ