নিজের আগের পদে স্ত্রীকে বসাতে চান এমপি আনিছুজ্জামান
![নিজের আগের পদে স্ত্রীকে বসাতে চান এমপি আনিছুজ্জামান](https://cdn.dhakapost.com/media/imgAll/BG/2024February/mymensing01-20240228223518.jpg)
পৌর মেয়রের পদ থেকে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) আসন থেকে সংসদ সদস্য (এমপি) নির্বাচিত হন এবিএম আনিছুজ্জামান। নিজে এমপি হওয়ার পর তিনি মেয়রের শূন্য পদে উপনির্বাচনে স্ত্রী শামীমা আক্তারকে বসাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। স্ত্রীকে মেয়র প্রার্থী বানিয়ে প্রকাশ্যে ভোট চাইছেন।
অভিযোগ রয়েছে, এমপি আনিছুজ্জামান সংবর্ধনা, ধর্মীয় সভা ও মসজিদসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে স্ত্রীর পক্ষে প্রকাশ্যে শুধু ভোটই চাইছেন না, প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র প্রার্থীসহ তার কর্মী-সমর্থকদের দেওয়া হচ্ছে হুমকি। এসব ঘটনায় এমপি আনিছের বিরুদ্ধে রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ নির্বাচন কমিশনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আমিনুল ইসলাম আমিন সরকার।
আগামী ৯ মার্চ ত্রিশাল পৌরসভায় মেয়র পদে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে মাঠে রয়েছেন ত্রিশাল পৌরসভার প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান মরহুম আব্দুর রশিদ চেয়ারম্যানের ছেলে মো. আমিনুল ইসলাম (আমিন সরকার), নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য আনিছুজ্জামানের স্ত্রী শামীমা আক্তার এবং সাবেক কাউন্সিলর মো. নূরুল হুদা শিবলু।
অভিযোগ উঠেছে, এবিএম আনিছুজ্জামান নিজে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর তার স্ত্রী শামীমা আক্তারকেও ত্রিশাল পৌরসভার মেয়র বানাতে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে স্ত্রীর পক্ষে ভোট চাইছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র প্রার্থী আমিনুল ইসলামসহ তার কর্মী-সমর্থকদের হুমকিও দেওয়া হচ্ছে প্রকাশ্যে। আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনায় গত ২২ ও ২৫ ফেব্রুয়ারি রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে এমপি আনিছুজ্জামানের বিরুদ্ধে লিখিতভাবে অভিযোগ করেন আমিনুল ইসলাম। কিন্তু রিটার্নিং কর্মকর্তা কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় প্রতিকার পেতে বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন তিনি।
অভিযোগে বলা হয়, আচরণবিধি লঙ্ঘন করে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডে মারকাজুত তাহফিজ ওয়াল কুবরা মডেল মাদ্রাসার উদ্যোগে আয়োজিত সংবর্ধনা ও ওয়াজ মাহফিলে এমপি আনিছুজ্জামান তার স্ত্রীর পক্ষে ভোট প্রার্থনা করেন। গত ২০ ফেব্রুয়ারি গোহাটা মাঠে ইত্তেফাকুল উলামার আয়োজনে ধর্মীয় সভায় আমিন সরকারের পরিবারের বিরুদ্ধে অশালীন, কুরুচিপূর্ণ ও মানহানিকর বক্তব্য দেওয়ার পাশাপাশি তার স্ত্রীর পক্ষে ভোট প্রার্থনা করেন। ওই মাহফিল থেকে ফেরার পথে আমিন সরকারের নির্বাচনী কর্মী মোশারফকে ‘৯ তারিখের নির্বাচনের পর তুই ত্রিশাল থাহস কেমনে দেখবাম’ বলে হুমকি দেন এমপি আনিছুজ্জামান। এছাড়াও নির্বাচনী পথসভায় অংশ নিয়ে স্ত্রীর পক্ষে প্রভাব বিস্তার করে ভোট চাইছেন এবং ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করছেন। মিথ্যা মামলা ও হামলার ভয়ে নির্বাচন পরিচালনার কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হয়।
মেয়র প্রার্থী আমিনুল ইসলাম বলেন, কয়েক দিন আগে আমার এক নির্বাচনী অফিসে এমপির ছোট ভাই আরিফ দেশীয় অস্ত্র, লাঠিসোঁঠাসহ লোকজন নিয়ে উপস্থিত হয়ে গালাগাল করে হুমকি দেয়। নির্বাচনী অফিস কক্ষটিতে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয় এবং পরে ওই অফিস দখল করে তার স্ত্রীর নির্বাচনী প্রচার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি যাতে এভাবে ভোট চাইতে ও আমার কর্মী-সমর্থকসহ সাধারণ ভোটারদের ভয়ভীতি দেখাতে না পারেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে তার প্রতিকার চেয়েছি।
তবে সংসদ সদস্য এবিএম আনিছুজ্জামান বলেন, এ সকল অভিযোগ সব মিথ্যা। কেউ প্রমাণ দিতে পারলে এমপি পদ থেকে পদত্যাগ করে চলে যাব।
ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার জুয়েল আহমেদ বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে প্রচার-প্রচারণার কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে সংসদ সদস্যকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।
রিটার্নিং কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন চৌধুরী জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে।
উবায়দুল হক/আরএআর