সেই মেডিকেল শিক্ষককে নিয়ে যা বললেন তার বাসার দারোয়ান
সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ রোডে (বিএ কলেজ রোড) অবস্থিত প্রফেসরস গার্ডেন। সাত তলা ওই ভবনের তৃতীয় তলাতেই বাবা-মায়ের সঙ্গে বসবাস সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের শিক্ষক ডা. রায়হান শরীফের। সেখান থেকেই প্রতিদিন কর্মস্থলে যান তিনি। যাওয়ার সময় লিফট থেকে নেমেই দেখা হয় ভবনটির নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা দারোয়ান গোলাম মোস্তফার সঙ্গে। দেখা হওয়া মাত্রই তাকে সালাম দিতেন এই শিক্ষক। হেসে কথা বলতেন।
প্রতিদিনের মতো গতকাল সোমবার (৪ মার্চ) বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার দিকে নিচে নামেন ডা. রায়হান শরীফ। নেমে বের হতেই দেখা হয় গোলাম মোস্তফার সঙ্গে। এ সময় দারোয়ান গোলাম মোস্তফাকে সালাম দেন ওই শিক্ষক। এরপর রিকশা নিয়ে চলে যান কর্মস্থলে।
ওই ভবনের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা শহরের শহীদগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা গোলাম মোস্তফা ঢাকা পোস্টকে এমনটাই জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, সাত তলা এই ভবনের তৃতীয় তলায় বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকেন ডা. রায়হান শরীফ স্যার। প্রতিদিন কাজে যাওয়ার জন্য নেমে দেখা হওয়া মাত্রই আমাকে সালাম দেন। গতকালও এর ব্যতিক্রম হয়নি। নেমে সালাম দিয়ে রিকশা ডেকে চলে গেলেন। এরপর সন্ধ্যায় শুনলাম ফেইবুকে নাকি দেখাচ্ছে এই ঘটনা (শিক্ষার্থীকে গুলি করা) ঘটেছে।
গোলাম মোস্তফা বলেন, স্যার সব সময় দেখা হলেই হেসে সুন্দর করে কথা বলতেন। কালকেও তাই করেছেন। প্রায় সাত বছর আগে নির্মাণ হওয়া এই ভবনটিতে আমি প্রায় পাঁচ বছর হলো কাজ করছি। স্যারের কখনো কোনো খারাপ কিছু দেখিনি। এমন ঘটনা হতে পারে বিশ্বাসই হচ্ছে না।
তিনি বলেন, বড় স্যার (রায়হান শরীফের বাবা) ও ম্যাডামও খুব ভালো মানুষ। তাদের ব্যবহারও খুব ভালো। স্যার সরকারি কলেজের প্রিন্সিপাল ছিলেন। স্যার ও ম্যাডাম ঢাকাতে আছেন। ম্যাডাম গিয়েছেন প্রায় এক সপ্তাহ আগে আর স্যার গিয়েছেন ৩-৪ দিন হলো। এই কয়েক দিন বাসায় রায়হান স্যার একাই ছিলেন। রায়হান স্যারের বোন বিদেশ থাকেন, তারা এসেছিলেন। তাদের বিদায় দিতেই স্যার-ম্যাডাম ঢাকা গিয়েছেন।
গোলাম মোস্তফা বলেন, আমি যতটুকু জানি স্যারদের গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে। কিন্তু কাজিপুরের কোথায় সেটা জানি না। এছাড়াও শুনেছি রায়হান স্যার বিয়ে করেছিলেন। এরপর কী হয়েছে জানি না।
আরও পড়ুন
ডা. রায়হান শরীফের ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হননি বাড়ির আশপাশের কোনো দোকানদারসহ কেউই। তার ব্যাপারে কথা বলার জন্য পৌরসভার স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুরুল হক ও তার বাবা সাবেক অধ্যাপক মো. আব্দুর রাজ্জাকের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তারা রিসিভ করেননি।
ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে উল্লেখ করে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম হীরা ঢাকা পোস্টকে বলেন, এমন ঘটনা নজিরবিহীন। এটা আমাদের চিকিৎসক ও জাতির জন্য লজ্জাজনক।
তিনি বলেন, আমরা গতকাল ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে দেখে এসেছি। আমরা চাই তিনি দোষী হলে তার যথাযথ শাস্তি হোক ও এর সঙ্গে যদি আরও কেউ জড়িত থাকে তাহলে তাকেও শাস্তির আওতায় আনা হোক।
প্রসঙ্গত, গতকাল সোমবার (৪ মার্চ) বিকেলে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী আরাফাত আমিন তমালকে গুলি করেন কলেজের শিক্ষক ডা. রায়হান শরীফ। এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষকের বিচার চেয়ে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এরপর সন্ধ্যায় তাকে আটক করে থানায় নেয় পুলিশ। এ সময় তার কাছ থেকে একটি পিস্তল উদ্ধার করা হয়। পরে রাতে তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা। পাশাপাশি অবৈধ অস্ত্র রাখার দায়ে অস্ত্র আইনে আরেকটি মামলা হয় তার বিরুদ্ধে। সেসকল মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে তাকে।
এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। কমিটিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। তদন্ত করতে কলেজে এসেছেন তারা। কথা বলেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীসহ অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে।
শুভ কুমার ঘোষ/আরএআর