রাজনীতিতে নারী নেতৃত্ব এগিয়ে নিতে অর্থ বরাদ্দের দাবি

বাংলাদেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী হলেও রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ পর্যাপ্ত নয়। কোনো দলই এখন পর্যন্ত সকল কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারেনি। যদিও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী এর বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
মঙ্গলবার (৫ মার্চ) বিকেলে রংপুর নগরীর সিক্স সিজন্স কনভেনশন হলে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে ‘নারীর সম-অধিকার; উন্নয়নের জন্য হোক নারীর প্রতি বিনিয়োগ’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় রাজনৈতিক দলে নারী নেতৃত্ব আরও এগিয়ে নিতে আলাদা করে দলীয় অথবা রাষ্ট্রীয় তহবিল বরাদ্দের দাবি জানিয়েছেন বক্তারা।
সভায় আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি নাগরিক সমাজ, সাংবাদিক ও মাল্টি পার্টি অ্যাডভোকেসি ফোরাম-এমএএফ’র প্রতিনিধিরা অংশ নেন। এ সময় তারা বলেন, শুধু অর্থ বরাদ্দই নয়, নেতৃত্বের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণও জরুরি।
আলোচকরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের ওপর। নেতৃবৃন্দ বলেন, অসচ্ছল কিন্তু যোগ্যতা সম্পন্ন নারী নেতারা বর্তমান সময়ে নির্বাচন করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। দলের মূল কমিটিতেও তারা উপেক্ষিত থাকেন। ফলে প্রভাবশালীদের সঙ্গে টিকতে না পেরে অধিকাংশ নারীই অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পিছিয়ে পড়ছেন। এজন্য তাদের সুরক্ষা ও নেতৃত্ব বিকাশে নিজ নিজ দলগুলোকে দায়িত্ব নেওয়ার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বলেন, গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজেরও দায়িত্ব রয়েছে সকল যোগ্য নারী নেতৃবৃন্দের পক্ষে কথা বলা এবং সমাজ ও দলের কাছে তার ইতিবাচক ইমেজকে প্রচার করা। এ জন্য বেশকিছু সুপারিশ তুলে ধরে তারা বলেন, সমবায় ভিত্তিক অর্থনৈতিক সচ্ছলতা আনয়নের ক্ষেত্রে কো-অপারেটিভ সোসাইটি গড়ে তোলা এবং প্রতিটি রাজনৈতিক দলে ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করে রাজনীতিতে নারীর অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়তা করা যেতে পারে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাজেদ আলী বাবুল, মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শাহ্ নবীউল্লাহ পান্না, মহানগর জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি রেজেকা সুলতানা ফেন্সি, জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব মো. আব্দুর রাজ্জাক, মহানগর জাতীয় পার্টির সহ-সভাপতি জাহেদুল ইসলাম, মাল্টিপার্টি অ্যাডভোকেসি ফোরামের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য সাহিদা রহমান জ্যোৎস্না, মানবাধিকার ও পরিবেশ আন্দোলন বাংলাদেশের মুখ্য নির্বাহী এ এ এম মুনির চৌধুরী।
এ ছাড়া সুশীল সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় কন্যা শিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সভাপতি খন্দকার ফখরুল আনাম বেঞ্জ, নারী নেত্রী ও সংগঠক ফাতেমা ইয়াসমিন ইরা হক, সিনিয়র সাংবাদিক আব্দুর রহমান মিন্টু, রংপুর প্রেসক্লাবের সাহিত্য-সাংস্কৃতিক সম্পাদক ফরহাদুজ্জামান ফারুক প্রমুখ।
ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল রংপুরের জ্যেষ্ঠ আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক মো. আলী ইজাদ জানান, ইউএসএআইডি’র অর্থায়নে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে ‘নারীর জয়ে, সবার জয়’ ক্যাম্পেইন পরিচালনা করছে। এই ক্যাম্পেইনের আওতায় সারা দেশে ২০ হাজারের বেশি নারী নেতাদের সমন্বয়ে একটি ক্রমবর্ধমান বহুদলীয় নেটওয়ার্ক আছে, যা এখন পর্যন্ত ৬২১টি তৃণমূল কমিটিতে ৬ হাজার ৮২৯ জন নারীকে অন্তর্ভুক্ত হতে সহায়তা করেছে।
স্ট্রেনদেনিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ (এসপিএল) প্রকল্পের আওতায় রাজনৈতিক দলের মধ্যে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন বিষয়ক উপ-কমিটি নিজ নিজ দলে বিভিন্ন ইউনিটে কার্যকর। এ ছাড়া নিজ দলের পাশাপাশি অন্য দলের যোগ্য নারীদেরও নেতৃত্ব বিকাশে মাল্টিপার্টি অ্যাডভোকেসি ফোরামের সহায়তায় অ্যাডভোকেসি কর্মসূচি পালন করছে।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমজেইউ