রাস্তার মাঝে বৈদ্যুতিক খুঁটি রেখেই কাজ সম্পন্ন, দুর্ঘটনার আশঙ্কা

রাস্তার মধ্যবর্তী স্থানে সাতটি বৈদ্যুতিক খুঁটি রেখেই সম্পন্ন হয়েছে সড়ক উন্নয়নের কাজ। এতে চলাচলে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে যানবাহন ও পথচারীরা। বাড়ছে দুর্ঘটনার আশঙ্কা। বিষয়টি নিয়ে একে অপরের ঘাড়ে দায় চাপাচ্ছে এলজিইডি ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। সম্প্রতি এমনই চিত্র দেখা গেছে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার লাউখোলা-গজনাইপুর ব্রিজের দুই পাশের সড়কে।
সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) জাজিরা উপজেলার অধীনে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় লাউখোলা থেকে গজনাইপুর চরধুপুড়িয়া যাতায়াতের নদীতে নতুন ব্রিজের কাজ শেষ হয় গত বছর। এরপর ব্রিজটির দুই প্রান্তের সড়কের কাজও সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু নির্দেশনা ও বরাদ্দ না থাকায় সড়কের মধ্যবর্তী স্থানে পল্লী বিদ্যুতের ৭ টি খুঁটি থাকলেও তা অপসারণ করা হয়নি। ফলে সড়কের মধ্যবর্তী স্থানে খুঁটি রেখেই সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শেষ করে চলে যায়। এরপর গত বছরের ১১ নভেম্বর লাউখোলা বাজার-গজনাইপুর চরধুপুড়িয়ার ব্রিজটি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। উন্মুক্ত হওয়ার পর এই পথ দিয়ে প্রতিদিন শত শত যানবাহন চলাচল করছে। কিন্তু খুঁটিগুলো মরণ ফাঁদ হওয়া সত্ত্বেও অপসারণের উদ্যোগ নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান।
ফাত্তাহ আল সিয়াম নামে এক স্কুল শিক্ষার্থী ঢাকা পোস্টকে বলে, সড়কের ওপর বৈদ্যুতিক খুঁটি থাকার কারণে স্কুলে যেতে সমস্যা হয়। এই সড়কে চলাচলকারী অটোরিকশাগুলো প্রায় সময়ই খুঁটিগুলোর সঙ্গে দুর্ঘটনার শিকার হয়। ফলে অটোরিকশা বা গাড়িতে চড়ে স্কুলে যেতে ভয় করে।

সুলতান মাদবর নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিদ্যুতের খুঁটি রেখেই কাজ করা হয়েছে। কাজটি করার সময় আমরা বলেছিলাম। কিন্তু ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান আমাদের কথা শোনেনি। আমি নিজেও খুঁটির সঙ্গে আঘাত পেয়ে মাথায় গুরুতর জখম হয়েছি। খুঁটির কারণে এখন প্রায় সময়ই ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটছে। যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কার মধ্যে রয়েছি আমরা।
মিন্টু চৌকিদার ও আব্দুর রাজ্জাক খালাসি পেশায় ভ্যান ও অটোরিকশা চালক। তারা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ব্রিজটি হওয়ায় আমাদের চলাচলে সুবিধা হয়েছে। কিন্তু ব্রিজের পাশেই সড়কের মধ্যে বৈদ্যুতিক খুঁটি থাকায় আমরা সব সময় আতঙ্কে থাকি। বিদ্যুতের খুঁটিগুলো মরণ ফাঁদ। যে কোনো সময় একসঙ্গে কয়েকজনের প্রাণ নিয়ে নিতে পারে এই খুঁটিগুলো।
মুলনা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আমিন হাওলাদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, সড়কের মধ্যে বৈদ্যুতিক খুঁটি থাকায় জনগণের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিষয়টি আমি পল্লী বিদ্যুতের জিএমকে জানিয়েছিলাম। কিন্তু তাদের কোনো উদ্যোগ দেখতে পাইনি।

মুলনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল মাদবর ঢাকা পোস্টকে বলেন, ব্রিজটি নির্মাণের সময় নির্বাচন চলমান ছিল। সড়কের মধ্যবর্তী স্থানে বিদ্যুতের খুঁটি রেখেই কাজ সম্পন্ন করেছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। আমরা তাদেরকে বলেছিলাম, তারা খুঁটিগুলো সরিয়ে নেয়নি। এই কারণে জনগণের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে জাজিরা উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) মো. ইমন মোল্লা ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিদ্যুৎ অফিসে আমরা মৌখিকভাবে জানালে হয় না তারা টাকা চায়। আমাদের টাকা দেওয়ার মত কোনো বরাদ্দ নেই। একটা বিদ্যুতের খুঁটি উঠাতে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা ব্যয় হয়। এত টাকা দিয়ে আপাতত আমরা খুঁটি সরাতে পারব না।
শরীয়তপুরের পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মো. আলতাপ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, সড়কের কাজ করার আগে বা পরে এলজিইডি কিংবা ঠিকাদারদের পক্ষ থেকে খুঁটি সরাতে হবে এমন কোনো লিখিত আবেদন পাইনি। তাই এ বিষয়ে আমার জানা নেই।
সাইফ রুদাদ/এএএ