ফরিদপুরে ৫০০ টাকা কেজিতে গরুর মাংস কিনতে মানুষের ঢল
রমজান উপলক্ষ্যে স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য ৫০০ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস কিনতে মানুষের আগ্রহ বেড়েই চলছে। জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে শহরের আলীপুর মহল্লা এলাকার হাসিবুল হাসান লাবলু সড়ক সংলগ্ন জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের চত্বরে মাংস বিক্রি করা হচ্ছে।
জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এ আয়োজনের শুরু হয়েছে গত রোববার (১৭ মার্চ) থেকে। এরপর থেকে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ছিল শত শত মানুষের ভিড়। বুধবারও (২০ মার্চ) এ ভিড় অব্যাহত থাকবে বলে আশা আয়োজকদের। গরুর মাংস কেনার এই উৎসবে আগের দিনের চেয়ে পরেরদিন ভিড় বাড়তেই থাকে। মানুষের ভিড় সামাল দিতে গরুও বাড়াতে হচ্ছে আয়োজকদের। সকাল ৯টা থেকে শুরু করে যতক্ষণ ক্রেতা থাকছে ততক্ষণই সরবরাহ করা হচ্ছে গরুর মাংস।
রমজান উপলক্ষ্যে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগ বাজার মূল্যের চেয়ে অন্তত ২০০ টাকা কমে ৫০০ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস বিক্রির এ উদ্যোগ হাতে নেয়। এতে একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুই কেজি করে মাংস কেনার সুযোগ পাচ্ছেন। ১৭ মার্চ ১টি গরু, চাহিদা বাড়ায় পরদিন ১৮ মার্চ ৪টি, ১৯ মার্চ ৩টি গরু জবাই দেওয়া হয়। বুধবার(২০ মার্চ) চাহিদা থাকলে আরও গরু জবাই দেওয়া হবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শত শত মানুষ মাংস কেনার জন্য ভিড় করেছেন শহরের আলীপুরের হাসিবুল হাসান লাবলু সড়কের ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় চত্বরে মাংস বিক্রির স্থানে। প্রতিদিন সকাল ৯টার দিকে মাঝারি আকারের একটি গরু জবাই করা হয়। সেই মাংস বিক্রি হয়ে যাওয়ার পর বেলা ১১টার দিকে আরেকটি গরু জবাই করা হয়। এরপর খদ্দেরদের চাহিদা থাকলে আরও একটি জবাই দেওয়া হয়। তার পাশাপাশি আরেকটি গরু ওই চত্বরে জবাই দেওয়ার প্রস্তুত রাখা হয়।
আরও দেখা যায়, আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের চত্বরের সামনে বাঁশ বেঁধে নারী ও পুরুষদের লাইনে দাঁড়ানোর জন্য আলাদা আলাদা সারি করা হয়েছে। উপরে রোদ থেকে রক্ষা পেতে টানিয়ে দেওয়া হয়েছে নীল সাদা রঙের সামিয়ানা। সামনে থেকে দুই ব্যক্তি তাদের চাহিদা অনুযায়ী এক কেজি বা দুই কেজি করে মাংস পলিথিনের ব্যাগে করে ক্রেতাদের হাতে তুলে দিচ্ছেন।
ক্রেতাদের মধ্যে রিকশা চালক, ছোট মুদি দোকানদার, দিনমজুরসহ স্বল্প আয়ের পেশার লোকদের বেশি দেখা যায়।
ফরিদপুর সদর উপজেলার অম্বিকাপুর ইউনিয়নের অম্বিকাপুর গ্রামের বাসিন্দা ভ্রাম্যমাণ ফল বিক্রেতা দোকানি সালাম মুন্সী (৫৫) বলেন, কম টাকায় গরুর গোস্ত কিনতে পারব বলে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। দেড় ঘণ্টা হয়ে গেছে। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই আমার সিরিয়াল আসবে। আজকে দুই কেজি মাংস নিয়ে বাড়ি যাব।
শহরের মধ্য আলীপুর মহল্লার রিকশাচালক আবুল হোসেন (৩৭) বলেন, গতকাল আমি এক কেজি মাংস কিনেছেন। আজ দুই কেজি নিয়ে রোজার সারা মাস অল্প অল্প করে তরকারি ও খিচুড়ি রান্না করে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খাব।
শহরের পূর্ব খাবাসপুর মহল্লার বাসিন্দা সালেহা বেগম (৩৫)। তার বাড়ি ফরিদপুরের সালথা উপজেলায়। তিনি শহরে তিনটি বাসায় কাজ করে দুই মেয়ে এক ছেলে নিয়ে বসবাস করেন। তিনি বলেন, বাজারের চেয়ে একটু হলেও কম দামে গোস্ত পাওয়া যাইতেছে বইলা গোস্ত কিনতে আইছি ছেলেমেয়ে নিয়া খাব। কম দামে মাংস কিনতে পারায় এই রোজার মাসে আমাদের মতো গরিব মানুষের খুবই উপকার হয়েছে। এই উদ্যোগের কারণে আমাদের মত গরিব মানুষ রোজার মধ্যে গরুর মাংস খাওয়ার সুযোগ পাচ্ছি।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক বলেন,এই রমজান মাসে স্বল্প আয়ের খেটে-খাওয়া লোকদের বাজার থেকে অন্তত প্রতি কেজিতে ২০০ টাকা কম দামে মাংস তুলে দিতে পারছি এটা ভেবে ভালো লাগছে। এ উদ্যোগ পুরো রমজান মাস ধরে চলবে।
জহির হোসেন/আরকে