বছর না পেরোতেই চিলাহাটি এক্সপ্রেস কোচের অবস্থা লক্কড়ঝক্কড়

নীলফামারীতে দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কয়েক মাস আগে চীন থেকে আনা নতুন কোচ যুক্ত করে নীলফামারীর ডোমার উপজেলার চিলাহাটি থেকে রাজধানী পর্যন্ত দিনের বেলায় চালু করা হয় চিলাহাটি এক্সপ্রেস ট্রেন। কিন্তু বছর না যেতেই চাকা ক্ষয়ে বাঁকা হয়ে যাওয়া, রানিংয়ে এক্সেল কয়েল স্প্রিং ভেঙে পড়া, রুফ সিলিং খুলে যাওয়াসহ কোচগুলোতে নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে।
যাত্রীরা বলছেন, ট্রেনটি অনেকটাই লক্কড়ঝক্কড় হয়ে পড়েছে। ফলে বিরক্ত তারা। সেই সঙ্গে রেল সংশ্লিষ্টরা যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৪ জুন চিলাহাটি এক্সপ্রেস ট্রেনটি নীলফামারীর চিলাহাটি থেকে ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত চলাচল শুরু করে। ওই দিন ট্রেনটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে চীনের থাংশানের কোম্পানি সিআরআরসি থেকে প্রায় এক বছর আগে এ ট্রেনের কোচগুলো আমদানি করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী এসব কোচের ওয়ারেন্টি দুই বছরের। কিন্তু কোচগুলো ট্রেনে যুক্ত করার পরপরই দেখা দিয়েছে নানা সমস্যা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ট্রেন পরীক্ষক (টিএক্সআর) ঢাকা পোস্টকে বলেন, কোচের চাকা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ক্ষয় হচ্ছে। চলন্ত অবস্থায় ব্রেক প্যাড পড়ে যাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে নতুন কোচের স্প্রিং দুই থেকে তিন বছর পরে ভাঙলেও এসব কোচের এক বছর না যেতেই রানিংয়ে এক্সেল কয়েল স্প্রিং ভেঙে যাচ্ছে। এ ছাড়া প্রাইমারি ডাম্পার অকার্যকর, অস্বাভাবিকভাবে তেল লিকেজ হচ্ছে। দ্রুত পাওয়ার কার গরম হয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এতে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, চিলাহাটি থেকে ছেড়ে আসা চিলাহাটি এক্সপ্রেস ট্রেনের কয়েকটি কোচের দরজা বরাবর ওপরের রুফ সিলিং নিচে নেমে যাচ্ছে। বেশির ভাগ ফ্যানই অচল। এক বছর না যেতেই এ ট্রেন যেন লক্কড়ঝক্কড় বাহনে পরিণত হয়েছে।
চিলাহাটি এক্সপ্রেস ট্রেনের নিয়মিত যাত্রী রাশেদ আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, কোচে পানির ট্যাংক ভরা থাকলেও হ্যান্ড শাওয়ারে ও পানির কলে পানি আসে না। জানালার স্যুট বোল্ট খুলে যায়। বায়ো টয়লেটের সরবরাহ লাইন দিয়ে মল ও নোংরা পানি পড়ে দুর্গন্ধ ছড়ায়। এ অবস্থায় ভোগান্তি নিয়ে অনেকটা বাধ্য হয়েই এই ট্রেনে ভ্রমণ করতে হচ্ছে।
সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার সিঅ্যান্ডডব্লিউ মেশিন শপ সূত্র জানায়, বাংলাদেশ রেলওয়েতে বিজি এমডি-৫২৩ (চায়না-২০২৩) ১০০টি কোচ রেলওয়ের যানবাহন বহরে যুক্ত হয়। এ কোচগুলো নিয়মমাফিক প্রতি এক বছর পরপর মেরামতে আসার কথা থাকলেও চাকার বিভিন্ন ত্রুটির কারণে এক বছরের আগেই বিশেষ রিপেয়ারের প্রয়োজন পড়ছে। এসব কোচ বিভিন্ন সময় সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় মেরামতে এলে চাকা টার্নিংয়ের সময় চাকায় ব্লোহোল বা ক্র্যাক দেখা যায়। স্বাভাবিকভাবে চাকা ৮ মিলিমিটার থেকে ১০ মিলিমিটার টার্নিংয়ের প্রয়োজন হয়। কিন্তু চায়না কোচে ব্লোহোল বা ক্র্যাকের কারণে অনেক বেশি অর্থাৎ ১৫ মিলিমিটার থেকে ২০ মিলিমিটার, কোনো কোনো ক্ষেত্রে তার চেয়েও বেশি টার্নিংয়ের প্রয়োজন হচ্ছে। ফলে চাকার স্থায়িত্বকাল আগের চেয়ে অনেক কমে যাচ্ছে।
রেলওয়ে শ্রমিক ইউনিয়ন সৈয়দপুর কারখানা শাখার সাধারণ সম্পাদক শেখ রোবায়েতুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, চিলাহাটি এক্সপ্রেস ট্রেনের কোচগুলো চীন থেকে এক বছরের কম সময়ে কেনা হয়েছে। এখনই সমস্যা দেখা দিয়েছে। অথচ ইন্দোনেশিয়া ও ভারত থেকে আনা রেলের কোচ গত ছয়-সাত বছর চলছে সমস্যা ছাড়াই।
এ নিয়ে কথা হয় রেলওয়ের যুগ্ম মহাপরিচালক (যান্ত্রিক) তাবাসসুম বিনতে ইসলামের সঙ্গে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ওয়ারেন্টি সময়ে চুক্তি অনুযায়ী দেখভাল করার দায়িত্ব আমদানি করা কোম্পানির। কিন্তু এ সময় ত্রুটি দেখা দিলে বিষয়টি আমাকে বিভাগীয়ভাবে জানানোর কথা। তবে এখনো আমাকে জানানো হয়নি। বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া হবে।
শরিফুল ইসলাম/এএএ