কোনোভাবেই বন্ধ হচ্ছে না মাটি কাটা, ক্ষোভ ঝাড়লেন সংসদ সদস্য
সংসদ নির্বাচনের আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এলাকার কোনো আবাদি জমিতে পুকুর খনন করতে দেওয়া হবে না। কিন্তু নির্বাচনে জয়ী হয়ে নানা নির্দেশনা দেওয়ার পরও বন্ধ হচ্ছে না অবৈধভাবে মাটি কাটা।
এমন অবস্থায় ফসলি জমিতে অবৈধভাবে পুকুর খনন বন্ধে প্রশাসনের অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে ফেসবুক লাইভে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নাটোর-৪ আসনের সংসদ সদস্য ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী।
শুক্রবার (২২ মার্চ) বিকেলে সংসদ সদস্য ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী তার ফেসবুক আইডি থেকে লাইভে এসে বলেন, বিগত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আমি ঘোষণা দিয়েছিলাম- বড়াইগ্রাম-গুরুদাসপুরের মাটি সোনার চেয়ে খাঁটি, এই মাটির একটি টুকরোও আমরা কাটতে দেব না। আমার মা-মাটিকে রক্ষার দায়িত্ব নিয়েছিলাম। কিন্তু বাস্তবে এটাই সত্য যে, হাজারো চেষ্টার পর বড়াইগ্রামের ৯৫ ভাগ মাটি কাটা বন্ধ করতে পারলেও গুরুদাসপুরে তা অনেকটাই বন্ধ করতে পারিনি অদৃশ্য কারণে।
সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, যেখানে হাইকোর্টের নির্দেশ বন্ধ থাকবে, ডিসির নির্দেশ বন্ধ থাকবে, যেখানে প্রশাসনের বন্ধ করার কথা, পুলিশ বাহিনীর বন্ধ করার কথা সেখানে আইন অমান্য করে হাজার হাজার বিঘা জমি, ভুট্টার জমি, ধানের জমি, গমের জমি নষ্ট করে ভূমিদস্যুরা মাটি কেটে নিয়ে ইটের ভাটায় দিচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় সেগুলো বিক্রি করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আগামী প্রজন্মের কৃষকরা আহার যোগাবে যে মাটি থেকে, সেই মাটি নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে। আমি দায়িত্বশীল সবার প্রতি অনুরোধ করছি, আপনারা এগুলো বন্ধ করুন। এগুলো বন্ধ না করলে আমি জনগণকে বলতে বাধ্য হবো পেট্রোল দিয়ে সমস্ত ভেকু মেশিন ও ট্রাক্টর পুড়িয়ে দিতে। মামলা-হামলা যা আছে তা আমি দেখবো বা আমাদের রাষ্ট্র দেখবে। কেননা রাষ্ট্রের সম্পদ এই দস্যুরা দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে নষ্ট করছে। এই সম্পদ আমরা নষ্ট হতে দেব না। ক্ষণিকের লাভের জন্য স্থায়ীভাবে আমি গুরুদাসপুর-বড়াইগ্রামের কৃষকদের ভিক্ষুকে পরিণত করতে পারি না।
সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, ‘আমি ইউএনও-এসিল্যান্ড, ওসি থেকে শুরু করে সকল দায়িত্বশীলদের বলেছি- (মাটি কাটা) বন্ধ করার জন্য। আমার কথা হলো- আইন যদি বাস্তবায়ন করতে না পারেন তাহলে আপনারা দায়িত্ব ছেড়ে দেন, অন্য জায়গায় ট্রান্সফার নিয়ে চলে যান, এখানে তো আপনাদের কাজ নাই। আপনাদের কাজ হলো- আইনের বাস্তবায়ন করা। আইনের বাস্তবায়ন করতে না পারলে থাকার দরকার কি এখানে।’
এমপি বলেন, জনগণ যদি ক্ষিপ্ত হয়ে যায় তাহলে পুলিশ বাহিনী, সিভিল প্রশাসন বা আমি নিজেও তাদের দমন করতে পারব না। জনগণ বিক্ষুব্ধ হলে একাত্তরে দেখিয়েছে কিভাবে দেশকে স্বাধীন করতে হয়।
সংসদ সদস্যর এমন অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সালমা আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘এমপি স্যার কেন এটা বলেছেন সেটা উনিই ব্যাখ্যা করতে পারবেন।’
সালমা আক্তার বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি, এখন এসিল্যান্ড নেই, আমি একা আছি। যেখান থেকে খবর পাচ্ছি সেখানে-ই যাচ্ছি। এগুলো বন্ধে সকলের সহযোগিতা দরকার। আমি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বারদের বলেছি, গ্রাম পুলিশদের বলেছি। সবাই যদি সহযোগিতা করে তাহলে আমার মনে হয়, মাটি কাটা আমরা বন্ধ করতে পারব।
গোলাম রাব্বানী/টিএম