অভিযানে গিয়ে পুলিশের ‘হামলা’র শিকার মৎস্য কর্মকর্তারা
বরিশালের হিজলা উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তরের আভিযানিক দলের ওপর হামলা চালিয়েছে স্থানীয় হরিনাথপুর পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা। বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) বিকেলে হরিনাথপুর ফাঁড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনার ১ মিনিট ২১ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফুটেজ রয়েছে ঢাকা পোস্টের হাতে। ভিডিওতে দেখা গেছে, একটি মোটরসাইকেল থেকে নেমে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আব্দুর রহিম মৎস্য কর্মকর্তাকে শাসাচ্ছেন এবং তার দুই সহযোগী অভিযানিক দলের সদস্যদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল এবং মারধর করে রাস্তার ওপর ফেলে দেন। আর মৎস্য কর্মকর্তাদের সাথে অভিযানে যাওয়া নৌ-পুলিশের সদস্যরা সবাইকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছেন।
হিজলা উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলম জানান, বিপুল পরিমাণ অবৈধ জাল রয়েছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে নৌ পুলিশের সদস্যদের সহযোগিতায় মৎস্য অধিদপ্তরের লোকজন হরিনাথপুর পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ন এলাকায় অভিযানে যায়। সেখানে গিয়ে একটি বাড়িতে নির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে অভিযানে ঢুকে বাড়িতে কোনো পুরুষ পাওয়া যায়নি। বাড়ির নারী সদস্যদের সাথে কথা বলে এক বস্তা অবৈধ জাল পাওয়া যায়। নারীরা জানাস, ৫-৬ দিন আগে বিপুল পরিমাণ জাল এবং টাকা পয়সা নিয়ে গেছে হিজলা ফাঁড়ি পুলিশের ইনচার্জসহ সদস্যরা। যদিও সম্প্রতি হরিনাথপুর ফাঁড়ি পুলিশ কোনো অভিযান চালিয়ে অবৈধ জাল পুড়িয়েছে বা ধ্বংস করেছে এমন তথ্য মৎস্য বিভাগের কারও কাছে ছিল না।
সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলম বলেন, বিষয়টি জানার পর আমি হরিনাথপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আব্দুর রহিমকে ফোন দিয়ে ঘটনাস্থলে আসতে বলি। কাছাকাছি হওয়ায় তিনি অল্প সময়ের মধ্যেই আসেন, এ সময় তার সামনেই জাল নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি আবারও উপস্থাপন করেন স্থানীয়রা। সেই সঙ্গে অভিযানিক দলের সদস্যরাও তার কাছে এ বিষয়ে জানতে চান। এতে ফাঁড়ির ইনচার্জ আব্দুর রহিম ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদের গালাগাল শুরু করেন এবং সবার সঙ্গে খারাপ আচরণ শুরু করেন।
তিনি বলেন, এরপর ঘটনাস্থল থেকে হিজলা সদরে চলে আসার পথে হরিনাথপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আব্দুর রহিমসহ একাধিক পুলিশ সদস্য সিভিল ড্রেসে আমাদের যানবাহনের গতিরোধ করে। যার মধ্যে দুজন পুলিশ সদস্য নেমেই থ্রি-হুইলারের সামনে থাকা মাঝি সাইফুল ইসলামকে মারধর করে। একপর্যায়ে এক পুলিশ সদস্য লাঠি নিয়ে তেড়ে গেলে অন্যরা তাতে বাধা দেন। তখন মাঠ কর্মী হানিফ, মাঝি ইয়াসিনসহ বেশ কয়েকজন তাদের হামলার শিকার হন। একই সময়ে মোটরসাইকেল থেকে নেমে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আব্দুর রহিম আমাকে গালাগাল করেন এবং দেখে নেওয়াসহ বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিতে থাকেন। পরে বিষয়টি হিজলা থানা পুলিশ ও নৌ-পুলিশের ওসিকে জানিয়ে সেখান থেকে চলে আসি।
হরিনাথপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক আব্দুর রহিম বলেন, মৎস্য অধিদপ্তর ও নৌ পুলিশের সদস্যদের অভিযানের বিষয়টি আমার জানা নেই, তখন আমি অফিসে ছিলাম। বিকেল ৪টার দিকে মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তা আমাকে ফোন দিয়ে সেখানে যেতে বলেন। আমি গেলে মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, আমি নাকি ওই বাড়িতে কয়েকদিন আগে অভিযান চালিয়েছি। তখন আমি বলেছি জাল ও মাছের বিষয় মৎস্য বিভাগ দেখে। কাজেই সেখানে আমাদের অভিযান চালানোর সুযোগ নেই। এরপর ওই বাড়ির নারীরাও আমার সামনে বিষয়টি অস্বীকার করেন।
তিনি বলেন, এরপর সেখান থেকে থানায় চলে আসার পথে অভিযানিক দলের সাথে আবারও দেখা হয় এবং কথা হয়। তখন মৎস্য বিভাগের মাঝি ওই এলাকার লোকদের ডাক দিয়ে আমাদের মারতে বলে। সে সময় আমি মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তাকে বিষয়টি শান্ত করতে বলি এবং আমার ফোর্সরাও পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করে। বিষয়টি আমি আমার থানার ওসিকেও জানিয়েছি।
মারধরের বিষয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আব্দুর রহিম বলেন, মারধর নয় পরিস্থিতি শান্ত করেছে আমার সঙ্গে যাওয়া পুলিশের সদস্য এনাম ও শাকিল। আমরা সবাইকে সরিয়ে দিয়েছি, আপনি পুরো ভিডিও ভালোভাবে দেখেন।
যদিও এ বিষয়ে কোনো কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন হিজলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুবাইর আহমেদ। তিনি বলেন, কোনো পুলিশ সদস্য কাউকে মারধর করলে কিংবা সরকারি কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করলে সে বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আর হিজলা নৌ পুলিশের ইনচার্জ তরিকুল ইসলাম জানান, অভিযানে গিয়ে থানা পুলিশের সঙ্গে মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তাদের ঝামেলা ও হাতাহাতি হয়েছে। ঘটনাস্থলে নৌ পুলিশের সদস্যরা ছিলেন। তবে পুরো বিষয়ে এখনও বিস্তারিত বলা যাচ্ছে না। আর যেহেতু থানা পুলিশের সদস্যদের সঙ্গে ঘটনাটি ঘটেছে তাই আমরা এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কাউকে জানাইনি।
সৈয়দ মেহেদী হাসান/এসকেডি