গ্রামে ফিরতে পারলে সব কষ্ট নিমিষেই ভুলে যাব

গাড়ি ভাড়া বেশি, কষ্টও বেশি। পুরো রাস্তায় থেমে থেমে যানজট। ঈদ করতে গ্রামে যাচ্ছি এ কারণে তীব্র যানজটেও কষ্ট মনে হচ্ছিল না। কিন্তু খারাপ লেগেছে যখন ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ৮-৯ ঘণ্টার পথ ১৬ ঘণ্টাতেও শেষ হচ্ছে না। একে তো যানজট তার ওপর অসহনীয় গরম। যেন দ্রুত বাড়ি পৌঁছতে পারলেই সব ভোগান্তি শেষ হবে।
এভাবেই বলছিলেন ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে ঈদযাত্রার যানজটে হাঁপিয়ে ওঠা জাকির হোসেন। তিনি লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার মদাতি এলাকার বাসিন্দা। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় গাজীপুরের চন্দ্রা থেকে সৌখিন পরিবহনে রংপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন এই পোশাক শ্রমিক।
জাকির হোসেনের মতো শত শত যাত্রী ঈদযাত্রার কষ্ট সয়ে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছেন। তাদের কেউ বাসে, ট্রাকে, পিকআপ ভ্যানে, আবার কেউবা মোটরসাইকেলে করে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে নিজ নিজ গ্রামের পথে ছুটছেন।

জাকির হোসেন বলেন, গাজীপুর থেকে রংপুরের ভাড়া ৭০০-৮০০ টাকা। ঈদের কারণে ভাড়া বাড়িয়েছে বাস মালিকরা। প্রায় দ্বিগুণ দামে টিকেট মিললেও ভোগান্তির শেষ নেই। গাজীপুর থেকে আসার পথে রাতে কম যানজট ছিল। কিন্তু সকালে গোবিন্দগঞ্জ পৌঁছলে তীব্র যানজটে পড়ে অবস্থা কাহিল। এলেঙ্গা থেকে চারলেনের সড়ক হলেও এলেঙ্গা থেকে সেতু-পূর্ব পর্যন্ত দুই লেনের সড়কে পরিবহনের চাপ বেড়ে যাওয়ায় যানজটের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
প্রতিবছরের মতো এবারও ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন জেলা থেকে রংপুর বিভাগের ঘরমুখো মানুষেরা যাত্রা শুরু করেছে। পোশাকশিল্প নির্ভর শ্রমিকের সংখ্যা রংপুর অঞ্চলে বেশি হওয়ায় লক্করঝক্কড় গাড়ির বহরও বেড়েছে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে। ঈদযাত্রায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তা, বাইপাসসহ আশেপাশের এলাকায় যানবাহনের প্রভাব পড়েছে উত্তরের মানুষের যাত্রাপথেও। এর ফলে দীর্ঘ সারি দেখা গেছে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে।

মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত রংপুর নগরীর প্রবেশদ্বার মর্ডান মোড় এলাকায় ঢাকা থেকে আসা বিভিন্ন যাত্রীবাহী পরিবহনের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের এই পয়েন্টে যাত্রী বাড়ার সঙ্গে বেড়েছে যানবাহনেরও চাপ। ফিটনেসবিহীন প্রচুর যাত্রীবাহী বাসের পাশাপাশি ঈদ ঘিরে যাত্রী পরিবহন করছে কিছু ট্রাক-পিকআপও।
গাজীপুরের কালিয়াকৈর থেকে আসা সেলিম মিয়া নামে এক যাত্রী বলেন, গাড়ির ধীরগতির কারণে পথে পথে ভোগান্তিও রয়েছে। সঙ্গে প্রচণ্ড রোদ ও তীব্র গরমে নাভিশ্বাস উঠেছে। বাসের মধ্যে থাকা নারী-শিশু ও বয়স্ক মানুষের অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছে। কষ্ট হচ্ছে তারপরও সবাই বাড়ি ফিরতে অধীর অপেক্ষায় যানজটের ভোগান্তি সহ্য করছেন। আমরা ভেবেছিলাম রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে ওভারপাস ও সেতু খুলে দেওয়াতে যানজট কিছুটা কমবে। কিন্তু গাজীপুর থেকে রংপুর আসতে যে সময় লেগেছে তা অসহনীয়।
এদিকে মডার্ন মোড় হয়ে যাওয়া কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, দিনাজপুর, নীলফামারী, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলার যাত্রীদের অনেকের মধ্যে বাড়ি ফেরার যাত্রাপথের যানজট নিয়ে যেমন ক্ষোভ রয়েছে, তেমনি এবার বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা না হওয়ায় অনেকেই স্বস্তির কথাও জানিয়েছেন।
মডার্ন মোড়ে কথা হয় হানিফ পরিবহনের এক গাড়ি চালকের সঙ্গে। তিনি বলেন, টাঙ্গাইল থেকে মহাসড়কে ধীরগতির কারণে যাত্রীদের কষ্ট পোহাতে হচ্ছে। সঙ্গে রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে এখনো কাজ চলমান রয়েছে। আবার চলার পথে ধুলাবালি উড়ছে। এটাও যাত্রীদের জন্য কষ্টকর। আমাদেরও গাড়ি চালাতে সমস্যা হচ্ছে। তবে যানজট নিয়ন্ত্রণে থাকলে মানুষকে এতো কষ্ট পেতে হতো না।
নাবিল পরিবহনে থাকা নীলফামারীগামী খোকন সরকার এক যাত্রী বলেন, ঈদের সময় তো একটু কষ্ট হবেই। বাসের সংকটের কারণে ভাড়া একটু বেশি। তবে বাসের টিকেট পেতে কষ্ট হয়নি। সড়কে যানজট থাকায় খারাপ লাগছে। কিন্তু ঢাকা থেকে আসার পথে কোথাও কোথাও দুর্ঘটনার খবর পাইনি, এটাই ভালো লাগার ব্যাপার। পাঁচ বছর পর ঈদ করতে এবার বাড়ি যাচ্ছি। গ্রামে ফিরতে পারলে সব কষ্ট নিমিষেই ভুলে যাবো।’
মডার্ন মোড়ে যানজট নিরসনসহ যাত্রীদের ভোগান্তি কমানোসহ নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে স্থাপন করা হয়েছে সাব-কন্ট্রোলরুম। সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা তীব্র রোদে দাঁড়িয়ে থেকে যানজট নিরসনে কাজ করছেন।
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের (দক্ষিণ) টিআই কেরামত আলী জানান, পোশাক শ্রমিকরা সবাই একযোগে রওনা হওয়ায় যানজট সৃষ্টি হয়েছে। তবে গাড়ি কোথাও থেমে নেই। গাড়ির চাপ অনেক বেশি থাকায় এবং অনেক গাড়ি মডার্ন মোড়ে যাত্রী ওঠানামা করায় একটু যানজট সৃষ্টি হয়েছে। তবে আশা করছি, বুধবার মহাসড়কে তেমন একটা চাপ থাকবে না।
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) মিনহাজুল আলম বলেন, রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের মডার্ন মোড়ে তেমন যানজট নেই। তবে দূরপাল্লার পরিবহনের চাপ বেড়েছে। এখন এই এলাকায় যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ট্রাফিক বিভাগ দায়িত্ব পালন করছে।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমএএস