কাঙ্ক্ষিত মাছ না পাওয়ায় ঈদের আনন্দ নেই বরগুনার জেলেদের

প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে সর্বস্তরের মানুষ যখন ব্যস্ত, ঠিক এ সময়ে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে বরগুনার বিভিন্ন এলাকার নদীতে মাছ শিকার করতে যাওয়া জেলেদের। একে তো ঋণের বোঝা, তার সঙ্গে নদীতে কাঙ্ক্ষিত মাছ না পাওয়ায় এবার ঈদের আনন্দ নেই এসব জেলেদের মাঝে।
বরগুনায় প্রায় এক লাখ জেলে বিভিন্ন নদী ও সাগরে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এর মধ্যে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৪৪ হাজার। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে সাগর বা নদীতে মাছ না পেলে অধিকাংশ জেলেরাই চলেন ধারদেনা করে।
দুদিন পরেই ঈদ। এর আগে কাঙ্ক্ষিত মাছের দেখা না পাওয়ায় পরিবারের জন্য ঈদের কেনাকাটা সম্পন্ন করতে পারেননি জেলেরা। ফলে কষ্টেই দিন কাটছে তাদের।
সরেজমিনে বরগুনার বিভিন্ন জেলে পল্লী ঘুরে দেখা যায়, অসংখ্য মাছ ধরার ট্রলার ঘাটে নোঙর করে আছেন জেলেরা। এদের মধ্যে অনেক ট্রলারই কাঙ্ক্ষিত মাছ না পেয়ে ফিরে এসেছেন ঘাটে। লোকসানের ভয়ে নতুন করে অধিকাংশ জেলেরাই যাচ্ছেন না মাছ শিকার করতে।
বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার জেলে মোঃ নজরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা জেলেরা যারা আছি তাদের খুবই করুণ অবস্থা। সাগর ও নদীতে মাছ পাওয়া যায় না বললেই চলে। যারা মাছ শিকার করে জীবনযাপন করি তারা এখন কেউ ঈদ করতে পারবেন না, বাচ্চাদের জন্য নতুন কাপড় কিনে দেওয়া আমাদের কারো পক্ষেই সম্ভব না। তবে মাছ পেলে আমরা ভালোভাবে ঈদ করতে পারতাম।
রাশেদ নামের আরেক জেলে ঢাকা পোস্টকে বলেন, সাগরে মাছ কম পাওয়ায় আমরা এখন বসে আছি। আমাদের অন্য কোনো কাজ না থাকায় এখন আয় ইনকাম নেই। সামনে ঈদ, এ উপলক্ষে সরকার যদি আমাদের একটু সহযোগিতা করে তাহলে আমাদের জন্য উপকার হয়।
ঋণের বোঝা নিয়ে চিন্তিত হয়ে হাসান নামের আরেক জেলে ঢাকা পোস্টকে বলেন, নদীতে মাছ কম থাকায় এবং বাজারে দ্রব্যমূল্য বেশি থাকায় আমরা ঠিকভাবে খেয়ে পরে থাকতে পারিনা। ঈদ উপলক্ষে স্ত্রী, সন্তান ও মা-বাবাকে জামা কাপড় কিনে দেয়ার দরকার, কিন্তু তা সম্ভব হতো যদি নদীতে মাছ পাওয়া যেতো। এছাড়া যারা দিন আন দিন খায় তাদের অবস্থা আরও খারাপ। আমার মতো শতকরা ৯৯ জনই ঋণগ্রস্ত। ধারদেনা করেই চলতে হয় আমাদের।
এ বিষয়ে বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ শামীম মিঞা ঢাকা পোস্টকে বলেন, জাটকা আহরণ থেকে বিরত থাকতে জেলেদের পরিবারপ্রতি ৪০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়। বরগুনা সদর উপজেলায় জেলেদের মধ্যে ৭ হাজার ১০০ পরিবার চার মাসে ১৬০ কেজি করে চাল পাবে। এছাড়া ঈদ উপলক্ষে মোট অসহায় দরিদ্র ১৭ হাজার ৩৯৪ টি পরিবারকে ১০ কেজি করে ঈদ স্পেশাল ভিজিএফ বিতরণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
মোঃ আব্দুল আলীম/এনএইচ