নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত মধুপুর, প্রশাসনের দাবি তুচ্ছ ঘটনা
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে টাঙ্গাইলের মধুপুরে সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছরোয়ার আলম খান আবু খা’র মারমুখী অবস্থানের কারণে হামলা, পাল্টা হামলা, ভাঙচুর ও আহত হওয়ার ঘটনা ঘটছে।
উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী ইয়াকুব আলীকে আওয়ামী লীগ ও এমপির একক প্রার্থী হিসেবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ঘোষণা দেন এমপি আব্দুর রাজ্জাক। এই ঘোষণার পর থেকেই ইয়াকুব আলীকে জেতাতে মরিয়া এমপির অনুসারীরা। অন্যদিকে এমপির নির্দেশ না মেনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ছরোয়ার আলম আবু খা নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। তার অনুসারীরাও ভোটের মাঠের একচ্ছত্র দখল ও আধিপত্য ধরে রাখতে মরিয়া। উভয় পক্ষের মুখোমুখি অবস্থান থাকায় ঘটছে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। বড় ধরনের সংঘর্ষের শঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে ভোটাররা। তবে সংঘর্ষের ঘটনায় দুই প্রার্থীই দায় চাপাচ্ছেন একে অপরের ওপর।
সংঘর্ষের এমন ঘটনা নিয়ে পুলিশ ও নির্বাচন কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও রয়েছে মামলা না নেওয়া ও পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগ। তবে নির্বাচন কর্মকর্তা ও থানা পুলিশ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ এবং উভয় পক্ষের মারমুখী অবস্থানকে তুচ্ছ বলে দাবি করেছেন।
এর আগে মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) রাতে এমপি গ্রুপ ও চেয়ারম্যান গ্রুপের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট ছুড়ে। এতে উভয় পক্ষের ১৫ জন আহত হয়। এ সময় কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। এ ছাড়া ভাঙচুর করা হয়েছে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও রাসেল টাওয়ারের সামনের অংশ।
এই ঘটনায় বুধবার (১৭ এপ্রিল) বিকেলে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীকে শোকজ করেছে নির্বাচন কমিশন। এ ছাড়া এমন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা পুনরায় যেন না ঘটে সেই বিষয়ে উভয় প্রার্থীকে সতর্ক করা হয়েছে।
দলীয় দুই গ্রুপের হামলা-পাল্টা হামলা ও ভাঙচুর করার ঘটনার পর থেকেই মধুপুর বাসস্ট্যান্ড, থানা মোড়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এমপি গ্রুপ ও চেয়ারম্যান গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্বের জেরে পৌরবাসীর মধ্যে নির্বাচনের সংঘাত নিয়ে আতঙ্ক ও ভয়ভীতি বিরাজ করছে।
জানা গেছে, আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রতীক নৌকায় নির্বাচন না করার পাশাপাশি কাউকে প্রকাশ্য ও মৌন সমর্থন না জানানোর সিদ্ধান্তে কঠোর হুঁশিয়ারি জারি করে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। তবে দলটির এ কঠোর সিদ্ধান্ত মানছেন না খোদ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও টাঙ্গাইল-১ (ধনবাড়ী-মধুপুর) আসনের সংসদ সদস্য আব্দুর রাজ্জাক। তার নির্বাচনী আসন মধুপুরে অনুগত ইয়াকুব আলী ও ধনবাড়িতে খালাতো ভাই হিরার পক্ষে প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন সমাবেশে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। তার ওই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
এদিকে এমপি রাজ্জাককেও ঠেকাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে জেলা ও উপজেলার শক্তিশালী বিরোধী পক্ষ। তাদেরও মারমুখী অবস্থানে আতঙ্কিত স্থানীয়রা। সহিংসতা মুক্ত সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ চায় উপজেলাবাসী।
মধুপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকার অনেকেই জানান, সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক ইয়াকুব আলীকে চেয়ারম্যান হিসেবে সমর্থন দিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের কাজ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। বিপরীতে বর্তমান চেয়ারম্যান ছরোয়ার আলম আবু খা এবারও প্রার্থী হয়েছেন। তিনি গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও প্রার্থী হয়েছিলেন। সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় আবু খার সঙ্গে এমপির বিরোধ শুরু হয়। সেখান থেকেই দলে দুই ভাগ। দুই গ্রুপই শক্তিশালী। তাদের এই গ্রুপিংয়ের কারণে বাসস্ট্যান্ডসহ আশপাশের ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত। নির্বাচন নিয়েও মানুষের মধ্যে ভয় কাজ করছে। এখন ভোট হওয়া নিয়ে শঙ্কিত মধুপুরের মানুষ।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ছরোয়ার আলম খান আবু খা বলেন, সংসদ সদস্যের নির্দেশে পৌর মেয়র ও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ইয়াকুব আলী বার বার হামলা চালিয়ে কর্মীদের আহত করছে। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়িতে ভাঙচুর করলেও পুলিশ কোনো মামলা নেয় না। অদৃশ্য শক্তির কারণে পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে নির্বাচন কর্মকর্তা ও পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে এই ঘটনায় কোনো মামলা গ্রহণ করা হবে না।
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী ইয়াকুব আলী বলেন, আবু খা’র লোকজন পার্টি অফিসে ভাঙচুর চালিয়েছে। এ ছাড়া ক্লিনিক ও বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেছে। এমপি সাহেব আমাকে চেয়ারম্যান হিসেবে সমর্থন দিয়েছেন। নেতাকর্মীদের আমার পক্ষে কাজ করার জন্য বলেছেন। কিন্তু আবু খা এমপির ক্লিন ইমেজকে কলঙ্কিত করতে জেলা ও উপজেলায় পরিকল্পিতভাবে নোংরা কর্মকাণ্ড করছে।
মধুপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোল্ল্যা আজিজুর রহমান জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি। এ ছাড়া বড় কোনো ঘটনাও ঘটেনি। এটা নিছক তুচ্ছ ঘটনা।
তবে উভয়পক্ষের ছয়টি মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি মোল্ল্যা আজিজুর রহমান কোনো মন্তব্য করেননি।
সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ফারহানা শিরিন বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর করতে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় দুই প্রার্থীকে শোকজ করা হয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত। তেমন বড় কোনো ঘটনা না। উপজেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও টাঙ্গাইল-১ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুর রাজ্জাক বলেন, একজন প্রার্থীকে সমর্থন দিতেই পারি। তবে নেতাকর্মীদের স্পষ্ট বলে দেওয়া হয়েছে কোনো মারামারি বা সংঘর্ষে লিপ্ত না হতে। তবে আবু খার লোকজনই হামলা-ভাঙচুর করেছে। এক পক্ষই হামলায় জড়িত।
অভিজিৎ ঘোষ/এমজেইউ