‘বাসা ভাড়া দিতে হবে দোকানে বাকি জমেছে তাই আন্দোলন ছাড়া উপায় নেই’
নারায়ণগঞ্জের শিল্পাঞ্চল ফতুল্লায় বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিক বিক্ষোভ এখনও চলছে। রোববার (২১ এপ্রিল) বকেয়া বেতনের দাবিতে সড়ক অবরোধে নামা শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। দফায় দফায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, পুলিশের লাঠিচার্জ, রাবার বুলেট ও জলকামান নিক্ষেপের পরেও নিজেদের দাবি দাওয়ায় অনঢ় থেকে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন শ্রমিকরা। এতে হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। গুরুতর আহত বেশ কয়েজন শ্রমিককে ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেখা গেছে।
এর আগে এদিন সকাল সাড়ে নয়টার দিকে বকেয়া বেতনের দাবিতে পঞ্চবটির অবন্তী কালার টেক্স লিমিটেডের শ্রমিকরা সড়কে নেমে আসেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শুরু হয় সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, শ্রমিকরা এখনও সড়কে অবস্থান করছেন। পুলিশ সদস্যরাও অবস্থান নিয়েছেন সেখানে। ফলে একপ্রকার থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, প্রথম দিকে পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও শ্রমিকদের সরিয়ে দিতে শিল্প পুলিশ জলকামান দিয়ে পানি ছুড়ে লাঠিচার্জ করলে পাল্টা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। এ সময় পুলিশ কয়েক রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস ও শর্টগানের গুলি নিক্ষেপ করে। গুরুতর আহত একাধিক শ্রমিককে অন্যান্য শ্রমিকরা স্থানীয় ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে নিয়ে গেছেন।
আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানান, ঈদের আগে তাদের মার্চ মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধ করার কথা থাকলেও মালিকপক্ষ কথা রাখেনি। ৮ এপ্রিল কারখানা ছুটি হয়ে যাওয়ার সময় বলা হয়, শ্রমিকদের মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে ঈদের ছুটির মধ্যেই বকেয়া বেতন পৌঁছে দেওয়া হবে, কিন্তু সেই কথাও রাখেনি তারা। বাসা ভাড়া দিতে হবে, দোকানে বাকি জমেছে, ঘরে বাজার নেই, তাই আন্দোলন ছাড়া আমাদের গতি নেই। আজ যখন আমরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হলাম, তখন পুলিশ আমাদের লাঠিচার্জ করেছে, জলকামান, টিয়ারশেল এমনকি রাবার বুলেটও মেরেছে।
নারায়ণগঞ্জ শিল্প পুলিশ-৪ এর পরিদর্শক (ইনটেলিজেন্স) সেলিম বাদশা ঢাকা পোস্টকে বলেন, মার্চ মাসের বেতন বকেয়া ছিল শ্রমিকদের। ঈদের ছুটি শেষে আজ কাজে যোগ দিয়ে শ্রমিকরা বেতন দাবি করে। একপর্যায়ে তারা সড়ক অবরোধ করে। শ্রমিকদের সড়ক সরে যেতে বললে তারা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে আমাদের কয়েকজন আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ উপায়ন্তর না পেয়ে টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেছে। পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ ঘটনায় কয়েকজন শ্রমিকও আহত হয়েছেন। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সেখানে মালিক শ্রমিক সমঝোতার চেষ্টা করছেন।
তবে শ্রমিকরা বলছেন, পুলিশই প্রথমে হামলা করেছে আমাদের ওপর। পুলিশের হামলায় কয়েকজন শ্রমিক গুরুতর আহত হয়েছেন। বিক্ষোভরত শ্রমিকরা জানান, কারখানাটির মালিক ঘটনাস্থলে এসে শ্রমিকদের সকল প্রকার বকেয়া পরিশোধ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
এ বিষয়ে ক্রোনী গ্রুপের জেনারেল ম্যানেজার ইনতিসার আহমেদ জানান, আমরা ২০ এপ্রিল কারখানা খুলেছি। ২২ এপ্রিল বেতন দেওয়ার কথা ছিল। সকালে শ্রমিকরা এসে আজই বেতন চায়। পরে তারা সড়ক অবরোধ ও কারখানায় ভাঙচুর চালায়।
শিপন সিকদার/এমএএস