কলেজছাত্রকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় কারাগারে ৩

নোয়াখালীর সেনবাগে কিশোর গ্যাংয়ের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে কলেজছাত্র মাহিরুল ইসলাম শাওন (২০) নিহতের ঘটনায় ৩ আসামিকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। বৈশাখী মেলায় জুয়ার আসনের বিরোধিতা করায় শাওনকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়।
রোববার (২১ এপ্রিল) বিকেলে আসামিদের জেলা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। এর আগে ২০ এপ্রিল রাতে বেগমগঞ্জের জমিদারহাট মনোয়ার মেডিকেল এলাকায় অভিযান চালিয়ে এজাহার নামীয় আসামি দিদার হোসেন শামীমকে (২০) গ্রেপ্তার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-১১) এবং সাখায়েত উল্লা আল নওশাদ (২০) ও মো. ইয়াছিন আরাফাতকে (২২) গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
কারাগারে প্রেরণকৃতরা হলেন নোয়াখালী জেলার সেনবাগ থানার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ রাজারামপুর গ্রামের মোস্তাফা হকের ছেলে দিদার হোসেন শামীম, নুর নবীর ছেলে মো. ইয়াছিন আরাফাত ও বীজবাগ ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ধর্মপুর গ্রামের মো. মো. শহিদ উল্যাহর ছেলে সাখায়েত উল্লা আল নওশাদ।
শাওন মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের উত্তর রাজারামপুর গ্রামের জমাদার বাড়ির আবুধাবি প্রবাসী কচি মিয়ার ছেলে। তিনি দাগনভূঁইয়া সরকারি ইকবাল মেমোরিয়াল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।
র্যাব-১১ ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বৈশাখী মেলায় জুয়ার আসর বসানোকে কেন্দ্র করে ছুরিকাঘাতে মাহিরুল ইসলাম শাওনকে হত্যা করা হয়। বুধবার রাতে উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের সেবারহাট বাজারের বিজ্ঞান ক্লাবের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া বৃহস্পতিবার সেবারহাট বাজারের শেরে বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা আয়োজনের পরিকল্পনা করে বাজারের ইজারাদার মাহফুজ, জোবায়ের ও সাইদুল হক। এজন্য কয়েকদিন ধরে এলাকায় মাইকিং করা হয়। বুধবার রাতে মেলায় জুয়ার আসর বসানো হবে কিনা তা নিয়ে মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের জসিম কন্ট্রাক্টরের ছেলে হৃদয়ের সঙ্গে শাওনের বিরোধ দেখা দেয়। একপর্যায়ে সেবারহাট বাজারের বিজ্ঞান ক্লাবের সামনে হৃদয়ের নেতৃত্বে কিশোর গ্যাং সদস্যরা শাওনের বুকে ও পেটে ছুরিকাঘাত করে। একই সময়ে পিয়াস নামের আরেক তরুণকে গুরুতর জখম করা হয়। পরে তাদের উদ্ধার করে ফেনীর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক শাওনকে মৃত ঘোষণা করেন। পিয়াসকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
র্যাব-১১, সিপিসি-৩, নোয়াখালী কোম্পানি কমান্ডার (ভারপ্রাপ্ত) সহকারী পুলিশ সুপার মো. গোলাম মোর্শেদ ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, মূলত মেলায় জুয়ার আসনের বিরোধিতা করায় শাওনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। নিহতের মা আঞ্জুমান আরা রুনা বাদী হয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে সেনবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ঘটনার পর হতে র্যাব- ১১, সিপিসি-৩, নোয়াখালী এর অভিযানিক দল মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে ছায়া তদন্ত আরম্ভ করে। পরবর্তীতে র্যাব-১১, সিপিসি-৩, নোয়াখালী এর চৌকস অভিযানিক দল তথ্য-উপাত্ত ও স্থানীয় সোর্সের সহায়তায় উক্ত মামলার ৭নং এজাহার নামীয় আসামি শামিমকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।
নোয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বেগমগঞ্জ সার্কেল) মো. নাজমুল হাসান রাজীব ঢাকা পোস্টকে বলেন, পুলিশ বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করে। আসামিদের জেলা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।
এদিকে নিহত কলেজ ছাত্র শাওনের হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে সেনবাগের সেবারহাটে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে শাওনের সহপাঠী ও এলাকাবাসী অংশগ্রহণ করেন।
হাসিব আল আমিন/এএএ