ফেনীতে ৮ ঘণ্টার লোডশেডিংয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপনে ছন্দপতন
ফেনীতে তীব্র দাবদাহের সঙ্গে জনজীবনে ভোগান্তি বাড়াচ্ছে লোডশেডিং। জেলা শহরে তুলনামূলক লোডশেডিং কম হলেও উপজেলাগুলোতে লোডশেডিংয়ের মাত্রা তীব্র। ২৪ ঘণ্টায় ৭-৮ ঘণ্টার বেশি সময় লোডশেডিং হচ্ছে গ্রামে। এতে সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপনে ঘটেছে ছন্দপতন। তীব্র লোডশেডিংয়ের সঙ্গে অসহনীয় গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছেন মানুষজন। অনেকে এই গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। লোডশেডিংয়ে ব্যাহত হচ্ছে সেচ কার্যক্রমও। চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ না পাওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ বিভাগ।
শহরের ডাক্তার পাড়ার বাসিন্দা আরিফুর রহমান বলেন, সকাল থেকে রাত, এমন কোনো সময় নেই যে লোডশেডিং হয় না। তীব্র গরমের সঙ্গে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে গেছি। অনার্স ৩য় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এভাবে হলে কিভাবে প্রস্তুতি নেব, পরীক্ষায় অংশ নেব সেই চিন্তায় আছি।
মিজান রোডস্থ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, বাণিজ্যিক এলাকাগুলোতে সিডিউল নির্ধারণ করে লোডশেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিলে আমরা অনেকটা ক্ষতির মুখ থেকে বাঁচতে পারবো। গত কয়েকদিনে প্রতিষ্ঠানে এ সমস্যায় বেশ প্রভাব পড়েছে।
আরও পড়ুন
একইভাবে লোডশেডিংয়ের কারণে জেলার বিদ্যুৎ চালিত গভীর নলকূপ ও সেলুগুলো বন্ধ থাকায় জমিতে সেচ দেওয়া নিয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন কৃষক।
পরশুরামের বীরচন্দ্র নগর এলাকার শাহআলম নামের এক কৃষক বলেন, ফিডার (একটি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের আওতাধীন এলাকা) ধরে লোডশেডিংয়ের রুটিন করা হলে দুর্ভোগ কিছুটা হলেও কমতো। এখন মাঠে ফসল আসার সময়। এ মুহূর্তে সেচের প্রয়োজন হলেও লোডশেডিংয়ের কারণে সময় মতো সেচ দিতে পারছি না।
আবুল কালাম নামে সোনাগাজীর আরেক কৃষক বলেন, মোটর দিয়ে জমিতে সেচ দিতে হয়। ৭-৮ ঘণ্টার লোডশেডিংয়ে বারবার বিদ্যুৎ বিভ্রাটে একটানা পুরো জমিতে সেচ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বৃষ্টি না থাকায় জমি শুষ্ক হয়ে আছে। যার জন্য দুর্ভোগ আরও বাড়ছে।
ফেনী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আলমগীর হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাত্রিকালীন চাহিদার ৪৪ মেগাওয়াটের বিপরীতে ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়া দিনের মধ্যে দুপুর বেলায় ৪২ মেগাওয়াটের বিপরীতে ২৭ মেগাওয়াট পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে ৩০ শতাংশ লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে।
ফেনী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার হাওলাদার মো. ফজলুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, গড়ে ৭৫ মেগাওয়াটের বিপরীতে ৫৭ মেগাওয়াট সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়া চাহিদার বা ঘাটতির বাকি বিদ্যুৎ লোডশেডিং দিয়ে পূরণ করা হচ্ছে।
পল্লী বিদ্যুৎ পরশুরাম জোনাল অফিসের ডিজিএম প্রকৌশলী সনৎ কুমার ঘোষ বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে গড়ে ৭৫ শতাংশ বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। বাকি বিদ্যুৎ লোডশেডিং দিয়ে পূরণ করা হচ্ছে।
এদিকে রোববার (২১ এপ্রিল) জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত জেলা উন্নয়ন ও সমন্বয় সভায় অপ্রয়োজনীয় আলোকসজ্জা পরিহার করে বিদ্যুৎ ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বক্তারা।
সভায় ফেনী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম বলেন, বিদ্যুৎ অপচয় রোধে সকলকে সচেতন হতে হবে। অপ্রয়োজনীয় আলোকসজ্জা পরিহার করার পাশাপাশি বিভিন্ন বাসা-বাড়ির এসি সারাক্ষণ চালিয়ে না রেখে একঘণ্টা চালিয়ে রুম ঠাণ্ডা করে এসি বন্ধ করে বিদ্যুৎ অপচয় রোধ করতে হবে। ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়াতে বিদ্যুৎ সরবরাহ সহনীয় পর্যায়ে রাখতে ১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাড়তি রাখা হয়েছে।
সভায় ফেনী জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, বর্তমানে দেশে বিদ্যুতের সংকট চলছে। জেলায় সকল ধরনের অপ্রয়োজনীয় আলোকসজ্জা বর্জন ও অতিরিক্ত বিদ্যুতের ব্যবহার হয় এমন যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা থেকে সকলকে বিরত থাকতে হবে। তাহলে লোডশেডিংয়ের মাত্রা কমবে।
তারেক চৌধুরী/এমএসএ