জরাজীর্ণ ঘরে ৩ সন্তান নিয়ে বিধবা রোজিনার মানবেতর জীবন
আট বছর আগে স্বামীকে হারিয়েছেন রোজিনা আক্তার। এরপর থেকে রোজিনার দুঃখের গল্প শুরু। এক মেয়ে ও দুই ছেলেকে নিয়ে এক বেলা খেতে পারলেও না খেয়ে থাকেন দুই বেলা। মানুষের কাছে সাহায্য চেয়ে কিংবা অন্যের বাড়িতে কাজ করে কোনোমতে করছেন জীবনযাপন। দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ একটি ঘরে করেন বসবাস। কুয়াশা-বৃষ্টি-বাতাসের আতঙ্কে ভাঙা ঘরে নির্ঘুম রাত কাটে তার।
রোজিনা আক্তার নোয়াখালীর সদর উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ জামালপুর গ্রামের নছির সর্দার বাড়ির মৃত মো. রফিক উল্যাহর স্ত্রী।
জানা যায়, বিধবা রোজিনা আক্তারের স্বামীর ভিটা-বাড়ি ছাড়া তার আর কিছুই নেই। বেঁচে থাকার তাগিদে কখনো মানুষের কাছে হাত পাতেন। কখনো অন্যের বাড়িতে করতে হয় ঝিয়ের কাজ। এভাবেই সন্তানদের মুখে আহার তুলে দেন। বসতঘর জরাজীর্ণ, জোড়াতালি এ ভাঙা ঘরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করে চলছেন তিনি। তিন সন্তানকে নিয়ে রাতে যে ঠিকভাবে ঘুমাবেন তার উপায় নেই। বৃষ্টি-বাতাসে আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটে তার। বর্ষাকালে আকাশের মেঘ দেখলে দৌড় দিতে হয় অন্যের ঘরে। আর শীতকালে কনকনে বাতাস আর কুয়াশায় ভিজে যায় বিছানাপত্র। উপার্জনক্ষম কেউ না থাকায় মানবেতর জীবন-যাপন করে আসছে তারা।
বিধবা রোজিনা আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে তিনটা সন্তান নিয়ে আমি সাগরে ভাসছি। মানুষের কাছে হাত পেতে তাদের মুখে খাবার দিতে হয়। এক বেলা খেলে দুই বেলা খেতে পারি না। আমার কষ্টের কথা কাউকে বলে বোঝানো যাবে না। পেট ভাত জুটে না ঘর করব কীভাবে। এই ঘরের জন্য কত মানুষের দুয়ারে দুয়ারে গেছি একমাত্র আমি জানি। বর্ষায় ঘরে পানি আসে আর ঘর দিয়ে ঠান্ডা বাতাসে সন্তানেরা অসুস্থ হয়ে পড়ে। কোনো রকম বেঁচে আছি।
অর্থের অভাবে ছেলের পড়াশোনা বন্ধ হলেও মেয়ে শারমিন আক্তার পড়ছেন ষষ্ঠ শ্রেণিতে। শারমিন আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, সামান্য বৃষ্টি হলেই পুরো ঘর ভিজে যায়। আমার বই খাতাও ভিজে যায়। পড়াশোনা করতে পারি না।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাহায্য চেয়ে শারমিন আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গরিবের জন্য ঘর করে দিচ্ছে। আমরা একটা ঘরের জন্য কত কষ্ট করছি। ঠিকমতো পড়তে পারি না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি আমাদের একটা ঘর করে দেয় তাহলে আমি পড়তে পারব। আমি প্রধানমন্ত্রীর জন্য দোয়া করব।
প্রতিবেশী গোলাম মোস্তফা হায়দার ঢাকা পোস্টকে বলেন, রোজিনা আক্তারের স্বামী হঠাৎ করে ব্রেইন স্ট্রোক করে মারা যান। এরপর থেকে তিনি তিন সন্তান নিয়ে জরাজীর্ণ ঘরে খুব মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তার একটা ঘরের খুবই প্রয়োজন।
বিনোদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. তোফাজ্জল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে রোজিনা আক্তারের জন্য বিধবা ভাতার কার্ড ও ১০ টাকার চালের কার্ড করে দিয়েছি। তবে ঘরের জন্য তিনি অনেক কষ্ট করছেন। বিত্তবানরা যদি এগিয়ে আসে তাহলে বিধবা তার সন্তানদের নিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই পাবেন। আমিও সার্বিকভাবে সহযোগিতা করব।
হাসিব আল আমিন/এএএ