চালের দামে এক কেজি তরমুজ

নাটোরে তাপমাত্রা যেমন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে তেমনি বাড়ছে তরমুজের দাম। বর্তমানে এক কেজি চালের দামে এক কেজি তরমুজ বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। আর খুচরা দোকানে প্রতি কেজি চালও একই দামে বিক্রি হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, হঠাৎ করেই নাটোরে তরমুজের দাম বেড়ে গেছে। রোজার শুরুতেও বাজারে তরমুজের দাম স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু রোজা শুরুর পর মাত্র ৮-১০ দিনের ব্যবধানে কেজি প্রতি তরমুজের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। কয়েক দিন আগেও তরমুজ বিক্রি হয়েছে ২৫-৩০ টাকা কেজি, এখন সেই তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি।
গ্রীষ্মের তীব্র গরমে হাঁসফাঁস করছে মানুষ। দাবদাহ থেকে সামান্য পরিত্রাণ পেতে তরমুজই পছন্দ করেন। কিন্তু আকাশছোঁয়া দামের কারণে এখন আর তরমুজের স্বাদ নিতে পারছেন না নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষরা। এরই মধ্যে তরমুজের দাম সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে চলে গেছে।
অভিযোগ উঠেছে, সিন্ডিকেট করে নাটোরের তরমুজ ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো তরমুজের দাম বাড়িয়েছেন। সরবরাহ থাকলেও সংকটের কথা বলে তরমুজের দাম বেশি নিচ্ছেন। প্রশাসনের যথাযথ নজরদারি না থাকায় এ সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য থামছেই না।
জানা গেছে, বিক্রেতারা কৃষকের কাছ থেকে জমি থেকে পিস হিসেবে তরমুজ কিনে এনে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কেজি দরে বিক্রি করছেন। এতে প্রকৃত চাষিরা দাম কম পেলেও অসাধু ব্যবসায়ীরা বিপুল অঙ্কের মুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
অটোরিকশার চালক আরিফ হোসেন বলেন, লকডাউনের কারণে ঠিকমতো গাড়ি চালাতেই পারি না, রাস্তাঘাটে যাত্রীরও অভাব। দিন শেষে যা আয় হচ্ছে, তাতে কোনরকমে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বেঁচে আছি। ছেলেমেয়েরা খেতে চাইলেও এ রোজগারে এত দামে তরমুজ খাওয়ানো সম্ভব হবে না।
নলডাঙ্গা বাজারে তরমুজ কিনতে আসা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আব্দুর রহিম বলেন, বর্তমানে প্রতি কেজি চালের দাম ৫০-৬০ টাকা। আর এক কেজি তরমুজের দামও একই। এত দামের কারণে এ বছর সবার পক্ষে মৌসুমি এ ফল কিনে খাওয়া সম্ভব না।
তরমুজ কিনতে আসা এক শ্রমিক বলেন, এক কেজি চাল কিনতে লাগছে ৬০ টাকা। আর এক কেজি তরমুজও কিনতে হচ্ছে ৬০ টাকা দিয়ে। যা সবার পক্ষে কেনা সম্ভব নয়।
মাধনগর বাজারের তরমুজ বিক্রেতা আব্দুল লতিফ বলেন, প্রচণ্ড গরমের কারণে বর্তমানে তরমুজের চাহিদা বেশি। কিন্তু চাহিদার তুলনায় বাজারে আমদানি কম। এজন্য পাইকারি বাজার থেকে বেশি দামে তরমুজ কিনতে হচ্ছে, তাই আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর নাটোরের সহকারী পরিচালক মো. শামসুল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরাও সমস্যাটি অনুধাবন করে কারণ বের করার চেষ্টা করছি। একই সঙ্গে তরমুজ কেজি হিসেবে কেন বিক্রি করা হচ্ছে সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক সুব্রত কুমার সরকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, গ্রীষ্মের তীব্র গরমে হাঁসফাঁস করছে মানুষ। দাবদাহ থেকে সামান্য পরিত্রাণ পেতে তরমুজ পছন্দ করেন। কিন্তু তরমুজের দাম সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে চলে গেছে।
তাপস কুমার/এসপি