উপজেলা নির্বাচনে বিরোধী পক্ষকে সমর্থন করায় ইউপি চেয়ারম্যানকে গুলি
বরিশালের গৌরনদীর মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলু ও তার তিন সহযোগীকে গুলি করে এবং কুপিয়ে জখম করার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হারিছুর রহমান হারিছ ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার (২ মে) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার বাটাজোর বাস টার্মিনাল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এ সময় চেয়ারম্যান প্রার্থী হারিছুর রহমান নিজে সৈকত গুহ পিকলুর বুকের ওপর উঠে গুলি করার চেষ্টা করেন। এরপর আহতরা যেন হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে না পারেন সেজন্য তাদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান স্থানীয় পুলিশ নিয়ে তাদের উদ্ধার করে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।
ঘটনার পরপরই সেখানে বিপুল সংখ্যক পুলিশ উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয় বলে জানিয়েছেন বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার ওয়াহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের খবর পেয়ে সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। হামলাকারীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করতে জেলা গোয়েন্দা ও থানা পুলিশ অভিযান শুরু করেছে। দ্রুতই অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
গৌরনদী উপজেলার সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান সৈয়দা মনিরুন্নাহার মেরী বলেন, গৌরনদীতে বর্তমানে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। গৌরনদীর সাবেক মেয়র বর্তমানে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হারিছুর রহমান এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। তিনি নিজে ঘটনাস্থলে থেকে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলু ও তার তিনজন সহযোগীকে গুলি করে এবং কুপিয়ে জখম করেছে। তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিতে বাধা দিয়েছে। সেখানে পিকলুর স্ত্রী, ভাই ও মা গেলে তাদের ওপরও হামলা চালানো হয়। খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে চেয়ারম্যানসহ আহতদের বরিশাল নিয়ে আসি।
মনিরুন্নাহার মেরী বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়ার জন্য গৌরনদীতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন হারিছুর রহমান। শুধু এবারই নয় আরও অনেক লোককে অনেকবার মারধর করে এলাকা ছাড়া করেছেন তিনি। নির্বাচনে জয়ী হতে এই কাজ করছেন।
জানা গেছে, গৌরনদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারিছুর রহমান গৌরনদী পৌরসভার মেয়র পদ থেকে পদত্যাগ করে উপজেলা চেয়ারম্যান পদের প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন। বিপরীতে আরেক চেয়ারম্যান প্রার্থী মনির হোসেনের পক্ষ হয়ে নির্বাচনে নামেন মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলু। বিষয়টি শুরু থেকেই মেনে নেয়নি হারিছুর রহমান।
বৃহস্পতিবার (২ মে) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বাটাজোর এলাকায় উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী মনির হোসেনকে নিয়ে গণসংযোগে যান সৈকত গুহ পিকলু। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে গণসংযোগে বাধা দেন হারিছুর রহমান সমর্থিত দেলোয়ার হোসেন দিলুর নেতৃত্বে ২০/২৫ জনের একটি সশস্ত্র দল। তারা পিকলু ও তার সঙ্গে থাকা সহযোগীদের মারধর শুরু করেন।
সৈকত গুহ পিকলুর স্ত্রী বিপাশা গুহ বলেন, আমার স্বামীকে আগে থেকেই টার্গেট করেছেন হারিছুর রহমান। তিনি মেয়র পদ থেকে বিশেষ ইঙ্গিতে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচনে এসেছেন। আমরা আরেক চেয়ারম্যান প্রার্থী মনির হোসেনের পক্ষে নির্বাচনে নামি। বিষয়টি হারিছ মেনে না নিয়ে সৈকত গুহ পিকলুকে জীবন থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। আজকে পিকলু ও তার সঙ্গে থাকা ব্যক্তিদের কুপিয়ে জখম করেছে। হারিছুর রহমান নিজে পিকলুর বুকের ওপর পা দিয়ে জিজ্ঞেস করেছে, তোর বাপ কে? তোর বাপ হারিছ!
বিপাশা গুহ বলেন, আমার স্বামীর ওপর তিন দফায় হামলা হয়েছে। হারিছ আসার আগে একবার, হারিছ ঘটনাস্থলে এসে নিজে হামলার নেতৃত্ব দিয়েছে আর হাসপাতালে নেওয়ার পথে। হারিছুর রহমান মনে করে তার পথের কাটা আমার স্বামী। সেজন্য তিনি পরিকল্পিতভাবে আমার স্বামীকে হত্যার জন্য এ হামলা চালিয়েছেন। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
অভিযুক্ত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হারিছুর রহমানের আপন ভাই হাবিবুর রহমান গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ইউপি চেয়ারম্যান পিকলু লোকজন নিয়ে বাটাজোরে যাচ্ছিলেন। পথে হারিছ বাহিনী নিয়ে পিকলুর ওপর হামলা করে। পিকলুকে খুন করতে কোপায় এবং গুলি করে। গৌরনদী হাসপাতালে নেওয়ার পর হারিছ বাহিনী হাসপাতাল অবরুদ্ধ করে রাখে। আহতদের বরিশালে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সে তোলার পর বের হতে পারেনি। পুলিশ এসে অ্যাম্বুলেন্স বের হতে সহায়তা করে।
হামলার সূত্রপাত যিনি করেছেন দেলোয়ার হোসেন দিলু অবশ্য পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন আহত ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান পিকলুর বিরুদ্ধে। দেলোয়ার হোসেন দিলুও বরিশাল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তিনি বলেন, আমি ও আমার ৪ বন্ধু চায়ের দোকানে বসে ছিলাম। পিকলু ও তার সমর্থকরা আমাদের দেখে গুলি করে। আমি আহত হয়েছি। এ ঘটনার বিচার চাই।
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. সৌরভ সুতার বলেন, আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে দুইজনের অবস্থা গুরুতর। চিকিৎসা চলছে এখনো বিস্তারিত কিছু বলা যাচ্ছে না।
চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলুসহ আহতদের দেখতে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীর, বরিশাল সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টুসহ নেতৃবৃন্দ।
উল্লেখ্য, পৌর মেয়র পদ ছেড়ে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়া হারিছুর রহমান হারিছের বিরুদ্ধে জোট বেঁধে তার আপন বড়ভাইসহ ৩ প্রার্থী মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন। হারিছুর রহমান বরিশাল ১ আসনের সংসদ সদস্য ও বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর অনুসারী। দক্ষিণাঞ্চলের এই বর্ষীয়ান নেতার সবুজ সংকেতে পৌর মেয়রের পদ ছেড়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নামেন হারিছুর রহমান বলে গুঞ্জন রয়েছে।
সৈয়দ মেহেদী হাসান/এএএ