২৭ প্রার্থীর মধ্যে ২১ জনই আওয়ামী লীগের
রাত পোহালেই নির্বাচনী প্রচারণা শেষ। বুধবার (৮ মে) রংপুরের কাউনিয়া এবং পীরগাছা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। এ দুই উপজেলায় চেয়ারম্যানসহ তিনটি পদে লড়ছেন ২৭ জন। এই ২৭ প্রার্থীর মধ্যে ২১ জনই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদ-পদবিতে রয়েছেন। বিপরীতে পীরগাছা উপজেলায় তিনটি পদে তিনজন জাতীয় পার্টির প্রার্থী থাকলেও তারা লাঙ্গল প্রতীক নেননি। স্বতন্ত্র প্রতীকেই নির্বাচন করছেন। কাউনিয়াতে জাতীয় পার্টির একজন প্রার্থীও নেই।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী থাকায় প্রভাব বিস্তার ও সহিংসতার মাত্রা বাড়বে। ফাঁকে সুযোগ নেবে অন্যরা। এছাড়াও দীর্ঘ দিন ধরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের মধ্যে প্রকাশ্য বিরোধের পাশাপাশি সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির ঈদ শুভেচ্ছা অনুষ্ঠারে স্লোগান দেওয়া নিয়ে খুনের ঘটনার প্রভাব নির্বাচনের ফলাফলে পড়তে পারে বলেও মনে করছেন অনেকেই।
নির্বাচন কমিশন থেকে পাওয়া তথ্য মতে, কাউনিয়ায় উপজেলা নির্বাচন নিয়ে এবার শুরু থেকেই উত্তেজনা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এখানকার মাঠে থাকা ১৩ প্রার্থীর মধ্যে ১০ জনই আওয়ামী লীগের। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে বর্তমান চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী দুজনই আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী।
জানা গেছে, কাউনিয়ায় উপজেলা চেয়ারম্যান পদে মাঠে থাকা তিনজনের মধ্যে দুজনই আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী। একজন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম মায়া। অপরজন জেলা পরিষদের সদস্য ও ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক। তাদের মধ্যে আছে প্রকাশ্য বিরোধ। তারপরেও নিজেদের পক্ষেই দলীয় সমর্থনের আশা তাদের। বিপরীতে আছে নির্দলীয় কর আইনজীবী হুমায়ুন কবির মুকুল। হেভিওয়েটদের ওয়েট কমিয়ে দিতে চান তিনি।
এই উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে মাঠে দাবড়ে বেড়ানো ৬ জনের মধ্যে মাহমুদুল হাসান পিন্টু কাউনিয়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম-সম্পাদক, মনজুদার রহমান মিলন জেলা কৃষকলীগের সদস্য, সুশান্ত সরকার উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এবং শফিকুল ইসলাম ও জাহাঙ্গীর কবির আওয়ামী লীগের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা। আরেকজন গনেশ কুমার বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মাঠে থাকা চারজনের মধ্যে সেলিনা খাতুন উপজেলা মহিলা লীগের সহ-সভাপতি, রওশন আরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক মহিলা বিষয়ক সম্পাদক এবং রাবেয়া বেগমও মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী। আর আঙ্গুরা খাতুন বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান।
নির্বাচন পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ সংস্থা সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বলছে, কাউনিয়ায় চেয়ারম্যান প্রার্থী দুই আওয়ামী লীগ নেতা দুই শিবিরে বিভক্ত। শুধু তাই নয়, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রীর ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে খুনের ঘটনায় এক পক্ষ বাদী-অপর পক্ষ বিবাদী। দলীয় তদন্ত কমিটি হলেও বিরোধ নিরসন হয়নি এখনো। তাই এই নির্বাচনকে ঘিরে মাঠের পরিবেশ নিয়ে উত্তেজনা চলমান। প্রশাসনকে চ্যালেঞ্জ নিয়ে নির্বাচন সুষ্ঠু করতে হবে।
নির্বাচন অফিস থেকে পাওয়া তথ্য মতে, একটি পৌরসভা ও ৬টি ইউনিয়নের ৬৩টি ওয়ার্ডের ৯৩টি ভোটকেন্দ্রের ৫১৭টি স্থায়ী এবং ১৮টি অস্থায়ী ভোটকেন্দ্রে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। দুইজন হিজড়াসহ এখানে ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৪০ হাজার ৫৪৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৫০৯ এবং মহিলা ১ লাখ ৪ হাজার ৩২ জন।
অন্যদিকে পীরগাছা উপজেলা নির্বাচনে তিনটি পদে লড়াইয়ে মাঠে থাকা ১৪ প্রার্থীর মধ্যে ১০ জনই আওয়ামী লীগের। তিনজন জাতীয় পার্টির ও একজন বিএনপির। উম্মুক্ত হলেও কেউই নেননি দলীয় প্রতীক। একাধিক প্রার্থী হলেও বিজয়ে সমস্যা দেখছে না আওয়ামী লীগ। আর একাধিক প্রার্থী থাকার সুবিধা নিয়েই বিজয়ের স্বপ্ন দেখছে জাতীয় পার্টি।
পীরগাছা উপজেলা নির্বাচনে মাঠে থাকা চার চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে তিনজনই আওয়ামী লীগের প্রথম সারির নেতা। তছলিম উদ্দিন চৌধুরী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, আব্দুল্লাহ আল মিলন সাধারণ সম্পাদক, মনোয়ারুল ইসলাম মাসুদ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি।
এখানে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরিফুল হক মিলনের মনোনয়ন বৈধ হলেও তিনি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এর বিপরীতে রয়েছেন জাতীয় পার্টির সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আবু নাছের শাহ মো. মাহবুবার রহমান। বিগত সময়ে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়াসহ নেতাকর্মীদের বড় অংশ সঙ্গে থাকার দাবি নিয়ে বিজয়ী হওয়ার নানা যুক্তি আওয়ামী লীগ নেতা মিলনের। আর একাধিক প্রার্থী থাকার সুবিধার পাশাপাশি নিজের দুর্ণীতিমুক্ত থাকার ইমেজে জয়ের আশা জাপা প্রার্থী মাহবুবের।
ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে মাঠে থাকা ৪ জনের মধ্যে শাহ মো. শারেখ খন্দকার জয় উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জাফর ইকবাল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। এছাড়াও আব্দুর রহিম জাতীয় ছাত্র সমাজের সাবেক উপজেলা যুগ্ম আহ্বায়ক এবং ফরহাদ হোসেন অনু উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ৬ জনের মধ্যে ৫ জনই উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের শীর্ষসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেত্রী। এরা হলেন- শারমীন আখতার, ইসরাত জাহান, জরিনা বেগম, তানজিনা আফরোজ ও মাহমুদা খাতুন। এখানেও জাতীয় পার্টির একক প্রার্থী দলটির পীরগাছা শাখার মহিলা বিষয়ক সম্পাদক রেহেনা বেগম।
নির্বাচন বিশ্লেষক সংস্থা সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) রংপুর মহানগর সভাপতি খন্দকার ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলেন, উম্মুক্তভাবে স্থানীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী থাকায় সুযোগ নেবে অন্যরা।
নির্বাচন অফিস জানিয়েছে, পীরগাছা উপজেলায় তিনজন হিজড়াসহ ২ লাখ ৮১ হাজার ৬৯৮ ভোটার ১১৩টি স্থায়ী ও ৭০টি অস্থায়ী কেন্দ্রের ৭৬০টি কক্ষে ভোট দেবেন। এর মধ্যে ১ লাখ ৩৯ হাজার ১৬৭ পুরুষ ও ১ লাখ ৪২ হাজার ৫২৮ জন মহিলা ভোটার রয়েছেন।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরএআর