কোরবানির পশু প্রস্তুতে ব্যস্ত সময় পার করছেন সাতক্ষীরার খামারিরা
পবিত্র ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে কোরবানির পশু প্রস্তুতে ব্যস্ত সময় পার করছেন সাতক্ষীরার খামারিরা। এ বছর সাতক্ষীরাতে কোরবানিযোগ্য ১ লাখ ৫৭৭টি পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। এই পশুগুলো মানুষের বাসাবাড়ি ছাড়াও খামারে লালন-পালন করা হচ্ছে। তবে পশু খাদ্যের মূল্য বেশি হওয়ার প্রভাব পড়বে কোরবানির হাটে।
জানা গেছে, কোরবানিকে কেন্দ্র করে পশুর মালিক, ব্যবসায়ী ও কোরবানি দাতাদের মধ্যে হিসেব-নিকেশ শুরু হয়ে গেছে। সাপ্তাহিক হাট, পাড়া-মহল্লায় গরু ব্যবসায়ীদের আনাগোনাও বেড়েছে। শুধু তাই নয়, একটু কম দামের আশায় আগে থেকে অনেকেই পশুর বায়না করে রাখছেন। তবে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের দাবি-পশু খাদ্যের দামের প্রভাব পড়বে গরুর হাটে।
সাতক্ষীরা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরাতে কোরবানির জন্য পশু প্রস্তুত করেছে ১ লাখ ২৯ হাজার ৭০৮টি। তবে জেলার চাহিদা রয়েছে ১ লাখ ৫৭৭টি। এর মধ্যে গরু রয়েছে ৪৫ হাজার ২৬৫টি, মহিষ ৭৩৭টি, ছাগল ৭৬ হাজার ৫৯২টি ও ভেড়া রয়েছে ৬ হাজার ৩১১টি। সংশ্লিষ্টদের দাবি, প্রতিবছরের ন্যায় এবারও স্থানীয় চাহিদার তুলনায় পশু বেশি রয়েছে।
সাতক্ষীরা তালতলা গ্রামের খামারি আব্দুল কাদের বলেন, আমার খামারে বর্তমান কোরবানিযোগ্য পশু আছে প্রায় ৩০টি। গো খাদ্যের যে দাম সে ক্ষেত্রে লাভ করা খুব টাফ ব্যাপার তারপরও এটা আমাদের পেশা তাই না করলে নয়। আমরা বাংলাদেশের চাষি কীভাবে চাষ করলে ফসল ফলাতে পারি সেটা বুঝি তবে এখন সবকিছুতেই ব্যয় বেড়েছে। সার, মাটি, খাদ্যে খরচ করার পরে দেখা যাচ্ছে বাইরে থেকে এগুলো আমদানি করে আমাদের বাজারটা নষ্ট করে দেয় অনেক সময়। এই জন্য আমরা ফসল তৈরি করতে পারি না।
খামারি আসাদুজ্জামান বলেন, আমি ১৯৯৬ সাল থেকে গরু পালছি। এ বছর ৫০ থেকে ৬০টি গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা আছে। তবে গতবছরের তুলনায় এ বছর গরুর খাবারের দাম যেভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, সেক্ষেত্রে গরুর দাম বেশি হওয়াটা স্বাভাবিক। গতবছরের তুলনায় একটু দাম বেশি না হলে খামারিরা বাঁচবে না। কমবেশি পশুর হাটে কেনাকাটা শুরু হয়েছে। শহরে যারা আছে বেশিরভাগ মুখোমুখি এসে কেনাকাটা করে। আমরাও এখন থেকে বিক্রি শুরু করেছি। তবে অনেকের জায়গা না থাকায় কিনে খামারে রেখে দেয় আমরাও তাদের এ সুযোগ দেয়।
খামারি নাজমুল হাসান বলেন, এবারও কোরবানির পশুর দাম চড়া হবে। কারণ উৎপাদন খরচ বেশি হয়েছে। কোরবানির ঈদের অন্তত ১৫ দিন আগে থেকে বিক্রির চেষ্টা করব। যদি না হয় এক সপ্তাহ আগে হাটে তুলব। আশা করছি, এবার ঈদে ভালো দাম পাব।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা আবাদের হাটের ইজারাদার হাবিবুর রহমান হবি বলেন, সপ্তাহে শনিবার ও মঙ্গলবার আবাদের হাট বসে। আজ হাটের দিন ছিল, মোটামুটি কোরবানির পশু আসা শুরু হয়েছে। তবে আগামী মঙ্গলবার হাট আরও বড় হবে। হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের উপস্থিতি বেড়েছে। ঈদের ১০ থেকে ১৫ আগে হাট জমে উঠবে।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এস এম মাহবুবুর রহমান জানান, সাতক্ষীরাতে বিগত বছরের তুলনায় এবার প্রায় ২৯ হাজার পশু উদ্বৃত্ত থাকবে। দানাদার জাতীয় খাদ্যের দাম বৃদ্ধি হাওয়ায় সাতক্ষীরার খামারিরা ঘাসের উপর নির্ভরশীল হয়েছে। ঘাস পাঁচ থেকে সাত টাকা কেজি এবং দানাদার জাতীয় ৫৫ থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত। ঘাসের উপর মোটামুটি ৭০ শতাংশ কৃষক নির্ভরশীল হয়ে গেছে। ফলে গতবারে যেমন বাজার স্বাভাবিক ছিল, অনুরূপভাবে এবারও স্বাভাবিক থাকবে।
মোহাম্মদ মিলন/এএএ