সেই ভিক্ষুকের বিরুদ্ধে ধান চুরির মামলা

ধান চুরির অভিযোগে অমানবিক ও নির্মম প্রহারের শিকার সেই ভিক্ষুক আব্দুল বারেকের বিরুদ্ধে নেত্রকোনার মদন থানায় একটি মামলা রুজু করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৯ এপ্রিল) দুপুরে ওই ভিক্ষুককে নির্যাতনকারী মদন উপজেলার বারঘরিয়া গ্রামের বাসিন্দা মাসুদ মিয়ার ভাই খায়রুল মিয়া বাদী হয়ে এ মামলাটি করেন।
এদিকে মামলা দায়েরের পর থানা হেফাজতে থাকা ভিক্ষুক আব্দুল বারেককে বৃহস্পতিবার বিকেলে নেত্রকোনা আদালতে পাঠানো হয়েছে।
সন্ধ্যায় বিষয়টি নিয়ে মদন থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস আলমের সঙ্গে কথা হলে তিনি ঢাকা পোস্টকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
ওসি ফেরদৌস আলম বলেন, ভিক্ষুক আব্দুল বারেকের বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ থাকায় মামলাটি রুজু করা হয়েছে। তবে বিষয়টির তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অপরদিকে নির্যাতনকারী মাসুদ মিয়ার বিরুদ্ধেও ভিক্ষুক আব্দুল বারেকের স্ত্রী পারভীন আক্তার বাদী হয়ে একই সময় ৩২৫ ধারায় একটি মামলা রুজু করেছেন বলে ওসি ফেরদৌস আলম নিশ্চিত করেছেন।
ওসি বলেন, ওই ভিক্ষুককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতনের ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পরপরই গত বুধবার রাতে নির্যাতনকারী গোবিন্দশ্রী বারঘরিয়া গ্রামের মাসুদ মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। ভিক্ষুক আব্দুল বারেকের সঙ্গে মাসুদকেও নেত্রকোনা আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
এদিকে ধান চুরির অভিযোগে ভিক্ষুক আব্দুল বারেকের বিরুদ্ধে চুরির মামলা রুজু হওয়ার ঘটনায় এলাকার সচেতন মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মদন পৌর শহরের এক বাসিন্দা জানান, ভিক্ষুক আব্দুল বারেক যদি কিছু ধান চুরি করেও থাকেন তবুও তাকে এভাবে নির্মম প্রহার করাটা মানবাধিকারের লঙ্ঘন। একে তো তিনি চুরির অভিযোগে অমাবনিক নির্যাতনের শিকার হলেন। আবার চুরির মামলার আসামিও হলেন।
নান্দাইলের বনহাটি গ্রামের মৃত আব্দুল গফুরের ছেলে ভিক্ষুক আব্দুল বারেকের স্ত্রী পারভীন আক্তার বলেন, প্রতি বছর বৈশাখ মাসে আমার স্বামী গোবিন্দশ্রী এলাকায় ধান ভিক্ষা করতে যান। এ বছর মাসুদের বাড়িতে তিনি ভিক্ষা করা ধানগুলো একত্র করে রেখেছিলেন।
তিনি আরও বলেন, মাসুদের ভাই জুয়েল আমার স্বামীর একত্র করা ৯ মণ ধান নিয়ে যায়। এ নিয়ে তাদের মধ্যে প্রথমে কথা কাটাকাটি হয়। পরে মাসুদ এসে আমার স্বামীকে চুরির অপবাদ দিয়ে বেঁধে নির্যাতন করেছেন। আমার স্বামী কোনোদিন চুরি করতে পারেন না।
পারভীন আক্তার বলেন, এখন আবার তারা আমার স্বামীর নামে চুরির মামলা করেছে। আমি আমার স্বামীর নামে করা মামলা বাতিল চাই এবং আমার স্বামীকে মারপিট করার বিচার চাই।
গত বুধবার ধান চুরির অভিযোগে মাসুদ মিয়া ভিক্ষুক আব্দুল বারেককে খুঁটিতে বেঁধে অমানবিক নির্যাতন করেন। পরে ধানসহ মদন থানা পুলিশের কাছে তাকে সোপর্দ করেন তারা। পুলিশ আব্দুল বারেকের চিকিৎসা করানোর পর থানা হেফাজতে নিয়ে রাখেন।
জিয়াউর রহমান/এমএসআর