দুই এমপির সমর্থনে আ.লীগে বিভক্তি, বিজয়ী হলেন যিনি

দ্বিতীয় ধাপে জয়পুরহাট সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ৪৪ হাজার ৪৭০ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসানুজ্জামান মিঠু। তিনি ৭ হাজার ৪৮৫ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন।
এ নির্বাচনে হাসানুজ্জামান মিঠু জয়পুরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য সামছুল আলম দুদুর সমর্থন পেয়েছিলেন। হাসানুজ্জামান মিঠুর কাছে ধরাশায়ী হয়েছেন জয়পুরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনসহ আওয়ামী লীগের একটি অংশের সমর্থন পাওয়া জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এ ই এম মাসুদ রেজা। যদিও প্রকাশ্যে দুই এমপি কিছু বলেননি। এ ছাড়া সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনও ধরাশায়ী হয়েছেন। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন মন্ডলসহ আওয়ামী লীগের আরেকটি অংশের সমর্থন পেয়েছিলেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ঘোষিত ফলাফলে দেখা গেছে, হাসানুজ্জামান মিঠু মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৪৪ হাজার ৪৭০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আনারস প্রতীক নিয়ে এ ই এম মাসুদ রেজা পেয়েছেন ৩৬ হাজার ৯৮৫ ভোট। এ ছাড়া শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে মাঠ চষে বেড়ানো আনোয়ার হোসেন ঘোড়া প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন মাত্র ২ হাজার ৯৭৪ ভোট। একটি পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়ন গঠিত জয়পুরহাট সদর উপজেলায় মোট ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৪৬ হাজার ৩৪৫ জন। এর মধ্যে ৮৯ হাজার ৫৭২ জন ভোট দিয়েছেন। যা মোট ভোটের ৩৫ দশমিক ৬০ শতাংশ।
আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলা পরিষদের এই নির্বাচন ঘিরে স্থানীয় নেতারা প্রথমে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছিলেন। একভাগ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের পক্ষে এবং আরেক ভাগ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসানুজ্জামান মিঠুর পক্ষে। এই দুজনের মধ্যে হাসানুজ্জামান মিঠু জয়পুরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য সামছুল আলম দুদুর সমর্থন পান। আর আনোয়ার হোসেন আওয়ামী লীগের সমর্থন পেলেও এমপির সমর্থন পাননি। হঠাৎই জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এ ই এম মাসুদ রেজা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, জয়পুরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের সমর্থন পেয়ে নিজেকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেন।
তারপর থেকেই দলের নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েন। সামছুল আলম দুদু এমপির সমর্থন পেয়ে মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী হাসানুজ্জামান মিঠুর নিবার্চনী প্রচারণায় তার পক্ষে দাঁড়িয়ে যান আওয়ামী লীগের একটি অংশ। শেষ ভাগে এসে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আরিফুর রহমান রকেটও তার পক্ষ নেন। আর আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপির সমর্থন পাওয়া এ ই এম মাসুদ রেজার আনারস প্রতীকের পক্ষে দাঁড়িয়ে যান জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জয়পুরহাট পৌরসভার মেয়র মোস্তাফিজুর রহমানসহ আওয়ামী লীগের আরেকটি অংশ ও স্বপন এমপির অনুসারীরা। এদিকে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী আনোয়ার হোসেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন মন্ডলসহ আওয়ামী লীগের আরেক অংশের সমর্থন পেয়েছিলেন।
নেতাকর্মীরা আরও জানান, শেষ সময়ে এসে বেশ জমে উঠেছিল এই উপজেলার নির্বাচন। আওয়ামী লীগের তিন প্রার্থী পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছিলেন। নিজেদের মর্যাদা ও আধিপত্য ধরে রাখতে তিন প্রার্থীকে দুই এমপি ও জেলার আওয়ামী লীগের এক নেতার সমর্থন দেওয়ায় উপজেলায় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েন। নির্বাচনী পথসভায় প্রার্থী ও আওয়ামী লীগ নেতারা একে-অপরকে দোষারোপ করে বক্তব্য দেন।
চম্পক কুমার/এএএ