এমপির বিরুদ্ধে চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণার অভিযোগ

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে স্থানীয় সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে এক চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে প্রকাশ্যে প্রচারণার অংশ নেওয়ার অভিযোগ এনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন আরেক চেয়ারম্যান প্রার্থী। ইতোমধ্যে আসাদুজ্জামান বাবলু নামের ওই সংসদ সদস্যের ভোট প্রার্থনার একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২৩ মে) প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে দেওয়া ঘোড়া প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী (বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত) মোকাররম হোসেন সুজন অভিযোগ করেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান বাবলু চেয়ারম্যান প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাপ-পিরিচ প্রতীকের রুহুল আমিনের পক্ষে প্রকাশ্যে প্রচারণায় অংশ নিয়ে নির্বাচিত করার আহ্বান জানাচ্ছেন। এতে ভীতির পাশাপাশি সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ভোটদানে অনাগ্রহ ও ভোট থেকে বিরত থাকার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ‘নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তৃতীয় ধাপে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় আগামী ২৯ মে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। উল্লেখ্য আবশ্যক, নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ঘোষিত যে, সংসদ সদস্যগণ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সম্পৃক্ত থাকতে পারবেন না। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের রংপুর-০১, সংসদীয় আসন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ-১৯ এর মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব মো. আসাদুজ্জামান বাবলু এমপি মহোদয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কাপ পিরিচ মার্কা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জনাব আলহাজ মো. রুহুল আমির পক্ষে সক্রিয়ভাবে নির্বাচনী প্রচারণা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। এমনকি তার স্থানীয় প্রতিনিধি আব্দুল মতিন অভিসহ সমর্থকদেরকেও উল্লিখিত প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করেন। একই সঙ্গে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য তিনি বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তার এহেন কর্মকাণ্ডে জনমনে ভীতির সঞ্চার সৃষ্টি করেছে। ফলশ্রুতিতে সাধারণ ভোটারদের মাঝে ভোটদানে অনাগ্রহ এবং ভোটপ্রদান থেকে বিরত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। আমার গভীর বিশ্বাস নির্বাচনকালীন এমপি মহোদয় নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান করলে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। এমতাবস্থায় রংপুর-১ আসনের এমপি মহোদয় এবং তার প্রতিনিধিসহ সমর্থকদেরও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সম্পৃক্ততা কিংবা অনৈতিক প্রভাব বিস্তারের বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে কৃতজ্ঞতার পাশে আবদ্ধ করবেন।’
এই অভিযোগ প্রসঙ্গে রংপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান বাবলু বলেন, আমি কারো পক্ষেই নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেইনি। যিনি অভিযোগ করছেন তিনি বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য তিনি এ ধরনের অভিযোগ তুলেছেন। এটা আদৌ সত্য নয়। ভোটের দিনই এরা আবার বলবে ভোট সুষ্ঠু হয়নি, এই বলে নির্বাচন বয়কট করবে। এটা বিএনপি-জামায়াতের চরিত্র। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ভোট প্রভাবমুক্ত ও সুষ্ঠু হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ওই প্রার্থী ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ বিঘ্ন করার জন্য এ ধরনের অভিযোগ তুলেছেন।
অভিযোগকারী বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা ও গঙ্গাচড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী মোকাররম হোসেন সুজন বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন ও প্রধানমন্ত্রীর কোনো নির্দেশ এবং নীতিমালায় মানছেন না এমপির লোকজন। তারা বিভিন্ন স্থানে গিয়ে এমপির নাম ভাঙ্গিয়ে ভোট চাচ্ছেন, এটা খুবই দুঃখজনক। আমি বারবার সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবগত করেছি তাদের কাছ থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিতে বাধ্য হয়েছি। আমি চাই এমপি ও তার লোকজনের প্রভাবমুক্ত ভোট পরিবেশ সৃষ্টি করুক।
এ বিষয়ে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ তামান্না বলেন, প্রার্থী সুজন অভিযোগটি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে দিয়ে আমাদের অনুলিপি দিয়েছেন। এমপিরা এলাকায় থাকলে একটা প্রভাব দেখা যায়। আমরা বিষয়টি মাননীয় এমপিকে মৌখিকভাবে জানিয়েছি। এছাড়াও বিষয়টি রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ডিসি স্যারকেও জানানো হয়েছে। তাদের পক্ষ থেকেও ওনাকে বিষয়টি মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে। তারা এ বিষয়ে আচরণবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন।
রুহুল আমিনের পক্ষে ভোট চাওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে দেখা যায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কাপ-পিরিচ প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী রুহুল আমিনের সভাপতিত্বে নোহালী ইউনিয়নের আনোয়ারমারী কলেজে একটি প্রীতি ফুটবল ম্যাচের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন স্থানীয় এমপি আসাদুজ্জামান বাবলু।
এ সময় এমপি বাবলু বলেন, ‘এই অনুষ্ঠানের সম্মানিত সভাপতি আমাদের গঙ্গাচড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ রুহুল আমীন চাচা। এই মাসের ৭ তারিখে আমি গেছি প্রধানমন্ত্রীর কাছে। তিনি আমাকে বলেছেন তোমার নোহালীবাসি লোকজন কেমন আছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিস্তারিত কথা বলার পরে পরেশ দাদার কথা বললাম। তিনি অসুস্থ। নেত্রী ওনাকে হেল্প করতে হবে। তারপর আমি বললাম। আমার উপজেলা সভাপতি ও চেয়ারম্যান নির্বাচন করতে যাচ্ছে। ওনি একটু আপনার সঙ্গে দেখা করতে চায়। তখন নেত্রী বললেন ঠিক আছে। সঙ্গে সঙ্গে চাচাকে ফোন দিলাম, বললাম আসেন, নেত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। পরের দিন আমরা দেখা করলাম। নেত্রী ভালো করেই চেনেন নোহালীর মানুষকে। তিনি একাধিকবার এসেছিলেন গঙ্গাচড়ায়।’
এরপর এমপি বাবলু বলেন, ‘উনি (রুহুল আমীন) একাধিকবার উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন। আমার জন্মের আগেও উনি (রুহুল আমীন) উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন। এবার আমি এমপি হয়েছি। উনি উপজেলা চেয়ারম্যান।
এর আগে আমার সঙ্গে উনি উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচন করেছিলেন, ২০১৪ সালে। আমরা চাচা-ভাতিজা। আমি নির্বাচিত হয়েছিলাম। উনি নির্বাচিত হতে পারেন নাই। পরের বার (২০১৮) আমি নির্বাচন করি নাই। উনি নির্বাচিত হয়েছেন। এবারও নির্বাচন করছেন। সবারই একটা পজেটিভি থাকা উচিত। আমি আশা করি সবাই ওনাকে সহযোগিতা করবেন। পাশে থাকবেন।’
আগামী ২৯ মে তৃতীয় দফায় এই উপজেলার ভোটগ্রহণ হবে। এরই মধ্যে প্রার্থীরা ছুটছেন ভোটারদের কাছে। জমে উঠেছে প্রচারণা। চলছে অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এএএ