মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন দুর্গতরা

ফেনীতে ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। বাতাসের তীব্রতায় উপকূলীয় উপজেলা সোনাগাজীতে বেশকিছু ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিভিন্নস্থানে লাইনে গাছপালা উপড়ে পড়ায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে জেলার প্রায় সাড়ে ৪ লাখ গ্রাহক।
জানা গেছে, জেলা শহরে মধ্যরাত পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক থাকলেও তারপর থেকে বেশির ভাগ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ঝড়ো হাওয়ায় বিদ্যুতের লাইনে গাছপালা উপড়ে পড়ায় জেলার প্রায় সাড়ে ৪ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বেলা ১২টার পর বাতাসের তীব্রতায় উপকূলীয় উপজেলা সোনাগাজীতে বেশকিছু ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে দুশ্চিন্তায় সময় পার করছেন দুর্গতরা।
সোনাগাজী দক্ষিণ চরচান্দিয়া এলাকার মো. রাসেল বলেন, মা, বোন, স্ত্রী ও এক সন্তান নিয়ে আঞ্চলিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের পাশে সরকারি জায়গায় একটি ঘর নির্মাণ করে বসবাস করছিলাম। আজকে বাতাসে আমাদের মাথা গোঁজার একমাত্র সম্বল ভেঙে পড়েছে। এখনো অনেক বাতাস হচ্ছে। রাতে পরিবারের ৫ সদস্য কোথায় থাকবো সেটিও জানি না।

রফিকুল ইসলাম নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, রোববার রাত থেকে বিদ্যুৎ নেই। বাতাসে কিছু গাছ উপড়ে পড়ে বেশকিছু ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় চলে গেলেও এখনও ঝোড়ো হাওয়া বইছে। বৃষ্টিতে বের হওয়ার উপায় নেই।
শহরের ডাক্তারপাড়ার বাসিন্দা আবু তৈয়ব বলেন, মধ্যরাত থেকে বিদ্যুৎ সংযোগে সমস্যা করছে। সারাদিনে মাত্র দেড় ঘণ্টার মতো বিদ্যুৎ ছিল। তীব্র বাতাস ও বৃষ্টিতে ঘরে বসেই সময় কাটাচ্ছি।
সোনাগাজী দক্ষিণ চরচান্দিয়া এলাকার ইউপি সদস্য মো. এসকান্দার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে তীব্র বাতাসে দক্ষিণ চরচান্দিয়া এলাকায় অন্তত ১০টি ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গাছপালা উপড়ে পড়ে কিছু ঘর ভেঙে গেছে। এখনও বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় ও বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় ক্ষতির চূড়ান্ত তথ্য জানা সম্ভব হচ্ছে না। আবহাওয়া অনুকূলে এলে ক্ষতিগ্রস্তদের ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মাধ্যমে সহযোগিতা করা হবে।
ফেনী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার হাওলাদার মো. ফজলুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাত থেকেই ঝোড়ো হাওয়ায় বিভিন্নস্থানে বিদ্যুতের সংযোগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সকাল ৮টা থেকে পুরোপুরি সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে এলে ক্ষতিগ্রস্ত লাইন মেরামত করে সংযোগ দেওয়া হবে।
সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখন পর্যন্ত উপজেলায় বড় ধরনের ক্ষতি কিংবা হতাহতের তথ্য নেই। বাতাসে কিছু ঘরের টিন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আবহাওয়া অনুকূলে না আসায় এখনো ক্ষতির চূড়ান্ত তথ্য জানা সম্ভব হয়নি।
ফেনীর জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে গতকাল রাত থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে আসা মানুষদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে বাঁধের পরিস্থিতি ও নদীর পানি বৃদ্ধির গতিবিধি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। উপকূলীয় উপজেলা সোনাগাজীতে শুকনা খাবারের জন্য ২ লাখ টাকা, ২ মেট্রিক টন চাল, এক লাখ টাকার শিশুখাদ্য ও এক লাখ টাকার গো-খাদ্য ক্রয়ের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
তারেক চৌধুরী/এমএএস