ভোটের আগের রাতে পোলিং ও সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার পরিবর্তন

নাটোরে ভোটের আগে রাতে (মঙ্গলবার) পোলিং অফিসার ও সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার পরিবর্তন করা হয়েছে। হঠাৎ এ পরিবর্তনের ঘটনায় জল্পনা-কল্পনা তৈরি হয়েছে সচেতন মহলে।
একইসঙ্গে কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই না করে সাংবাদিককে পর্যবেক্ষণ কার্ড দেওয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। যাকে-তাকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের কার্ড দেওয়ায় নির্বাচনের পরিবেশ বিঘ্ন হওয়ার আশঙ্কা করছেন জেলার মূলধারার সাংবাদিকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বড়াইগ্রাম উপজেলা নির্বাচনে কমপক্ষে ৪ জন পোলিং অফিসার পরিবর্তন করা হয়েছে অন্যদিকে গুরুদাসপুর উপজেলায় ১ জন পোলিং অফিসার এবং একজন সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার পরিবর্তন হয়েছে। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন খোদ সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা।
সরেজমিনে মঙ্গলবার (২৮ মে) রাত সাড়ে ৯টার দিকে বড়াইগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসে গিয়ে দেখা যায়, ১০-১৫ জন লোক সেখানে ভিড় জমিয়েছেন। জানতে চাইলেই বেরিয়ে আসে পোলিং অফিসার পরিবর্তনের খবর। উপস্থিত কয়েকজন জানান, তাদের চিঠি তৈরি হয়েছে, স্বাক্ষরের অপেক্ষায় রয়েছেন। চিঠি পেলেই কেন্দ্রে যাবেন। সাংবাদিক পরিচয়ে এতো রাতে চিঠি নিতে আসার কারণ জানতে চাইলে একে একে সবাই ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
এদিকে, ফেসবুক পেজ ও অনিবন্ধিত অনলাইন ও পত্রিকার পরিচয় দিয়ে সাংবাদিক নন এমন বেশ কয়েকজন নারী ও পুরুষ পেয়েছেন নির্বাচন পর্যবেক্ষণের কার্ড। বিষয়টি নজরে এলে উপজেলা সহ জেলার মূলধারার গণমাধ্যম কর্মীরা এর প্রতিবাদ জানান।
দৈনিক মানবজমিন ও বৈশাখী টেলিভিশনের নাটোর প্রতিনিধি ইসাহাক আলী বলেন, অপসংবাদিকরা যদি এভাবে নির্বাচনের পর্যবেক্ষণ কার্ড পেয়ে যায় তাহলে নির্বাচনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতে পারে। যেহেতু তাদের পেশাদারিত্ব নেই সেখানে যেকোনো প্রার্থীর হয়ে কাজ করে তারা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে।
এক্ষেত্রে নির্বাচন কর্তৃপক্ষ কার্ডের জন্য আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের ক্ষেত্রে তাদের উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছে বলে মনে করেন এই সাংবাদিক।
বড়াইগ্রাম উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের উপ-প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আব্দুল মতিন বলেন, বেশকিছু পোলিং অফিসার ফোন বন্ধ রেখেছেন। তাদের সাথে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। সেকারণে তাদের পরিবর্তন করে নতুন পোলিং অফিসার নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। কিছুক্ষণ আগেই চারজনের নাম পরিবর্তন করে সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কাছে পাঠানো হয়েছে।

আরও পড়ুন
ভোটের আগের রাতে পোলিং অফিসার পরিবর্তনের বিষয়ে জানতে চাইলে বড়াইগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার লায়লা জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, কিছু নাম ওভারলেপিং হয়েছিল সেসব পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছে।
তবে কতজন এমন হয়েছে সেটি নিশ্চিত করতে পারেননি এই কর্মকর্তা।
বড়াইগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান পদে আনারস মার্কা প্রতীকের প্রার্থী মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ভোটের আগের রাতে পোলিং অফিসার পরিবর্তন কিছুটা সন্দেহের বিষয়। তবে আমরা বিশ্বাস রাখছি সুষ্ঠু এবং দুর্নীতিমুক্ত নির্বাচন হবে।
বড়াইগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান পদে ঘোড়া মার্কা প্রতীকের প্রার্থী মো.আব্দুল কুদ্দুস বলেন, কেন ভোটের আগের রাতে পোলিং অফিসার পরিবর্তন হলো সেটা নিয়ে এখনই কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছি না। আশা রাখি সুষ্ঠু ভোট হবে।
গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার সালমা আক্তার বলেন, একজন নারী পোলিং অফিসারের ৮ মাস বয়সী শিশু অসুস্থ এবং একজন সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারের নাম দুইবার তালিকায় ওঠায় আরেকজন নতুন সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার নেওয়া হয়েছে। তবে সেটা মঙ্গলবার দিনের আলোতে সবার সামনেই।

নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আরিফ হোসেন বলেন, সব নির্বাচনেই এভাবে জরুরি কিছু পোলিং অফিসার ও সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার বা প্রিসাইডিং অফিসার পরিবর্তন করা হয়। এটা নতুন কিছু নয় আর এতে তেমন কোনো সমস্যাও নেই।
পর্যবেক্ষণ কার্ডের বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, যারা আবেদন করেছে তারা সবাই উপজেলার সাংবাদিক এবং সবার পরিচিত হওয়ার কথা। আমরা সবাইকে বিশ্বাস করেছি। যদিও কার্ডপ্রাপ্ত কোনো সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকে আমাকে জানালে আমি যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেব।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) নাটোর জেলা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বুলবুল আহমেদ বলেন, পোলিং অফিসার, প্রিসাইডিং অফিসার এবং সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার যারা নিয়োগ পেয়েছেন তারা অবশ্যই যাচাই-বাছাই হয়েই নিয়োগ পেয়েছেন। ভোটের আগের রাতে এভাবে পরিবর্তন জনমনে সন্দেহের সৃষ্টি করে। নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয় এমন সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই নেওয়া উচিত নয়। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা প্রয়োজন। এমনও যদি হয় যে, কোনো পোলিং অফিসার আসেনি বা ফোন বন্ধ সেটা দায়িত্ব অবহেলার সামিল। নির্বাচনী দায়িত্ব কেউ যদি অবহেলা করেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি কমিশনের কাছে। সেই সাথে সাংবাদিক নন এমন যারা নির্বাচনের পর্যবেক্ষণ কার্ড পেয়েছেন, তারা নির্বাচনকে ম্যানুপুলেট করতে পারেন, তাদের নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখনো সময় রয়েছে।
গোলাম রাব্বানী/এমএ