ফরিদপুরে নির্বাচন স্থগিত করার প্রতিবাদে শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ

ফরিদপুর মোটর ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের ত্রি-বার্ষিক নির্বাচন স্থগিত করার প্রতিবাদে টায়ারে আগুন দিয়ে পরিবহন শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন। বৃহস্পতিবার (৬ জুন) দুপুর আড়াইটার দিকে ফরিদপুর শহরের নতুন বাসস্ট্যান্ডের সামনে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করা হয়।
অবরোধকারীরা সড়কে ইট দিয়ে ও একটি টায়ারে আগুন দিয়ে এ কর্মসূচি শুরু করে। অবরোধে দুই শতাধিক শ্রমিক অংশ নেন। শ্রমিকরা মহাসড়কের ওই জায়গায় কোন ধরণের যানবাহন চলতে দিচ্ছে না। সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিট পর্যন্তও শ্রমিকদের অবরোধ অব্যাহত ছিল। এজন্য ফরিদপুর থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি।
শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামীকাল শুক্রবার (৭ জুন) ফরিদপুর মোটর শ্রমিক ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের ত্রি-বার্ষিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। তবে শহরের দক্ষিণ কোমরপুর মহল্লার বাসিন্দা শ্রমিক মো. মাহাবুবউদ্দিন মোল্লা ঢাকার দ্বিতীয় শ্রম আদালতে এ নির্বাচনের বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে নির্বাচন স্থগিতের জন্য মামলা করেন। এর প্রেক্ষিতে ওই আদালতের চেয়ারম্যান জেলা ও দায়রা জজ মো. আব্দুল হামিদ গতকাল বুধবার (৫ জুন) নির্বাচনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেন। এর প্রতিবাদে শ্রমিকরা অবরোধ কর্মসূচি পালন করছেন।
বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে সরেজমিনে ফরিদপুর নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, অবরোধকারীরা ইট ফেলে ও টায়ারে আগুন দিয়ে মহাসড়কটি আটকে রেখেছে। প্রায় দুই শতাধিক শ্রমিক কাঠ ও গাছের ডালের লাঠি নিয়ে পাহারা দিচ্ছেন এবং কোনো ধরনের যানবাহনকে ওই এলাকা অতিক্রম করতে দিচ্ছেন না। এ সময় ইজিবাইকচালকদের সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করেছেন তারা।
ওই পথ দিয়ে দুই-একটি ইজিবাইক চলাচলের চেষ্টা করলেও পুলিশের সামনেই তাদের ধরে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। পুলিশের সামনে এমন বেপরোয়া ঘটনা ঘটলেও পুলিশ তাদের বাধা দিচ্ছে না। রোগী বহনকারী দুই-একটি ইজিবাইক পুলিশের পীড়াপীড়ির কারণে অবরোধকারী শ্রমিকরা যেতে দিচ্ছে। দেখা যায়, ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ওসি মো. হাসানুজ্জামান নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সড়কে দাঁড়িয়ে আছেন। তাকে একদল শ্রমিক ঘিরে রেখেছেন।
ফরিদপুর মোটর ওয়ার্কাস ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মো. নাসির বলেন, শুক্রবারের নির্বাচন হতেই হবে। যে কোনো মূল্যে আমরা এ নির্বাচন করতে চাই। আমরা নির্বাচন চাই অন্য কোনো কথা নেই।
এদিকে অবরোধের কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েন ওই পথ দিয়ে চলাচলকারীরা। তবে শহরের বাইপাস অবরোধমুক্ত থাকায় বাইরের বিভিন্ন জেলার দূরপাল্লার যানবাহন ফরিদপুর হয়ে অবাধে যেতে পারছে।
ফরিদপুরের একটি ফ্যাশন হাউসের কর্মী সদরের কানাইপুরের রামখন্ড এলাকার বাসিন্দা রিফাত হাসনাত (২৮) বলেন, ৩টার শিফটের কাজ শেষ করে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলাম। পথে এসে শ্রমিকরা আমাদেরকে ইজিবাইক থেকে নামিয়ে দিয়েছে। এখান থেকে প্রায় এক কিলোমিটার হেঁটে মাহেন্দ্রতে উঠতে হবে বাস না চলায়। এতে সময়, পরিশ্রম ও অর্থ সবই বেশি ব্যয় হবে।
প্রসঙ্গত, গত ৩ জুন শ্রম আদালতে বাদী হয়ে মামলা করেন মো. মাহাবুব উদ্দিন মোল্লা। এতে দ্বিতীয় পক্ষ করা হয়েছে শ্রমিক পরিচালকের দপ্তরের উপপরিচালসহ অন্যান্যদের। আসামিদের মধ্যে ফরিদপুর মোটর ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি জোবায়ের জাকির, ৭ জুনের এই নির্বাচনের নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন পরিচালনাকারী কমিটির সদস্য সচিব রয়েছেন।
জহির হোসেন/আরএআর