‘দলিল পরিবর্তন করে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে কোটি কোটি টাকা’

গাইবান্ধা সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিস জালিয়াতি ও দুর্নীতি আখড়ায় পরিণত হয়েছে। পেঅর্ডার জালিয়াতির মাধ্যমে দলিল পরিবর্তন করে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ফলে সেবা গ্রহীতাদের সঠিক সময়ে দলিল সরবরাহ পেতে বেগ পোহাতে হচ্ছে। এতে একদিকে সাধারণ মানুষ নানান সমস্যায় পড়ছেন, অন্যদিকে বৃদ্ধি পাচ্ছে জমি নিয়ে দাঙ্গাহাঙ্গামা।
বৃহস্পতিবার (৬ জুন) বিকেলে দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোস্তা মল্লিক সমিতির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দুর্নীতি ও জালিয়াতির অভিযোগ তুলে ধরে বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি উল্লেখ করেন, ২০১৪ সাল থেকে দলিল নিবন্ধনের নামে জালিয়াতি ও দুর্নীতির কারণে সাধারণ মানুষ সেবা হতে বঞ্চিত হচ্ছেন। তিনি অভিযোগ করেন, প্রাক্তন সাব রেজিস্ট্রার, কতিপয় কর্মচারী ও হাতেগোনা কয়েকজন দলিল লেখক এসব অনিয়ম, জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত। তাদের সিণ্ডিকেটের কারণে সাধারণ জনগণ চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, দলিল রেজিস্ট্রির যাবতীয় ফি, কর, ট্র্যাক্স যথারীতি সোনালী ব্যাংক, এনআরসি ব্যাংকে পে-অর্ডারসহ সব শর্ত পূরণ করেও জমি দলিল নিবন্ধন করার পরেও সঠিক সময়ে দলিল সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে না।
তিনি উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, তার সেরেস্তায় বিগত ২০২৩ সালের ৪ এপ্রিল ৩৩৩৭ নং কবলা দলিল লেখা হয়, যার দাতা রুবেল মিয়া ও গৃহিতা রবিউল ইসলাম, মূল্য ২৮ লক্ষ টাকা। ওই ৩৩৩৭ নং কবলা পত্র দলিলে পে-অর্ডার এর আয়কর ৩ শতাংশ পৌর কর দেওয়ার নিয়ম। কিন্তু ভুলবশত পৌরসভার বাইরে ১ শতাংশ জমা হয়। ওই দিন বিকেলে ব্যাংকে জমা দেওয়ার সময় না থাকায় সাব রেজিস্ট্রি মেহেদী হাসানের শরণাপন্ন হলে তিনি সরকারের নির্দেশ মতো আয়করের বাদ পড়া ২ শতাংশ টাকা ৫৬ হাজার ২ শত টাকা অফিস সহকারী মিজানুর রহমান মিজানের কাছে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন। অফিস সহকারী মিজানুর রহমান মিজান ৫৬ হাজার ২ শত টাকা টাকা গ্রহণ করেন। সাব রেজিস্ট্রার পরের দিন পে-অর্ডার জমা দেওয়ার ফটোকপি বা মুড়ি প্রদানের নির্দেশ দেন। কিন্তু বহুবার অনুরোধ করেও পে-অর্ডার এর ফটোকপি এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। কর্মচারী মিজানুর রহমান মিজানের অপর্কম নানাভাবে কর্মকর্তাগণ দেখতে পেয়ে তাকে অপসারণ করেন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও উল্লেখ করেন, দলিল লেখকদের একটি চক্র, সাব রেজিস্ট্রি অফিসের কতিপয় কর্মচারীর যোগসাজসে পে-অর্ডার জালিয়াতি করে এক দলিলের পে-অর্ডার আরেক দলিলে ব্যবহার করে রেজিস্ট্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে আঙুল ফুঁলে কলা গাছ হয়েছে। এর বিচার অবশ্যই হতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে দলিল লেখক সমিতির উপদেষ্টা আব্দুস সামাদ সরকার, সহ-সভাপতি ইমান আলী মন্ডল, দপ্তর সম্পাদক তোজাম্মেল হক, সদস্য আনিছুর রহমান বাবু প্রমুখ জালিয়াতি ও দুর্নীতির নজির তুলে বক্তব্য দেন।
রিপন আকন্দ/এমএএস