মৃত ভাইকে দেখতে গিয়ে লাশ তারা
শনিবার (১ মে) রাত ২টার দিকে সিলেট নগরের রাগীব রাবেয়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আব্দুল কাইয়ুম। সেই খবর দেওয়া হয় চাচাতো ভাই জাকারিয়াকে। তিনি পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে ভোরে রওনা হন একই উপজেলার দরবস্ত ভাইটগ্রাম এলাকার উদ্দেশে। সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী হাসিনা বেগম।
এ ছাড়া শেষবারের মতো ভাইয়ের মরদেহ দেখার উদ্দেশে যান জাকারিয়ার ভাইয়ের স্ত্রী সাফিয়া বেগম ও তার সন্তান সাদিয়া (৭) ও ৫ মাস বয়সী ছেলে শাহাদাত, মৃত হাফিজ মিয়ার স্ত্রী হাবিবুন্নেসা (৩৩) ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। সূর্য উঠার আগে আগেই দরবস্ত ভাইটগ্রামের উদ্দেশে রওনা দেন জাকারিয়ার পুরো পরিবার।
তবে ভাই আব্দুল কাইয়ুমের মরদেহ দেখার আগেই পথে থেমে যায় তাদের জীবন প্রদীপ। উপজেলার সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের ফেরিঘাট এলাকায় ট্রাকচাপায় নিহত হন জাকারিয়ার পরিবারের চারজনসহ ৫ জন। জাকারিয়া দম্পতি মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
পরিবারের সদস্যদের হারানোর বেদনায় মূর্ছা যাচ্ছেন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিচ তলার ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন মো. জাকারিয়া। যখনই পরিবারের কথা মনে হচ্ছে তখনই ফুপিয়ে কাঁদচ্ছেন তিনি। বার বার বলছেন, একটা সিএনজি ভালোভাবেই পৌঁছে গেছে। একটুর জন্য আমাদেরটা কেন পৌঁছালো না। হঠাৎ করে একটি ট্রাক এসে আমাদের সিএনজিকে চাপা দিলো।
দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া হাবিবুন্নেসার মরদেহের পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন ভাই মাহমুদ আলী। তিনি দুর্ঘটনার খবর পেয়েই হাসপাতালে ছুটে আসেন। তবে হাসপাতালের নানা জায়গায় খুঁজেও বোনকে না পেয়ে খোঁজ নেন জরুরি বিভাগে। সেখান থেকে জানানো হয় হাসপাতালে আনার পথেই মারা যান হাবিবুন্নেসা। তার মরদেহ জরুরি বিভাগের নির্দিষ্ট রুমে রাখা আছে। সেখানে গিয়ে স্ট্রেচারে বোনের নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
মাহমুদ আলী বলেন, ‘আব্দুল কাইয়ুমের মৃত্যুর খবর পেয়ে আমার বোন ও জাকারিয়ার পরিবার সকালে দুটি সিএনজি নিয়ে দরবস্ত ভাইটগ্রামের উদ্দেশে রওনা দেয়। পথিমধ্যে ফেরিঘাট এলাকায় দুটি সিএনজির মধ্যে পেছনের সিএনজিকে চাপা দেয় ট্রাক।’
এর আগে রোববার (২ মে) সকাল সাড়ে ৬টার দিকে সিলেটের জৈন্তাপুরে ট্রাকচাপায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার পাঁচ যাত্রী নিহত হন।
নিহতরা হলেন- পাখিবিল এলাকার মৃত আরব আলীর ছেলে হোসেন আহমদ (৩৫), জামাল মিয়ার স্ত্রী সাফিয়া বেগম (২৯), জামাল মিয়ার মেয়ে সাদিয়া (৭) ও ছেলে শাহাদাত (৫ মাস), মৃত হাফিজ মিয়ার স্ত্রী হাবিবুন্নেসা (৩৩)।
আহতরা হলেন- পাখিবিল এলাকার মৃত আরজান আলীর ছেলে জাকারিয়া ও জাকারিয়া স্ত্রী হাসিনা বেগম। তাদের উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, জৈন্তাপুর ফেরিঘাট এলাকায় যাত্রীবাহী একটি সিএনজি অটোরিকশা হঠাৎ মহাসড়কে উঠলে দ্রুতগামী একটি ট্রাক অটোরিকশাকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলে চারজন ও হাসপাতালে নেওয়ার পথে আরও একজনের মৃত্যু হয়।
তুহিন আহমদ/এসপি