লক্ষ্মীপুরে অটোরিকশায় চাঁদাবাজি, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা কারাগারে

লক্ষ্মীপুরে সিএনজিচালিত অটোরিকশা থেকে চাঁদাবাজির মামলায় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা রাশেদ নিজামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরে আদালতের মাধ্যমে তাকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।
বুধবার (১২ জুন) দুপুরে চন্দ্রগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমদাদুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
রাশেদ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপাতি ও জেলা সিএনজিচালিত অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক। তবে তিনি লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকুর আত্মীয় পরিচয় দিয়ে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে আসছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। রাশেদ নিজাম সদর উপজেলার হাজিরপাড়া ইউনিয়নের রতনেরখিল গ্রামের ফজলুল করিমের ছেলে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মামলার বাদী মো. মামুন সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের চরভূতা গ্রামের মনির হোসেনের ছেলে। মঙ্গলবার (১১ জুন) সকালে তিনি সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি অঞ্চল চন্দ্রগঞ্জ আদালতে রাশেদসহ চারজনের বিরুদ্ধে একটি মামলার আবেদন করেন। আদালত ঘটনাটি আমলে নিয়ে চন্দ্রগঞ্জ থানাকে এফআইআর দাখিলের নির্দেশ দেন। নির্দেশনা পৌঁছাতেই থানা মামলাটি রুজু দেখায়। পরে বিকেলে হাজিরপাড়া এলাকা থেকে রাশেদকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করে চন্দ্রগঞ্জ থানা পুলিশ।
অভিযুক্ত অন্যরা হলেন- সদর উপজেলার পশ্চিম মান্দারী গ্রামের মো. রিপন, পশ্চিম দিঘলী গ্রামের ফারুক ও চন্দ্রগঞ্জের লতিফপুর গ্রামের নুরুল আলম।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, বাদী মামুন লক্ষ্মীপুর-চন্দ্রগঞ্জ সড়কের সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক। গত তিন মাস ধরে রাশেদসহ তার সহযোগীরা অটোরিকশাচালকদের কাছ থেকে মাসিক ৬০০ টাকা করে চাঁদা নিচ্ছে। চাঁদার জন্য তারা মামুনকেও চাপ দেয়। চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় গত ৭ জুন মান্দারী বাজারে সিএনজি স্ট্যান্ডে তাকে হত্যার হুমকি দেয় অভিযুক্তরা। এতে তিনি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
অভিযোগ রয়েছে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা রাশেদ নিজেকে স্থানীয় সংসদ সদস্যের স্বজন পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন অনিয়ম করে আসছে। একইভাবে সিএনজিচালিত অটোরিকশা থেকে চাঁদাবাজি করে আসছে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্নজন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও লেখালেখি করেছে। চাঁদাবাজি করে অটোরিকশাচালকদের কাছ থেকে মাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় রাশেদসহ তার সহযোগীরা। তাদের কারণে অটোরিকশাচালকরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। অনেকে অটোরিকশা চালানো বন্ধ করে দিয়েছে। রাশেদসহ তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে সিফাত হোসেন নামের এক অটোরিকশাচালক জেলা পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। সিফাত সদর উপজেলার কুশাখালী ইউনিয়নের কাঁঠালি গ্রামের বাসিন্দা।
চন্দ্রগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এমদাদুল হক বলেন, বাদী প্রথমে আদালতে হাজির হয়ে মামলার জন্য আবেদন করেন। পরে আদালতের নির্দেশে এজাহারটি এফআইআরভুক্ত করি। প্রধান অভিযুক্ত রাশেদকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হলে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। মামলার অন্য অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে পুলিশ কাজ করছে।
রাশেদ নিজামের বিষয়ে জানতে লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক পিংকুর মোবাইল ফোনে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক তার এক ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি জানান, এমপির সঙ্গে রাশেদের আত্মীয়তার কোনো সম্পর্ক নেই। রাজনৈতিক কারণেই রাশেদ এমপির কাছে আসা-যাওয়া করে। রাশেদ সিএনজিচালিত অটোরিকশা থেকে চাঁদাবাজি করলে তার দায় সংগঠন নেবে না।
হাসান মাহমুদ শাকিল/এমজেইউ