কোরবানিতে আলোচনায় কলেজছাত্র সজিবের ৩২ মণের সুলতান সোলেমান

উচ্চতা ৬ ফুট, সাদা-কালো রঙের ডোরা কাটা। দেখতে বেশ সুঠাম দেহের অধিকারী। হলস্টেইন-ফ্রিজিয়ান-শাহিওয়াল মিশ্র শংকর জাতের এই গরুটি নজর কেড়েছে স্থানীয়দের। গরুটির ওজন ৩২ মণ।
সাড়ে তিন বছর আগে সখের বসে গরুটি কেনেন পাবনার ফরিদপুর উপজেলার চিথুলী গ্রামের কলেজছাত্র সজিব আহমেদ। ঢাকার তেজগাঁও কলেজে বিএ অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্র তিনি। নিজের বাড়িতে সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে লালন পালন করা এই গরুটির নাম দিয়েছেন সুলতান সোলেমান। গরুটির দাম হাঁকছেন ১০ লাখ টাকা।
সুলতান সোলেমানের পছন্দের খাবারের তালিকায় রয়েছে কাঁচা ঘাস, খৈল, ভুসি, খড়, ভূট্টাসহ স্বাস্থ্যসম্মত সব ধরনের খাদ্য।
স্থানীয়দের দাবি- এটাই এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় গরু। এরকম বড় গরু তারা এর আগে বাস্তবে দেখেননি। তাই বিশাল আকৃতির গরুটিকে দেখতে প্রতিদিন ভিড় জমাচ্ছেন উৎসুক মানুষ।

মসলেম উদ্দিন নামের স্থানীয় একজন বলেন, আমাদের অঞ্চলে এটিই সবচেয়ে বড় গরু। আমি এর আগে একদিন দেখতে এসেছিলাম। আজকেও আবারও আসছি। গরুটি দেখে খুব ভালো লাগে।
খামারে কর্মরত শ্রমিক আব্দুস শুকুর আলী বলেন, রাতদিনের প্রায় সব সময় আমি এই গরুর সঙ্গেই থাকি। দিনে তিনবার দানাদার খাবার খাওয়ানো হয়। সকাল বিকেল দুইবার গোসল করানো হয়। গরুটি খুবই শান্ত প্রকৃতির। গরুটিকে সজিব ভাই খুবই যত্ন নিয়ে লালন পালন করেছেন।
দীর্ঘদিন ধরে সন্তানের মতো লালনপালন করতে গিয়ে ষাঁড় গরুটির মায়ায় পড়েছেন পরিবারের লোকজন। চালচলনে শান্তশিষ্ট হলেও, অপরিচিত মানুষ দেখলে রেগে যায়।
সজিবের মা বিলকিস আক্তার বলেন, করোনার মধ্যে ছেলে ঢাকা থেকে ছুটিতে বাড়িতে চলে আসে। তখন শখের বসে ছেলে একটি গরু কিনে পালন করতে থাকে। খুব যত্নে লালন-পালন করেছে গরুটি। গরুটি বাড়ি থেকে কিনে নিলে খারাপ লাগবে। গরু হিসেবে আমার ছেলে বেশি দাম চায়নি। মাত্র ১০ লাখ টাকা দাম চেয়েছে। যদি কোনো ব্যক্তি গরুটিকে কেনেন তাহলে আমার ছেলে এ টাকা দিয়ে বড় একটি খামার করতে পারবে।

সজিব আহমেদ জানান, পাবনার ফরিদপুরের এই অঞ্চলে এমন কোনো বাড়ি পাবেন না যেখানে গরু নাই। প্রতিটি বাড়িতে কমপক্ষে ২০ থেকে ১০০ টি করে গরু আছে। করোনার সময় ঢাকা থেকে ফিরে খামারের সঙ্গে যুক্ত হই। ডেইরি খামারের পাশাপাশি ষাঁড় গরু লালন-পালন শুরু করি। প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে দেড় লাখ টাকা দিয়ে এই গরুটাকে নিয়ে আসি। শখ করে গরুটির নাম রাখি সুলতান সুলেমান। ‘প্রচন্ড গরমেও সে শান্ত, কোনো অসুস্থতা নেই। টিভি সিরিয়াল সুলতান সুলেমানের ভক্ত হওয়ায় সজিব ভালোবেসে ষাঁড়টির নাম দিয়েছেন সুলতান সুলেমান। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা মেপে জানিয়েছেন গরুটির ওজন ১৩৮০ কেজি। উচ্চতায় ৬ ফুট, লম্বায় সাড়ে ৮ থেকে ৯ ফুট।
সজিব আরও জানান, আমি যেহেতু ছাত্র মানুষ, বর্তমান বাজেটটা বুঝি তাই নিরীক্ষা করে গরুটার একটা দাম নির্ধারণ করেছি। মাত্র ১০ লাখ টাকা দাম চাচ্ছি। কেউ যদি নেয় তাহলে তার কোনো লোকসান হবে না। এই টাকা দিয়ে বড় একটি খামার করার পরিকল্পনা করছি। এখন পর্যন্ত আশানুরূপ দাম কেউ বলেনি। তবে দু-একদিনের মধ্যে গরুটি বিক্রি হয় যাবে বলে আশা করছি।
ফরিদপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা ডা. গোপেশ চন্দ্র সরকার বলেন, প্রাণিসম্পদ বিভাগ কলেজছাত্র সজিবের বড় আকারের গরু পালনে পাশে থেকে সার্বিক সহযোগিতা করেছে। আগামীতেও সহযোগিতা করা হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘শাহীওয়াল আর হলেস্টান ফিজিয়ান শংকর জাতের ষাঁড় সুলতান সুলেমানের শরীরে চর্বি নেই। যিনি কিনবেন তিনি লাভবান হবেন। এত বড় গরু এত কম দামে সহজে পাওয়া যাবে না। খামারি সজিব আশানুরূপ দাম পাবেন বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি।
রাকিব হাসনাত/এএএ