ফরিদপুরে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের রাবার বুলেট-টিয়ারশেল নিক্ষেপ

ফরিদপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ মিছিলে রাবার বুলেট, টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়েছে পুলিশ। এ সময় পুলিশের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন শ্রমিক লীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় অন্তত ৮ থেকে ১০ জন ছাত্রের গায়ে রাবার বুলেট বিদ্ধ হয়। এক ছাত্র ১৮টি বুলেট বিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
শনিবার (৩ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টার মধ্যে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ থেকে ভাঙ্গা রাস্তার মোড় পর্যন্ত ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা বেলা পৌনে ১১টার দিকে মিছিল করে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাস থেকে বের হয়। ওই সময় পুলিশ সাঁজোয়া গাড়ি, হেলমেট ও অস্ত্র নিয়ে প্রস্তুত ছিল ভাঙ্গা রাস্তার মোড়ে। তাদের সঙ্গে ছিল শ্রমিক লীগ, ছাত্রলীগের ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা। এদের মধ্যে নেতৃত্বে ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রবিন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি দেবাশীষ বিশ্বাস নয়ন প্রমুখ।
বৈষম্যবিরোধী মিছিলটি ভাঙ্গা রাস্তার মোড় এলাকায় পৌঁছানোর আগেই পুলিশ আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায়। পুলিশ রাবার বুলেট, টিয়ারশেল ছোড়ে এবং সাউন্ড গ্রেনেড ফাটিয়ে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, সকাল ১০টার দিকে ভাঙ্গা রাস্তার মোড়ে শ্রমিক লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ মিছিল করে। বেলা পৌনে ১১টার দিকে বৈষম্যবিরোধী মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাস থেকে মিছিল নিয়ে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক ধরে ভাঙ্গা রাস্তার মোড়ের দিকে আসতে থাকে। রোড ডিভাইডারের মধ্যে ছাত্ররা একদিকে ও অন্যদিকে সাঁজোয়া যান নিয়ে আগাতে থাকে পুলিশ।
মিছিলটি ভাঙ্গা রাস্তার মোডের দিকে আসার পথে সারাফাত মটরসের সামনে এলে শ্রমিক লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা মিছিলের ওপর লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালায় এবং ইট ছুড়ে মারে। এ সময় শিক্ষার্থীরা তাদের ওপর ইট ছুড়ে মারে। ওই সময় আশপাশের দোকান ও বাড়ির লোকজন নেমে এসে ছাত্রদের সঙ্গে যোগ দেয়।
ওই সময় রাস্তার পাশ থেকে সত্তরোর্ধ এক বৃদ্ধাকেও ইট নিয়ে এগিয়ে দিতে দেখা যায়। তিনি ছাত্রদের হাতে ইট তুলে দিয়ে বলেন, ‘ওরা আমাগো মেলা জ্বালাইছে, তোরা মার ওগো।’ একথা বলে ওই বৃদ্ধা সংঘর্ষের মাঝখানে এসে স্বেচ্ছাসেবক লীগকে ইট মারার চেষ্টা করেন। এ সময় ছাত্ররা ওই বৃদ্ধাকে নিরাপদে সরে যেতে অনুরোধ করেন। তখন ওই বৃদ্ধা বলেন, ‘আমি মরি সমস্যা নাই, তাও তোরা ওগো মার’।
একপর্যায়ে ছাত্রদের তাড়া খেয়ে পালিয়ে যায় শ্রমিক লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা। একপর্যায়ে ছাত্ররা সামনের দিকে এগোতে থাকলে পুলিশ পিছিয়ে গিয়ে ভাঙ্গার রাস্তার মোড়ে অবস্থান নেন। ছাত্ররা এগোতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। আন্দোলনকারীরা পুলিশের উদ্দেশে করজোড়ে মিনতি করে সামনের দিকে এগোতে চাইলে ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. সালাউদ্দিন ও কোতয়ালি থানার ওসি মো. হাসানুজ্জামান এক পুলিশ সমদস্যকে সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়তে নির্দেশ দেন। পরে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল ও গুলি ছুড়ে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
এ সময় ওই স্থানে উপস্থিত সাংবাদিকরা পুলিশের অ্যাকশনের ছবি তুলতে গেলে পুলিশ তাদের সরে যেতে বলে। সংবাদকর্মীরা ওই জায়গা ছেড়ে না দিলে পুলিশ সাংবাদিকদের পা লক্ষ্য করে রাবার বুলেট ছুড়ে মারে। তবে এতে কোনো অঘটন ঘটেনি।
পুলিশের হামলায় টিকতে না পেরে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। ওই পর্যায়ে পুলিশ ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ ও ভাঙ্গার রাস্তার মোড়ের মাঝামাঝিতে অবস্থিত শামসুল আলম মাদরাসার সামনে অবস্থান নেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শামসুল আলম মাদরাসার সামনে অবস্থান করাকালীন সময়ে ডিবি পুলিশের সদস্য ডলি আক্তার (২৫) নিজের আগ্নেয়াস্ত্র থেকে হওয়া মিস ফায়ারে আহত হন। গুলিটি তার হাতে ও গলায় আঘাত করে। তাকে দ্রুত তাকে ফরিদপুর পুলিশ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
আন্দোলকারীরা জানায়, এ সংঘর্ষে তাদের অন্তত আট থেকে ১০ জনের গুলি লেগেছে। এর মধ্যে নাসিং কলেজের শিক্ষার্থী সঞ্জয় বৈরাগীর গায়ে ১৮টি রাবার বুলেট লাগে। তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (দুপুর ১টা) ফোন না ধরায় কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসানুজ্জামানের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
জহির হোসেন/আরএআর