বন্ধ ছিল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান
ফরিদপুরে অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিনে দিনব্যাপী হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের কারণে স্থবির হয়ে পড়ে জনজীবন। জেলাজুড়ে খোলেনি কোনো সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের দরজা এবং দোকানপাট। ব্যাংক কিংবা এটিএম বুথ থেকে টাকা তোলাও সম্ভব হয়নি।
রোববার (৪ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০টা থেকেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের পক্ষে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা ফরিদপুরের রাজপথে নামে। ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে থেকে শুরু হয় মিছিল। পরে ওই মিছিলে বিভিন্ন জায়গা থেকে সর্বস্তরের লোকজন যুক্ত হওয়ায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে বিশাল আকার ধারণ করে।
মিছিলের লোক সমাগম দেখে পুলিশ কোনো প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। মিছিলটি আলীপুরে অবস্থিত জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে এসে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নি সংযোগ করে। পরে ঝিলটুলী এলাকায় সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের সামনে ছাত্র সংসদ ভবন রুকসুতে হামলা চালায়। এটি জেলা ছাত্রলীগের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এ ভবনে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
পরে মিছিলকারীরা ফরিদপুর কোট চত্বর এলাকার দিকে এগোতে থাকলে পুলিশ রাজেন্দ্র কলেজ ও জেলখানার মোড়ে বাধা দেয়। সেখানে পুলিশ রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস ছেড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। আন্দোলনকারীরা ওই জায়গা থেকে ফিরে এসে থানা রোডে অবস্থিত ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। পরে হামলাকারীরা ফরিদপুর কোতয়ালী থানার সামনে গিয়ে ইট ছোড়ে। ওই সময় পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও রাবারগুলি ছুঁড়ে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়।
পরে আন্দোলনকারীরা ভাঙ্গা রাস্তার মোড়ে পুলিশ বক্স, গোয়ালচামট এলাকায় মডেল মসজিদ সংলগ্ন বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল কমপ্লেক্সে ভাঙচুর চালায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বিকেল ৩টার দিকে আলীপুর সেতু ও গোরস্তানের মোড় এলাকায় পুলিশ বিক্ষোভকারীদের লাঠিপেটা করে। পরে আলীপুর মহল্লার বিভিন্ন জায়গায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সাথে আন্দোলনকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় গুলির ঘটনাও ঘটে। এ আন্দোলনে ছাত্রদের পাশাপাশি সর্বস্তরের জনগণকে অংশ নিতে দেখা যায়। অনেক মা ও বাবা, তাদের ছেলে-মেয়েকে নিয়ে এ আন্দোলনে শরিক হয়। এদিন ব্যাংকগুলোতে কোনো লেনদেন হয়নি। এমনকি এটিএম বুথ থেকে গ্রাহকরা টাকা তুলতে পারেনি। বেলা ১১টার মধ্যে শহরের সকল দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। রাস্তায় লোক চলাচল কমে যায়। ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় শোক দিবস উপলক্ষে নির্মিত অন্তত ১২টি তোড়নে।
বক্তব্য জানতে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হাসানুজ্জামানকে কল করা হলে তিনি মোবাইল ফোন রিসিভ করেননি।
জহির হোসেন/আরকে