সুনসান নীরব নিস্তব্ধ ফেনী শহর

ভাষা আন্দোলন, রাজনৈতিক আন্দোলন সংগ্রামের স্বাক্ষী জেলা শহর ফেনী। রোববার (৪ আগস্ট) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে সর্বাত্মক অসহযোগের প্রথমদিনে এই ফেনীতে ঝরেছে রক্ত। সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ৮ জন। এছাড়া আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী, পথচারী, শ্রমজীবী ও সাংবাদিকসহ আহত হয়েছেন দেড় শতাধিক ব্যক্তি।
এ ঘটনায় সাধারণ মানুষের মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার ছাপ পড়েছে। চিরচেনা ব্যস্ত ফেনী শহর গতকাল রাত ৮টায় রূপ নেয় গভীর রাতের চেহারায়। দিনভর সহিংসতার নানা ঘটনার পরে সন্ধ্যায় শহরের প্রাণকেন্দ্র ট্রাংক রোডে গিয়ে দেখা গেছে অচেনা এক চিত্র।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ফাঁকা রাস্তাঘাটে নেই কোন যানবাহন, মানুষজন। রাস্তায় পড়ে রয়েছে সহিংসতার নানা চিহ্ন। হাতেগোনা কয়েকজন মানুষ থাকলেও ট্রাংক রোড যেন নিস্তব্ধ। এছাড়া বিগত কয়েকদিন ধরে আন্দোলনকে ঘিরে পুলিশের উপস্থিতি থাকলেও এদিন তারাও ছিলেন না মাঠে।
এ প্রসঙ্গে কথা হলে শহরের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সাহেদুল ইসলাম বলেন, সারাদিন শহীদ শহিদুল্লা কায়সার সড়কের অফিসে আটকে পড়ি। ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি ফিরছি। আমরা তো সাধারণ মানুষ। কোন সংঘাত বা হানাহানি চাই না। আমাদের নিরাপত্তা কে দেবে?
আরও পড়ুন
আলী আহম্মদ নামে এক রিকশাচালক বলেন, সড়ক একবারে ফাঁকা। সারাদিন ভয়ে রিকশা নিয়ে বের হইনি। কিন্তু ঘরে বসে থাকলেও পরিবার না খেয়ে থাকতে হবে। সেজন্য রিকশা নিয়ে বের হয়েছি। আমরা নিরাপদে চলতে চাই।
রোববার দুপুর দেড়টার দিকে শহরের ট্রাঙ্ক রোড থেকে দলবল নিয়ে শহীদ শহিদুল্লাহ কায়সার সড়ক হয়ে মহিপাল যান আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় সড়কে গুলি তাক করে সাংবাদিকদের একটি ব্যাংকের ভেতর তাড়া করে মোবাইল, প্রেস জ্যাকেট ও আইডি কার্ড কেড়ে নিয়ে মারধর করেন তারা। পরে মহিপাল এলাকায় পৌঁছালে ছাত্র-জনতার ওপর অতর্কিত গুলি ও হামলা চালান তারা। একপর্যায়ে ক্ষমতাসীন দলের আরেকটি পক্ষ শহরের ইসলামপুর রোডে বিএনপি নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে গুলি ও হামলা চালায়।
এর আগে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে মহিপাল ফ্লাইওভারের নিচে অবস্থান নেন ছাত্র-জনতা। একপর্যায়ে আন্দোলনকারীদের একটি অংশ মহিপাল ফ্লাইওভারের দক্ষিণাংশে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন ব্যানার-ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলেন। সড়ক অবরোধ করায় বন্ধ থাকে যান চলাচল।
তারেক চৌধুরী/এমটিআই